ঈদযাত্রার শেষ সময়ে গন্তব্যে যেতে বাড়তি ভাড়া দিয়ে বাড়তি ঝুঁকি নিচ্ছেন যাত্রীরা। বুধবার সরাদিনের মতো রাতেও ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জ অংশে ঈদে ঘরমুখো মানুষের ভিড় দেখা গেছে।দিনের তুলনায় সন্ধ্যার পর অতিরিক্ত ঝুঁকি নিতে দেখা গেছে তাদের।
বুধবার সন্ধ্যা ছয়টা থেকে রাত সাড়ে ১০ টা পর্যন্ত ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের সাইনবোর্ড মোড়, শিমরাইল মোড় ও কাঁচপুর সেতু এলাকা ঘুরে সারা দিনের মতোই ঘরমুখো মানুষের দুর্দশার চিত্র চোখে পড়ে। গন্তব্যে যেতে পরিবহন সংকট, বাড়তি ভাড়া এবং যানজটে নাকাল হয়েছেন যাত্রীরা।
সকাল থেকে রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্তদুপুর ও বিকেলের তুলনায় সন্ধ্যায় সড়কে মানুষের ভিড় বেশি দেখা গেছে। এ সময় সড়কে পর্যাপ্ত বাস ও মাইক্রোবাস না থাকায় পুরুষ যাত্রীদের পাশাপাশি নারী এবং শিশুরাও লরি, কাভার্ডভ্যান ও পিকআপে চড়ে গন্তব্যে রওনা হয়েছেন।
সন্ধ্যার পর থেকে ভাড়া করা মোটরসাইকেলগুলোতে দিনের তুলনায় বেশি যাত্রী চলাচল করেছে। অধিকাংশ মোটরসাইকেলেই ঝুঁকি নিয়ে মালামালসহ তিনজন যাত্রী চলাচল বরতে দেখা গেছে। পুরো সময়ে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ছাড়া সড়কে পুলিশের অন্য কোনো কার্যক্রম দেখা যায়নি।
বশির বলেন, ‘জীবনে প্রথম পিকআপে যাচ্ছি। আজীবনই ঈদে ঘরমুখো মানুষকে যন্ত্রণা পোহাতে দেখেছি। তবে এত অমানবিক পরিস্থিতির মুখোমুখি হইনি।’
ছোট ছোট দুই সন্তান নিয়ে শিমরাইল মোড়ে একটি লরিতে চড়ে বসতে দেখা গেছে মাঝ বয়সী এক পোশাক শ্রমিক নারীকে। কুমিল্লা দেবীদ্বার যাবেন। নাম প্রকাশ করতে অনিচ্ছুক এই নারী বলেন, জনপ্রতি ৬০০ টাকায় আরও অনেকের সঙ্গে লরিতে চরে বসেছেন তিনি। লরিতে ওঠার পর থেকেই ভয়ে আছেন। মনে হচ্ছে ভেতরে দম বন্ধ হয়ে মারা যাবেন। প্রায় ৫০ জন যাত্রী নিয়ে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় লরিটি কুমিল্লার উদ্দেশে ছেড়ে যায়।
লরিটি ছাড়ার আগে সামনে ‘পুলিশ’ স্টিকার যুক্ত একটি মোটরসাইকেলের আরোহীকে লরির চালকের সঙ্গে কথা বলতে দেখা গেছে।
রাত আটটা পর্যন্ত শিমরাইল মোড়ে দূরপাল্লার বাসের টিকিট কাউন্টারগুলোতে মানুষের জটলা দেখা গেছে। ইউনিক পরিবহনের একটি কাউন্টারে কথা হয় বেসরকারি ব্যাংক কর্মী ফারজানা হকের সঙ্গে। সিলেটের উদ্দেশে ঘর ছেড়েছেন তিনি।
ফারজানা জানান, দূরপাল্লার বাস কাউন্টারগুলোতে অন্যান্য বাহনের টিকিট বিক্রি হলেও কাউন্টারগুলো থেকে কোনো বাস ছাড়ছে না। জনপ্রতি প্রায় ২ হাজার টাকা ভাড়ায় সিলেটের উদ্দেশে মাইক্রোবাস ছাড়ছে কাউন্টার কর্তৃপক্ষ। এত রাতেও পরিবহন সংকট ও যাত্রীদের চাপ দেখে বিরক্ত তিনি।
রাত নয়টায় কাঁচপুর সেতুর পূর্বপাশে কথা হয় একটি বেসরকারি সাহায্য সংস্থার কর্মকর্তা আলী হোসেনের সঙ্গে। স্ত্রী পারভীন আক্তারসহ ঢাকা থেকে ফিরছেন নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে। প্রায় দেড় ঘণ্টা গাড়ি না পেয়ে সাড়ে চার হাজার টাকায় একটি ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেলে করে চট্টগ্রাম রওনা হয়েছেন তারা।
লকডাউনে গণপরিবহন চালু রাখা যৌক্তিক হতো কি না প্রশ্ন করাহলে জবাব না দিয়ে পাল্টা প্রশ্ন করেন আলী হোসেন। বলেন, ‘ কোভিডের শুরুতে লকডাউন বলতে আমরা যা বুঝেছিলাম এখনো কি তাই বুঝি? লাখ লাখ শ্রমিককে কাজে রেখে, শ্রমজীবীদের ঘরে খাবার না দিয়ে জোর করে এমন লকডাউন সফল হয়? মানুষতো বাড়ি ফিরছে, পুলিশের সামনেই যানবাহন চলছে। তাহলে পুলিশ তাদের থামায়নি কেন?’