বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, পাসপোর্ট থেকে ‘একসেপ্ট ইসরায়েল’ শব্দ বাদ দেওয়ার বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিরবতা মানে ‘সরকারের নীতিহীন অবস্থান’। জনগণের সমর্থনহীন এই সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকতে দেশের জনগণের বদলে এখন সীমান্তের বাইরের ক্ষমতাবানদের তুষ্ট করতে ব্যস্ত।
সোমবার রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব বলেন। ফিলিস্তিন সংগ্রাম ও তাদের প্রতি বিএনপির পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করতেই এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘ইসরায়েলী বিমানের বার বার হামলা ও ক্ষেপনাস্ত্র নিক্ষেপে যখন ফিলিস্তিনের গাজা নগরী মৃত্যুপুরীতে পরিণত হচ্ছে, ঠিক সেই সময়ে বাংলাদেশের পাসপোর্ট থেকে ইসরায়েল ভ্রমণের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। যা হতাশ করেছে গোটা বিশ্ব বিবেককে।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এর আগে তৃতীয় দেশকে ব্যবহার করে ইসরায়েল থেকে আড়িপাতার যন্ত্রপাতি আমদানি করেছে আওয়ামী লীগ সরকার। যা প্রতিনিয়ত রাষ্ট্র কর্তৃক মানবাধিকার লংঘনের অপরাধ সংঘটিত করতে ব্যবহার করা হচ্ছে। এ বিষয়ে জাতিসংঘ ক্ষমতাসীন সরকারের কাছে জবাব চেয়েছে। তদন্তের দাবি জানিয়েছে বিশ্বের সকল মানবাধিকার সংগঠনগুলো। এসব নীতিহীন, অবৈধ তৎপরতা সরকার করে চলছে রাষ্ট্রের মালিক জনগণের চোখে ধুলো দিয়ে। যা রক্তস্নাত জেরুজালেমে ফিলিস্তিনিদের লাশ আর রক্ত নিয়ে সরকারের ক্ষমতা কেন্দ্রীক অমানবিক এক সমীকরণের প্রমাণ।
তিনি বলেন, গত রোববার ফিলিস্তিন বিরোধী আওয়ামী লীগ সরকারের ওই সিদ্ধান্তে ইসরায়েল সরকারের অভিনন্দন-টুইটের প্রেক্ষিতে তা অস্বীকার করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বাংলাদেশে সরকারের অবস্থান ঘোষণা করা হয়। অপরদিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিরবতা গোটা বিষয়ে সরকারের নীতিহীন অবস্থান বেরিয়ে এসেছে।
ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংকট সমাধানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো-বাইডেনের বক্তব্যকে ‘তাৎপর্যময়’ অভিহিত করে মির্জা ফখরুল বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠায় এই দুই রাষ্ট্রই একমাত্র সমাধান। আমরা বিশ্বাস করি, জাতিসংঘের প্রস্তাব এবং অসলো চুক্তির আলোকে ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংকট সমাধানে ‘ইসরায়েলের পাশাপাশি ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ঘোষণা বাস্তবায়নের পথ সুগম করাই হচ্ছে প্রধান চ্যালেঞ্জ।
চলমান হত্যাকাণ্ডকে আন্তর্জাতিক বিচার প্রক্রিয়ায় আনার উদ্যোগসহ দুই রাষ্ট্র গঠনের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন জাতিসংঘের নেতৃত্বে অতিসত্ত্বর কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বানও জানান বিএনপি মহাসচিব।
তিনি বলেন, মুসলিম ভ্রাতৃত্ব ও মানবততার পক্ষের শক্তি হিসেবে ফিলিস্তিনি নাগরিকদের স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে বিজয়ী হবার আগ পর্যন্ত আমরা সার্বিকভাবে তাদের পাশে থাকার দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করছি। ইতোমধ্যে ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতি প্রকাশ করে যুদ্ধাহতদের জন্য ঔষধ পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি।
সরকারের তরফ থেকে কী ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করা উচিত ছিলো, জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমাদের সরকার প্রধান বিশ্বনেতা। তিনি তো সমস্ত মুসলিম দেশগুলোকে আহ্বান জানিয়ে উদ্যোগ নিতে পারতেন যে, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ফিলিস্তিনিদের পক্ষ দাঁড়াতে। সরকারের পক্ষে অনেক বড় রকমের সহযোগিতা পাঠাতে পারতেন, সাহায্য পাঠাতে পারতেন ফিলিস্তিনিদের কাছে। ঘটনা হচ্ছে- তার আগেই সব করে ফেলেছে এই সরকার।’