চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় করোনা সংক্রমণ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে বলে স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের ধারণা। কারণ সে জেলার করোনা ভাইরাস শনাক্তের হার এখন ৬০ শতাংশের বেশি। ফলে সে জেলায় বিশেষ ‘লকডাউন’ আরোপ করা হয়েছে।
করোনা ভাইরাস সংক্রমণ এমন এক সময়ে ব্যাপকতা লাভ করেছে যখন আমের মৌসুম।
পুরো চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার প্রায় শতভাগ মানুষ এই সময়ের মধ্যে আম ব্যবসার সাথে প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে জড়িত।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. হরিদাস চন্দ্র মোহন্ত জানান, এই জেলায় প্রতিবছর প্রায় আড়াই লক্ষ মেট্রিক টন আম উৎপাদন হয় যার বাজার মূল্য ১২শ থেকে ১৪শ কোটি টাকা।
“একই জাতের আম অন্য জেলাতেও হয়। কিন্তু চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমের আলাদা কিছু বৈশিষ্ট্য হয়। এখানে ফলন যেমন বেশি হয় তেমনি স্বাদও বেশি।”
তিনি বলেন, করোনা ভাইরাস সংক্রমণের কারণে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার আম ব্যবসা যদি ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাহলে মানুষের জীবন-জীবিকার উপর মারাত্মক প্রভাব পড়বে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম ব্যবসায়ী শহীদুল্লাহ বলেন, তিনি রাজধানী ঢাকা থেকে ১০ টন আমের অর্ডার পেয়েছেন। এজন্য তাকে আম সংগ্রহ করতে হবে। আম সংগ্রহ করতে চাপাইনবাবগঞ্জ থেকে রাজশাহী আসার প্রয়োজন হলেও লকডাউনের কারণে তিনি আসতে পারেন নি। বাধ্য হয়ে অর্ডার বাতিল করেছেন।
শহীদুল্লাহর মতো চাঁপাইনবাবগঞ্জের অনেক আম ব্যবসায়ী এখন চিন্তিত। সেখানে লকডাউনের মেয়াদ আরো বাড়বে কি না সেটি নিয়েও অনেকে ভাবছেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম ব্যবসায়ী ইসমাইল খান শামীম বলেন, জেলা প্রশাসনের নির্দেশনা অনুযায়ী এক জায়গায় আমের বাজার না করে জেলার ১৬টি ইউনিয়নে বাজার ভাগ করে দিতে হবে। এতে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি কম হতে পারে। কিন্তু ব্যবসায়ীরা চান প্রতিবারের মতো কানসাট বাজার যাতে ব্যবসার মূল কেন্দ্র হয়।
“যদি আমরা কানসাট বাজারে আম বিক্রি করতে না পারি, তাহলে সিন্ডিকেট তৈরি হবে এবং চাষিরা ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হবে” “আমাদের দাবি হচ্ছে, কানসাটের আশপাশে যে বড়-বড় মাঠ এবং আমবাগান আছে এখানে যাতে আমের বাজার করা হয়,” বলেন মি. শামীম।
তিনি বলেন, পুরো বাংলাদেশে থেকে আমের ব্যাপারী এবং ক্রেতারা কানসাটে আসে আম ক্রয় করতে। কানসাট বাজারেই প্রায় ৫০০ আমের আড়ত রয়েছে।
দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে আম ব্যবসায়ীরা যাতে অবাধে চাঁপাইনবাবগঞ্জে আসা-যাওয়া করতে পারে সেটি নিশ্চিত করার দাবি করেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম ব্যবসায়ীরা।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, চাপাইনবাবগঞ্জের জনপ্রিয় জাতের আম পাড়া শুরু হবে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে।
রাজশাহী এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলছেন, করোনাভাইরাস শনাক্তের হার বিবেচনা করলে এতো দ্রুত বিধি-নিষেধ তুলে নেবার কোন সুযোগ নেই। তবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে আম এবং অন্যান্য কৃষিজ পণ্য পরিবহনে কোন বাধা নেই বলে এরই মধ্যে সরকারের তরফ থেকে জানানো হয়েছে।
আম পরিবহনের জন্য বৃহস্পতিবার ম্যাঙ্গো স্পেশাল ট্রেন চালু করেছে সরকার।