সরকারের কৌশলে ধরাশায়ী কওমি মাদরাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম আরও সমঝোতামুখী অবস্থানে এসেছে। বিতর্কিত ও গ্রেফতার নেতাদের নিয়ে গঠিত কেন্দ্রীয় কমিটির বিলুপ্তির পাশাপাশি যেমন নতুন আহ্বায়ক কমিটি গঠন হয়েছে, তেমনি হেফাজতের বিকল্প সংগঠনেরও আত্মপ্রকাশ হয়েছে। মাদরাসা ও শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সুরক্ষায় ইতোমধ্যে সরকারের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠকে সমঝোতার পরিবেশও তৈরি হয়েছে। শর্তসাপেক্ষে মাদরাসা খুলে দেয়া এবং নিরপরাধ কাউকে হয়রানি না করার বিষয়ে সম্মত হয়েছে সরকারও।
সংশ্লিষ্ট মহলে কথা বলে জানা গেছে, সম্প্রতি দফায় দফায় সরকারের সঙ্গে হেফাজতের অনুষ্ঠিত বৈঠকে দাবি ছিল, মাদরাসাগুলো খুলে দিয়ে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চত করা, গ্রেফতারকৃত মাদরাসা শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের ছেড়ে দেয়া এবং মাদরাসাগুলোতে ‘পুলিশি ও রাজনৈতিক হয়রানি’ বন্ধ করা। এসব বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কিছু শর্তসাপেক্ষে ‘সম্মতি’র খবর মিলেছে।
শর্তের আলোকে ও ভবিষ্যৎ পথচলা মসৃণ করতে কওমি অঙ্গনের নেতারা সরকারের বিরোধিতা পরিহার করে শান্তিপূর্ণভাবে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাবেন। মাদরাসাগুলোতে রাজনৈতিক কার্যক্রম অনুমোদন দেবেন না। চিহ্নিত ও শীর্ষ রাজনৈতিক ব্যক্তিদেরও মাদরাসার নেতৃত্বে রাখবেন না।
পাশাপাশি সরকার সমর্থক একটি পক্ষ ইতোমধ্যে ‘তাহাফ্ফুজে মাদারিসুল কওমিয়া বাংলাদেশ’ নামে হেফাজতের বিকল্প সংগঠন দাঁড় করিয়েছে। যারা মাদরাসা শিক্ষক ও ছাত্রদের নিয়ে রাজনৈতিক প্লাটফর্ম গড়ে তুলবে, কিন্তু সরকার বিরোধিতায় জড়াবে না।
প্রসঙ্গত, গত মার্চ থেকে মুখোমুখি অবস্থানে আওয়ামী লীগ-হেফাজত। ২৬ মার্চ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরে হেফাজতের বিরোধিতায় এই মুখোমুখি অবস্থান সংঘাতে রূপ নিয়েছে। রাজধানী ঢাকার বায়তুল মোকাররম, চট্টগ্রামের হাটহাজারী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় রণক্ষেত্রের ঘটনায় চরম নেতিবাচক পরিস্থিতি তৈরি করেছে। সর্বশেষ যুগ্ম-মহাসচিব মামুনুল হকসহ হেফাজতের ডজনখানেক শীর্ষ নেতার গ্রেফতারে আওয়ামী লীগের সঙ্গে তাদের নেতিবাচক সম্পর্কে তুষ ছড়িয়েছে।
এসব নিয়ে গত ২০ এপ্রিল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ধানমন্ডির বাসায় বৈঠক করেন হেফাজতের নেতারা। হেফাজতের মহাসচিব মাওলানা নুরুল ইসলাম জিহাদী, খেলাফত আন্দোলনের আমির আতাউল্লাহ হাফেজ্জী, তার ভাতিজা মাওলানা হাবিবুল্লাহ নিয়াজী, মাওলানা মামুনুল হকের বড় ভাই বেফাক মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হক, অধ্যক্ষ মিজানুর রহমানসহ আরও বেশ কয়েকজন নেতা বৈঠকে অংশ নেন। প্রায় এক ঘণ্টার বৈঠকে হেফাজতের শীর্ষ নেতাদের পাশাপাশি পুলিশ ও গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবির) ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।
সূত্র জানায়, হেফাজত নেতাদের সঙ্গে মন্ত্রীর একান্তে কথা হয়। এ সময় হেফাজত নেতারা নরেন্দ্র মোদির সফরকে কেন্দ্র করে তাদের তরফ থেকে বাড়াবাড়ি হয়েছে বলে স্বীকার করেন। হেফাজত নেতাদের সঙ্গে আলাপকালে মন্ত্রী জানান, শিগগির তিনি (মন্ত্রী) চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদরাসায় যাবেন। ছাত্রদের সঙ্গে কথা বলবেন। তাদের বোঝাবেন, ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ ভালো নয়।
