নাটোরের লালপুরে ছাত্রলীগ কর্মী মোয়াজ্জেম হোসেন খান্নাসকে হত্যার দায়ে চারজনের ফাঁসির রায় দিয়েছে আদালত। বৃহস্পতিবার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ সাইফুর রহমান সিদ্দিক এই আদেশ দেন। রায়ে আরও এক আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন। দণ্ডপ্রাপ্ত প্রত্যেকেই বিএনপির কর্মী, সমর্থক হিসেবে পরিচিত।
ফাঁসির আদেশপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- লালপুর উপজেলার বাহাদুপুর গ্রামের শহিদুল ইসলামের দুই ছেলে শামীম (৩৮) ও সুজন (৩৫), একই গ্রামের আবদুল মালেকের ছেলে আবদুল মতিন (৪৫) ও আবদুল খালেকের ছেলে আবদুস শকুর (৩৭)।
এছাড়া বাহাদুপুর গ্রামের ফয়েজ উদ্দিনের ছেলে সান্টুকে (২৭) যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন বিচারক। দণ্ডিত পাঁচ আসামির প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে আরও তিন মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তবে অপরাধে সংশ্লিষ্টতা প্রমাণিত না হওয়ায় এ মামলার আসামিদের মধ্যে ১৩ জনকে খালাস দিয়েছেন বিচারক।
দণ্ডিত আসামিদের মধ্যে শামিম ও শুকুর রায় ঘোষণার সময় আদালতে হাজির ছিলেন; বাকিরা পলাতক।
মামলার তদন্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নাটোর-১ আসনের তৎকালীন বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য ফজলুর রহমান পটল ও আওয়ামী লীগের নেতা মমতাজ উদ্দিনের সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। আসামিরা ছিলেন বিএনপির সমর্থক। তারা সংঘবদ্ধ হয়ে ২০০২ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি রাতে লালপুর উপজেলার হাবিবপুর গ্রামে হামলা চালান।
তারা বিভিন্ন বাড়িতে ভাঙচুর ও আওয়ামী লীগ–সমর্থিত লোকজনকে মারপিট করতে থাকেন। এ সময় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ কর্মী মোয়াজ্জেম হোসেন ওরফে খান্নাস, তাঁর বাবা, মা ও বোনকে নিয়ে নিজ গ্রাম হাবিবপুরের বাড়িতে আসছিলেন। তাকে দেখামাত্র আসামিরা তাকে রাস্তার ওপর কোপান এবং গুলি করেন। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় লালপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে ভর্তির আগেই তার মৃত্যু হয়। পরের দিন বিকেলে নিহত ব্যক্তির বাবা মো. আ. শুকুর মৃধা বাদী হয়ে লালপুর থানায় ২৩ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন।
তদন্তকারী কর্মকর্তা লালপুর থানার উপপরিদর্শক মো. মোয়াজ্জেম হোসেন ওই বছরের ৩০ এপ্রিল আদালতে এজাহারভুক্ত সব আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। পরে আসামিরা আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনে মুক্ত হন। তবে আসামি শামীম আওয়ামী লীগ নেতা মমতাজ উদ্দিন হত্যা মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত হয়ে ছয় বছর ধরে কারাগারে আছেন। ১০ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে ২০১৬ সাল থেকে মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ ছিল।
রাষ্ট্রপক্ষের সহকারী কৌঁসুলি মাসুদ হাসান বলেন, এটা একটি চাঞ্চল্যকর ও স্পর্শকাতর হত্যাকাণ্ড। দীর্ঘদিন পরে হলেও আদালতের রায়ে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
আসামিপক্ষের আইনজীবী আতিকুল্লাহ বিশ্বাস ও আবদুল খালেক বলেন, তারা রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করবেন।