রাজধানীর মহাখালীতে ময়না মিয়া নামে ড্রামের ভেতর থেকে যে ব্যক্তির ছয় টুকরো লাশ উদ্ধার করা হয়েছে, তাঁকে তাঁর প্রথম স্ত্রী ফাতেমা খাতুন শিল্পীই হত্যা করেছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
পুলিশের ভাষ্য মতে, শিল্পীকে গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি বলেছেন, দ্বিতীয় বিয়ে করার কারণে পারিবারিক কলহের জেরে গত শনিবার রাতে স্বামীকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে একাই গলা কেটে হত্যা করেন। পরদিন রাতে একাই লাশ ছয় টুকরো করে অটোরিকশা ভাড়া করে বিভিন্ন স্থানে ফেলে আসেন। গতকাল মঙ্গলবার শিল্পীর পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
মঙ্গলবার (০১ জুন) তাকে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর বনানী থানার মামলায় তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক কাজী শরিফুল ইসলাম সুষ্ঠু তদন্তের প্রয়োজনে আসামি ফাতেমার ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন। শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম রাজেশ চৌধুরি তার পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এর আগে মহাখালী থেকে উদ্ধার হওয়া ময়না মিয়ার ছয় টুকরো মরদেহটির রহস্য উদঘাটন করে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। সোমবার দুপুরে বনানী থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে নিহত ময়না মিয়ার স্ত্রীকে গ্রেপ্তার করা হয়।
আরও পড়ুনঃ ২য় বিয়ে করায় স্বামীকে ঘুমের ট্যাবলেট খাইয়ে হত্যা করে ৬ টুকরা করে ১ম স্ত্রী
মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ময়না মিয়া হত্যাকাণ্ডের ধরণ, মোটিভ এবং অপরাধী সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরেন ডিবির যুগ্ম কমিশনার হারুন অর রশীদ।
ডিবির যুগ্ম কমিশনার হারুন অর রশীদ বলেন, সোমবার দুপুর ১২টায় গোয়েন্দা গুলশান বিভাগের একটি টিম বনানী থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে ময়না মিয়ার খণ্ডিত লাশের রহস্য উন্মোচনসহ এক জনকে গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তারকৃত ফাতেমা খাতুন ভিকটিমের প্রথম স্ত্রী।
আরও পড়ুনঃ স্ত্রী পরিকল্পিতভাবে খুন করে লাশের টুকরো ফেলে বিভিন্ন স্থানে
তিনি জানান, পানির ড্রামে কেটে ফেলা দুই পা এবং দুই হাতকে একটি বড় কাপড়ের ব্যাগে ঢুকিয়ে রাখে নিহত ময়না মিয়ার স্ত্রী ফাতেমা খাতুন। এলাকা থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকায় অটোরিকশা ভাড়া করে প্রথমে মাথা ও হাত-পা ছাড়া খণ্ডিত শরীরের মূল অংশ ফেলে দেয় আমতলী এলাকায়। এরপর মহাখালী বাস-টার্মিনাল এলাকায় এনা বাস কাউন্টারের সামনে খণ্ডিত দুই হাত-পা ভর্তি ব্যাগ রেখে দিয়ে চলে আসে বাসায়। বাসায় এসে সেখান থেকে খণ্ডিত মাথার ব্যাগটি নিয়ে বনানী ১১নম্বর ব্রিজের পূর্বপ্রান্তে গুলশান লেকে ফেলে দেয় এবং এরপর বাসায় এসে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে থাকে।
শিল্পী ভেবেছিলেন, ময়নার লাশ কেউ শনাক্ত করতে পারবে না। কিন্তু উদ্ধার করা লাশের হাত থেকে আঙুলের ছাপ নিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্রের ডেটাবেইসের সঙ্গে মিলিয়ে পুলিশ জানতে পারে নিহতের নাম ময়না মিয়া, বাড়ি কিশোরগঞ্জ। এরপর মোবাইল ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে শিল্পীকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর দেখানো মতেই ভিকটিমের রক্তমাখা জামা-কাপড়, ধারালো ছুরি ও দা, বিষাক্ত পেয়ালা ও শিল-পাটা উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় বনানী থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছেন নিহত ময়না মিয়ার দ্বিতীয় স্ত্রী। এ ঘটনায় আরো কেউ জড়িত আছে কি না খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
ডিবির একটি সূত্র জানায়, মানুষের বাসাবাড়িতে কাজ করে মাসে ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা আয় করতেন শিল্পী। দুই সন্তানকে নিয়ে কড়াইল বস্তির ওই বাসায় ভাড়া থাকলেও সব সময় চাইতেন স্বামী ময়না মিয়াও তাঁদের সঙ্গে থাকুক। স্বামীকে বশে আনতে নিয়েছিলেন তাবিজও। কিন্তু এত কিছুর পরও ময়না মিয়ার ভালোবাসা পেতেন না। উল্টো ময়না মিয়া আরেক নারীকে বিয়ে করেন।