এরপর ২৪ এপ্রিল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নিয়ন্ত্রণাধীন তেজগাঁওয়ের একটি মাদরাসায় হেফাজতের একাংশের বৈঠক হয়। ড. মুস্তাক আহমদ, মুফতি ইয়াহিয়া মাহমুদ ও মুফতি মোহাম্মদ আলীসহ কয়েকজন বৈঠকে নেতৃত্ব দেন। সেখানে ‘তাহাফ্ফুজে মাদারিসিল কওমিয়া বাংলাদেশ’ নামের নতুন সংগঠনটির আত্মপ্রকাশ হয়। এতে ড. মুস্তাক আহমদকে আহ্বায়ক, মুফতি ইয়াহিয়া মাহমুদকে যুগ্ম-আহ্বায়ক, মুফতি মোহাম্মদ আলীকে সদস্য সচিব এবং মাওলানা মুজিবুর রহমানকে যুগ্ম সদস্য সচিব করা হয়। তারা ইতোমধ্যে সরকারের কাছে ১০টি প্রস্তাবনা দিয়েছেন। দ্রুতই সীমিত পরিসরে হলেও কওমি মাদরাসাগুলো খুলে দেয়া, ছাত্রদের মিটিং-মিছিল না করা, ফেসবুকে সরকারবিরোধী বিরূপ মন্তব্য না করা ইত্যাদি ওই প্রস্তাবনার উল্লেখযোগ্য।
পরদিন ২৫ এপ্রিল রাজধানীর যাত্রাবাড়ী মাদরাসায় মাওলানা মাহমুদুল হাসানের নেতৃত্বে ১৫ শীর্ষে আলেমের বৈঠক হয়। সেখানে কওমি মাদরাসা বোর্ড ‘আল হাইআতুল উলইয়া লিল মাদারিসিলি কওমিয়া’র নেতৃবৃন্দও উপস্থিত ছিলেন। স্বারাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে মাদরাসা বোর্ডের নেতৃবৃন্দের বৈঠকের সিদ্ধান্ত হয় সেখানে।
পরে সেদিন রাতেই হেফাজতের কেন্দ্রীয় কমিটি বিলুপ্তির ঘোষনা দেন সংগঠনের আমির জুনায়েদ বাবুনগরী। কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে নতুন আহ্বায়ক কমিটিও গঠিত হয়। পাশাপাশি আগের সিদ্ধান্ত মোতাবেক ২৬ এপ্রিল সোমবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ধানমন্ডির বাসায় যান কওমি মাদরাসা বোর্ডের (হাইয়াতুল উলইয়ার) নেতারা। সেখানে আয়োজিত বৈঠকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছাড়াও ধর্ম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান দুলাল উপস্থিত ছিলেন। হাইআতুল উলইয়ার প্রতিনিধিদলে ছিলেন গওহরডাঙ্গা মাদরাসার মুহতামিম মুফতি রুহুল আমীন, হাটহাজারী মাদরাসার মুফতি জসিমউদ্দিন ও আফতাব নগর মাদরাসার মুহতামিম মুফতি মোহাম্মদ আলী।
হাইয়াতুল উলইয়ার পক্ষ থেকে জানানো হয়, অত্যন্ত সুন্দরভাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও ধর্মবিষয়ক প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে হাইয়াতুল উলইয়ার প্রতিনিধিদলের বৈঠক হয়েছে। দীর্ঘ আলোচনায় হাইয়াতুল উলইয়ার নেতারা তাদের বিভিন্ন সমস্যা ও দাবির কথা তুলে ধরেছেন। তারা আশা করছেন, সব ধরনের সমস্যার সমাধান হবে।
সর্বশেষ গত ৪ মে দিবাগত রাতে আবারও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বসেন হেফাজতের শীর্ষ নেতারা। বৈঠকে হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার ও হয়রানি বন্ধ করে গ্রেফতারকৃত নেতাদের মুক্তি দিতে ও মাদরাসাগুলো খুলে দেয়ার অনুরোধ জানান হেফাজতের নেতারা। ওই দিন হেফাজতের প্যাডে বিভিন্ন দাবি সম্বলিত একটি আবেদনপত্রও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে দেন হেফাজত নেতৃবৃন্দ।
এসব বৈঠকে নেতৃত্ব দেয়া হেফাজত নেতারা বলছেন, বৈঠক, আলোচনা এবং নানা ঘটনার উদ্দেশ্য—উদ্ভূত পরিবেশ-পরিস্থিতি সামাল দেয়া। কওমি মাদরাসাগুলোর স্বার্থ সংরক্ষণ করা। তাদের উদ্যোগে সরকারও সাড়া দিয়েছে। শিগগির ইতিবাচক ফল আসবে।
