রাজশাহীর বিপণী বিতানগুলোতে থাকছে উপচেপড়া ভিড়। মাস্ক পরিধান ছাড়াই চলছে ঈদের কেনাকাটা। কোনো স্বাস্থ্যবিধিই মানা হচ্ছে না। ব্যবসায়ীরা স্বাস্থ্যবিধি ও সরকারী নির্দেশনা মেনে ক্রয় বিক্রয় করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে মার্কেট খুললেও প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেই চালিয়ে যাচ্ছে জমজমাট বেচাকেনা।
ঈদের বাজারকে কেন্দ্র করে সবকিছুই উপেক্ষিত হচ্ছে। ক্রেতাদের ভিড়ে পা ফেলার ঠাঁই নেই সড়কে। কেনাকাটা চলছে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত। পুলিশ প্রশাসনের নেই তৎপরতা। শিথিল প্রশাসন।
অপরদিকে, সাম্প্রতিক সময়ে এই শহরে করোনাভাইরাস করছে ভিন্নরূপ ধারণ। করোনায় আক্রান্ত হয়ে এই প্রথম এক শিশুর মৃত্যু ঘটেছে।
করোনাসংক্রমিত ও এর উপসর্গ নিয়ে প্রতিদিনিই মৃত্যু হচ্ছে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে। উন্নত চিকিৎসা পেয়েও করোনায় মারা গেছেন ক্ষমতাসীন দলের জেলার শীর্ষ নেতা।
সোমবার (১০ মে) সরেজমিনে দেখা গেছে, নগরীর আরডিএ মার্কেট, নিউ মার্কেট, কোর্ট বাজার, উপশহরসহ বড় বড় মার্কেটগুলোতে ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড়। গাদাগাদি করে কেনাকাটা করছেন তারা। মার্কেটে শিশু সন্তানদের সাথে এনেই কিনছেন পছন্দের জিনিস।
সবচেয়ে বেশি ক্রেতা সমাগম লক্ষ্য করা গেছে কাপড় ও কসমেটিকসের দোকান গুলোতে। বেশি সমাগম ছিল ক্রেতাদের। ক্রেতা চাহিদা থাকায় অতিরিক্ত দাম হাকাচ্ছেন দোকানীরা। দাম নিয়ে দর কষাকষির পর্যায়ে কোনো কোনো ক্রেতার সঙ্গে ব্যবসায়ীদের বাকবিতণ্ডাও হতে দেখা যায়।
মার্কেটের মূল ফটকের সামনে দু’জন করে আনসার সদস্য ও একজন করে মার্কেট কমিটির অফিস কর্মচারীকে বসে থাকতে দেখা গেলেও পুলিশের তেমন কোন উপস্থিতি ছিলো না।
ক্রেতারা বলছেন, ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পূর্ব প্রস্ততি স্বরূপ কেনাকেটা করতে এসেছেন তারা। করোনার প্রকোপ বাড়লেও অনেক দিন থেকে করোনা স্থায়ী হওয়াও তারা এখন আর আগের মতো শঙ্কিত নন। এছাড়া মৃত্যু হলেও মারা যাওয়ার পূর্বে শখ অপূর্ণ না রাখার জন্যই বাজারে কেনাকাটা করতে আসা।
জেলার গোদাগাড়ী উপজেলা থেকে ঈদের বাজার করতে আরডিএ মার্কেটে আসেন মো. দেলোয়ার হেসেন। তিনি বলেন, ‘বাড়িতে মা-বাবা অসুস্থ। তাদের খুশি করতে এবং বছরের ঈদ উৎসবকে উপভোগ্য করতে মার্কেট করতে এসেছি। করোনার জন্য তো আনন্দ মাটি করতে পারি না। তবে বাজারে সবকিছুর দাম বেশি নেয়া হচ্ছে তার অভিযোগ।
ব্যবসায়ীদের দাবি, দীর্ঘদিন থেকে মার্কেট বন্ধ থাকায় তারা চরম লোকসান গুনছেন। ঈদকে কেন্দ্র করে ক্ষতি পুষিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে চান তারা। সেজন্যই কিছুটা বাড়তি দাম নেয়া হচ্ছে। তবে ঈদের পর সবকিছু স্বাভাবিক হলে বাড়তি দাম নেয়া হবে না।
স্বাস্থ্যবিধির বিষয়ে বিক্রেতারা বলেন, ক্রেতারা নিজে থেকে সচেতন না হলে তারা তো জোর করে সরকারি নির্দেশনা মানাতে পারবেন না। এটি নিয়ে তাদের কিছুই করার নেই। ফুটপাত ব্যবসায়ী আসগর জানান, প্রথমে লকডাউন থাকায় বেচাকেনা হয়নি। এখন লকডাউন থাকলেও বেচাকেনা বেড়েছে। তিনি আশা করছেন এভাবে বেচাবিক্রি হলে ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারবেন।
প্রতিদিন গ্রাম থেকে শহরে ছুটে আসছেন ঈদের বাজারকে উপলক্ষ্য করে হাজার হাজার মানুষ। সাথে শিশু সন্তানদের মার্কেট করতে নিয়ে আসায় বাড়ছে স্বাস্থ্য ঝুঁকি। সড়কে গাড়ি চলাচল করছে স্বাভাবিক। ঢাকা, নারায়নগঞ্জ, গাজিপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে বিভিন্ন মাধ্যমে প্রতিদিনই শত শত মানুষ রাজশাহী আসছেন পরিবারের সাথে ঈদ করার জন্য।
ফেইসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে অন্য যাত্রীর সন্ধান করছেন মাইক্রোবাস মালিক এবং ভাড়া পুষিয়ে নিতে এক গাড়িতে অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে বাড়ি ফিরছেন।
এত সবকিছু্র পরেও জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, প্রশাসনের শিথিলতা থাকলেও কর্মকর্তারা তৎপর রয়েছেন। এ বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) আবু আসলাম জানান, প্রশাসনের পক্ষ থেকে আগের মতোই চালানো হচ্ছে তৎপরতা। সকলকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাতে তারা সক্রিয় রয়েছেন। সরকারী নির্দেশনা মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।
এদিকে রামেক হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, রবিবার দিবাগত রাতেই হাসপাতালটিতে করোনা উপসর্গ নিয়ে দুইজন মারা গেছেন। করোনা ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছেন ৮৮ জন। আর আইসিইউতে চিকিৎসা চলছে ১২ জনের।
এছাড়া রাজশাহী বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেয়া তথ্যমতে, করোনায় বিভাগের আট জেলায় এ পর্যন্ত ৫০৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ৩০৪ জন মারা গেছেন বগুড়ায়। আর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রাজশাহীতে মৃত্যু হয়েছে ৭৫ জনের।