স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে দৈনিক প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে হেনস্তা, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি।
বুধবার সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. রহমত উল্লাহ এবং সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. নিজামুল হক ভূঁইয়া স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিবৃতিতে এই উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। একইসঙ্গে বিবৃতিতে সচিবালয়ের মতো জায়গায় এ ধরনের ঘটনার নিন্দা জানানো হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দাবি অনুসারে ওই সাংবাদিক স্বাস্থ্য সচিবের একান্ত সচিবের থেকে রাষ্ট্রীয় গোপন নথি সরিয়েছেন এবং অনুমতি না নিয়ে নথির ছবি তুলেছেন। কিন্তু সচিবের একান্ত সচিবের কক্ষ, যেখানে সচিব মহোদয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ প্রার্থীরা অপেক্ষমান থাকেন, সেখানে কোনও রাষ্ট্রীয় স্পর্শকাতর গোপন নথি অন্যের দৃশ্যমানতায় রাখা কর্তব্য অবহেলার শামিল।
এ ঘটনায় জনমনে প্রশ্ন জেগেছে যে, ব্যক্তির অনিয়মের গোপন তথ্য রাষ্ট্রীয় গোপন তথ্য বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে কিনা? সম্প্রতি ওই সাংবাদিক স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে দুর্নীতি সংক্রান্ত বেশ কয়েকটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে রাষ্ট্রের স্বার্থকে সমুন্নত করলেও কারও কারও বিরাগভাজন হয়েছেন।
এতে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা বর্তমান মহামারি পরিস্থিতি মোকাবেলায় যে দূরদর্শিতা ও প্রজ্ঞার পরিচয় দিয়েছেন তা সরকারের কতিপয় কর্মকর্তার দুর্নীতি ও বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে ম্লান হতে দেওয়া যাবে না। কোনো ব্যক্তির অনিয়ম ও দুর্নীতির দায়ভার রাষ্ট্র ও সরকার নিতে পারেন না। সমাজের যে কোনো অসঙ্গতি তুলে ধরাই গণমাধ্যমের কাজ।
পেশাগত দায়িত্বপালনে ত্রুটি-বিচ্যুতি হলে রাষ্ট্রের প্রচলিত আইনানুসারে সুরাহা হওয়া বাঞ্ছনীয়। কিন্তু উল্লিখিত সাংবাদিককে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা ও অসুস্থ হওয়ার পরও সচিবালয়ের মত রাষ্ট্রের শীর্ষ প্রশাসনিক দপ্তরে দীর্ঘসময় ধরে আটকে রেখে মানসিকভাবে নির্যাতনের ঘটনা চরম অপেশাদারিত্ব, কর্তৃত্ববাদী অসৌজন্যমূলক মনোভাবের চরম বহিঃপ্রকাশ। এ ঘটনা সাধারণ মানুষের কাছে এবং বহির্বিশ্বে বাংলাদেশে গণমাধ্যমে বিদ্যমান স্বাধীনতা সম্পর্কে একটি ভুল বার্তা দিচ্ছে। আমরা আশা করবো সরকার তার গৃহীত পদক্ষেপের মাধ্যমে এটিকে একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে প্রমান করবেন।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, সমাজের সুষম উন্নয়নের স্বার্থে রাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও পেশার মানুষের মধ্যে সহযোগিতা ও সহমর্মিতার সম্পর্ক বজায় থাকা বাঞ্ছনীয়। কিন্তু আমলাতন্ত্রের কতিপয় ব্যক্তির অদক্ষতা, অপেশাদারিত্ব ও কর্তৃত্ববাদী আচরণের কারণে রাষ্ট্রের বিভিন্ন পর্যায়ে অনেকের মধ্যে নানা সময়ে ক্ষোভ ও হতাশা লক্ষ্য করা গেছে। এ ধরনের পরিস্থিতি সরকারকে জনবিচ্ছিন্ন করার ষড়যন্ত্র কিনা তা খতিয়ে দেখা উচিত।
বিবৃতিতে এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ এবং রোজিনা ইসলামের আইনগত সুরক্ষা ও মানবাধিকার নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়।
আরও পড়ুনঃ সাংবাদিক রোজিনা নিরপরাধ হলে আদালতে ন্যায়বিচার পাবেনঃ কাদের
বাংলাদেশে সাংবাদিক হেনস্তা ও গ্রেপ্তারের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ জাতিসংঘের