বৈঠকের বিষয়ে ওই রাতে হেফাজত নেতা নুরুল ইসলাম জিহাদী গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা আজকের বৈঠকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আবেদন করেছি, গ্রেফতার-আতঙ্ক ও হয়রানি থেকে আমাদের মুক্তি দেয়া হোক। বিশেষ করে চট্টগ্রামের হাটহাজারী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় গণগ্রেফতার চলছে। এতে করে সাধারণ মানুষ আতঙ্কে বাড়ি-ঘর ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। পবিত্র রমজান মাসে আলেম-ওলামা ও সাধারণ ধর্মপ্রাণ মানুষের হয়রানি বন্ধ করতে উনার কাছে (স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী) বিশেষ অনুরোধ জানিয়েছি।’
তাদের অনুরোধের প্রেক্ষিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিষয়টি ‘দেখবেন’ বলে আশ্বাস দিয়েছেন বলেও জানান হেফাজতের এই নেতা।
জানা গেছে, শাহ আহমদ শফী হেফাজতের আমির থাকাকালে সরকারের সঙ্গে তাদের দূরত্ব না থাকলেও তার মৃত্যুর পর দুটি পক্ষ বিপরীতমুখী অবস্থান তৈরি হয়। তখন হেফাজতকে বশে আনার চেষ্টা ছিল সরকারের। সময়ের পরিক্রমায় এখন খোদ হেফাজতই সমঝোতায় এগিয়ে আসছে, সেজন্য সুযোগটিকে পায়ে ঠেলতে চাইছে না সরকার।
সম্প্রতি একাধিকবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসায় গিয়েছেন হেফাজত নেতারা
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত বৈঠকগুলোতে নেতৃত্বে দেয়া নেতাদের একজন হলেন মুফতি ইয়াহিয়া মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘কওমি মাদরাসা খোলার বিষয়ে আমরা যে আবেদনটি করেছি, সেটি ওপরের দিকে চলে গেছে। আশা করছি শিগগির সীমিত পরিসরে হলেও মাদরাসা খোলার ইতিবাচক ঘোষণা আসবে।’
গ্রেফতারকৃতদের বিষয়ে সরকারের অবস্থান কী, এমন প্রশ্নের জবাবে মুফতি ইয়াহিয়া মাহমুদ বলেন, ‘এ ব্যাপারে বর্তমানে আলোচনার মতো পরিবেশ নেই। আমাদের মুরুব্বি মাহমুদুল হাসান সাহেব (আল হাইয়াতুল উলইয়ার চেয়ারম্যান) সব আলেমের পক্ষ থেকে বলেছেন, যারা অপরাধী তাদের প্রতি জুলুম না করে ন্যায়বিচারের পরে ছেড়ে দেয়া হোক। যারা নিরাপরাধ তাদের যেন নির্যাতন না করা হয়।’
নতুন সংগঠনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তাহাফ্ফুজে মাদারিসিল কওমিয়া বাংলাদেশ তো ইতোমধ্যে গঠন হয়ে গেছে। আহ্বায়ক কমিটির দুটো অনুষ্ঠানও করে ফেললাম। আমাদের উদ্দেশ্যে হলো—কওমি মাদরাসাগুলোর আদর্শ-ঐহিত্য সংরক্ষণ করা এবং কওমি মাদরাসা যেন তার স্বকীয়তা জলাঞ্জলি না দেয়।’
মুফতি ইয়াহিয়া মাহমুদ মনে করেন, গতানুগতিক রাজনীতি করা কওমি মাদরাসার ছাত্রদের কাজ নয়, তারা থিওরিটিক্যাল রাজনীতি সচেতন হবেন। থিওরিটিক্যালভাবে তারা রাজনীতিবিদ হবেন, রাজনীতি শিখবেন, রাজনৈতিক যোগ্যতা অর্জন করবেন। কিন্তু ছাত্র অবস্থায় মাঠে নেমে পড়বেন না।
তিনি বলেন, ‘আমাদের পূর্বসূরিরা ছাত্রদের রাজনীতিতে ব্যবহার করেননি, আমরাও করবো না। আমরা সম্পূর্ণ একাডেমিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক কাজ করবো।’
এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেয়া অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান বলেন, ‘মাদরাসা খোলার বিষয়ে উনি (স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী) স্পষ্ট কিছু বলেননি। বলেছেন, দেশের করোনা পরিস্থিতিতে এখন সব প্রতিষ্ঠানই বন্ধ, যখন খোলা হবে তখন বিবেচনা করা হবে।’
ঢাকা, চট্টগ্রামের হাটহাজারী ও ব্রাক্ষণবাড়িয়ায় সংঘর্ষের ঘটনায় গ্রেফতারের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা বলেছি এসব ঘটনায় যারা জড়িত, প্রমাণসাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন। তৃতীয় পক্ষের কেউ এতে সম্পৃক্ত কিনা খোঁজ নিন। আমাদের বিশ্বাস, কওমি অঙ্গনের কেউ এতে সম্পৃক্ত নন।’
আলোচনায় সরকার নমনীয় কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে অধ্যক্ষ মিজান বলেন, ‘সরকারের মোটিভ বোঝা যায় না।’
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর হেফাজতের নেতা ওয়ালী উল্লাহ আরমান বলেন, ‘অদূরদর্শী নেতৃত্বের অবিবেচনাপ্রসূত সিদ্ধান্তের ফলে আজকে কওমি অঙ্গন বিপর্যয়ের মুখে। এ থেকে উত্তরণের জন্য আল্লাহর সাহায্য কামনার পাশাপাশি সব রাজনৈতিক পক্ষের সঙ্গে সুসম্পর্ক নিশ্চিত করতে হবে। কারও সঙ্গে বৈরিতা রাখা যাবে না। ভবিষ্যতে এমন পরিস্থিতি এড়াতে হেফাজত ও কওমি মাদরাসার নেতৃত্বও পৃথক করতে হবে।’
তবে সরকারের পক্ষে এ বিষয়ে সংবাদমাধ্যমে কেউ কথা বলতে নারাজ। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর দফতর থেকেও বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়া হচ্ছে। অবশ্য তারা হেফাজতের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকগুলোর তথ্য সরকারপ্রধানকে জানাচ্ছেন। তার সম্মতি মিললেই সিদ্ধান্ত আসবে বলে জানা গেছে।
এক্ষেত্রে সরকারিদল ও তাদের নেতৃত্ব মাদরাসা ও শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বিষয়ে নমনীয়। তবে যারা অপরাধী তাদের শাস্তিও নিশ্চিত করার পক্ষে।
মামুনুল হকের বিতর্কিত কর্মকাণ্ড হেফাজতকে সবচেয়ে বেশি বিপাকে ফেলেছে
এ নিয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ‘হেফাজতের ব্যানারে যারা দেশকে অস্থিতিশীল করতে চেয়েছে, দেশের শান্তি বিনষ্ট করে বিএনপি-জামায়াতের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে চেয়েছে, তাদের আইনের আওতায় আনার বিকল্প নেই। তবে, বিপুল সংখ্যক কওমি মাদরাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের শিক্ষার পরিবেশ দিতে হবে। তাদের শিক্ষার সংস্কার করে মূলধারায় নিয়ে আসতে হবে।’
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন বলেন, ‘আমাদের লড়াই আলেম সমাজ কিংবা সাধারণ মাদরাসা ছাত্রদের বিরুদ্ধে নয়। যারা সম্মানিত আলেম সমাজ ও নিরীহ মাদরাসা ছাত্রদের লেলিয়ে দিয়ে সন্ত্রাস ও তাণ্ডব চালিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। এদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদেরও ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।’
এদিকে, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে হেফাজতের নেতারা দুই ভাগে ভাগ হয়ে গেছেন। কেউ বিলুপ্ত কমিটির আমির জুনায়েদ বাবুনগরী ও যুগ্ম-মহাসচিব মামুনুল হকের পক্ষে, কেউ আবার তাদের বিরুদ্ধে। এটারও একটা প্রতিফলন হেফাজতের আসন্ন কমিটিতে দেখা যাবে।
এ বিষয়ে তাহাফ্ফুজে মাদারিসিল কওমিয়া বাংলাদেশের যুগ্ম-আহ্বায়ক মুফতি ইয়াহিয়া মাহমুদ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমাদের জন্য দুঃখজনক হলো, হেফাজতে ইসলামকে বলা হতো সমস্ত আলেম-ওলামাদের প্লাটফর্ম, সমস্ত দ্বীন-দরদী মুসলমানদের প্লাটফর্ম, সবার দায়িত্ব তারাই বহন করছে। সেই নেতৃত্ব যে অদূরদর্শী এবং অবিবেচনাপ্রসূত সিদ্ধান্তের পরিচয় দিয়েছে এটাই জাতির জন্য সবচেয়ে দুর্ভাগ্যজনক।’
তিনি বলেন, ‘সন্তান অপরাধ করলে বাবা শাসন করেন যেন অন্য কেউ সুযোগ না নেন। হেফাজতের আমির বরং সন্তানের পক্ষে অবস্থান না নিয়ে হরতাল ডেকে পরিস্থিতি খারাপের দিকে নিয়ে গেছেন। অন্য কোনো নিয়মতান্ত্রিক দল হলে তার সদস্য পদও থাকতো না।’ সূত্রঃ জাগো নিউজ।