দৈনিক সচেতন বার্তার অপরাধ বিষয়ক অনুসন্ধানী টিম ‘সচেতন চোখ’ এর অনুসন্ধানী প্রতিবেদন-২
অভিযুক্ত রুপনগর থানার এসআই মাসুদুর রহমান বারবার প্রতিবেদকের প্রশ্ন এড়িয়ে ভিন্ন প্রসঙ্গ এনে পাল্টা প্রশ্ন করেন। অপরকে দিয়ে প্রতিবেদকের কাছে ফোন করান। তারপরেও একাধিকবার তাকে ফোন করা হলে প্রশ্নের সম্মূখীন না হওয়ার জন্য বিভিন্ন অজুহাত দেখান। প্রতিবেদকের নাম্বারে একাধিক ম্যাসেজ করেন। এমনকি ঢাকা ক্রাইম জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন এর সাবেক সভাপতি এই এসআইকে ফোন দিলে তিনি ফোন ধরেন নি। পরিচয় দিয়ে ক্ষুদে বার্তা পাঠানোর পরেও তিনি ফোন ব্যাক করেন নি।
উপরন্তু অভিযুক্ত এসআই মাসুদুর রহমান অভিযোগকারীনী ওই নারীকে ফোন দিয়ে বলেন,’আপনি সাংবাদিকদের কে দিয়ে আমাকে বিপদে ফেলার চেষ্টা করছেন। এস আই মাসুদ এবং ওই নারীর ধারণকৃত কথোপকথোনের এক পর্যায়ে উক্ত ভুক্তভোগী নারী এসআই এর কাছে জানতে চায়, আপনি টাকা নিয়েও এমন করলেন কেন? জবাবে এস আই বলেন, ‘আপনিও তো কথার ঠিক রাখেন নি। আচ্ছা ঠিক আছে সকালে দেখা করেন একটা উপকার করে দেব।’ সার্বিকভাবে এস আই মাসুদুর রহমানের দূর্বলতা, অপরাধের সাথে সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া যায়।
ঘটনার বিষয়ে আরও অনুসন্ধানে, যাওয়া হয় সেই নারীর ভাড়া করা ১৩/১৪ নম্বর বাড়ীতে। যার মালিক ডাঃ মানিক গং। সবকিছু মেইন্টেইন্স করেন ডাঃ মানিক। বাড়ীতে সিসি ক্যামেরা লাগানো। সে সময় তিনি না থাকায় কথা হয় তার ছোট ভাই এর সাথে। ডাঃ মানিকের ছোট ভাই জানান, নীচতলার ভাড়াটিয়া সেই নারী ওই বাসা ছেড়ে দিয়েছেন।
এ সময় তার কাছে জানতে চাওয়া হয় তাদের নীচতলার সেই ভাড়াটিয়ার ওখানে কোনো গন্ডগোল বা ঘটনা ঘটেছিল কিনা। তিনি বলেন, ২৫ তারিখ দুপুরে নীচতলার ভাড়াটিয়ার ঘরে পুলিশ এসেছিলো, ঘটনা জানতে তিনি ওই ঘরের দিকে যাচ্ছিলেন। এসময় পুলিশের সাথে থাকা সিভিল পোষাক পরিহিত একজন তাকে বলেন, ‘তেমন কিছু ঘটেনি, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে গন্ডগোল এর বিষয় নিয়ে পুলিশ এসেছে’। এ কথা শুনে তিনি আর যাননি। সিসি টিভি ফুটেজ এর বিষয়ে তিনি জানান, এগুলো উনার বড়ভাই (ডাঃ মানিক) নিয়ন্ত্রন করেন।
আরও পড়ুনঃ এসআই এর বিরুদ্ধে নারীনির্যাতন, অর্থআদায় ও মিথ্যা মামলার অভিযোগ
ঘটনাস্থল ভূক্তভোগী নারীর ভাড়াকৃত বাড়ি ১৩/১৪ এর একটি বাড়ি পর দুই নম্বর রোডের শেষ মাথায় ১৬/৩ নাম্বার বাড়ী। এস আই মাসুদুর রহমান ওই নারীর স্বামীর নামে করা মামলার এজাহারে ঘটনাস্থল হিসেবে ১৬/৩ নাম্বার বাড়ির সামনে রাস্তার উপরে বলে উল্লেখ করেন। ১৬/৩ নাম্বার বাড়ির মালিক স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সদস্য রফিক গাজী।
‘সচেতন চোখ’ এর টিম সমন্বয়ক এজাহারে উল্লেখিত ঘটনাস্থল ১৬/৩ নাম্বার বাড়ীতে যান। সে সময় বাড়ীতে রফিক গাজী ছিলেন না। কথা হয় রফিক গাজীর স্ত্রীর সাথে। তার কাছে জানতে চাওয়া হয় ২৫ তারিখ বা দুই-তিনদিনের মধ্যে কোন রাতে এই রোডে কিংবা আপনাদের বাড়ির সামনে কোন ঘটনা ঘটেছিল বা পুলিশ এসেছিল এমন কিছু জানেন কিনা। তিনি বলেন, না এমন কোন ঘটনা ঘটেনি। তিনি স্বপ্রণোদিত হয়ে বলেন যে,’এমন ঘটনা ঘটলে তো জানতাম তবে, রাত্রে না কয়েকদিন আগে দুপুরে ওই (১৩/১৪ নম্বর) বাড়িতে পুলিশ এসেছিল এবং একজনকে ধরে নিয়ে যেতে দেখেছি’। তিনি ঘটনাস্থলে গেছিলেন কিনা বা কি অভিযোগে ধরে নিয়ে গেছে তা জানেন কিনা জানতে চাইলে বলেন, ‘তখন আমি এখানে কাপড় নাড়তেছিলাম, দেখলাম ঐ বাড়ী থেকে একজনরে গাড়িতে ওঠায় নিতে, ওনার স্ত্রী সাথে ছিল, আমি একটু সামনে এগিয়ে গেছিলাম’।
সেকশন-৬, ব্লক-ট, রোড নং-২ গলির মুখেই আলমগীরের চায়ের দোকান। প্রতিবেদক কথা বলেন আলমগীর এর সাথে। আলমগীর জানান যে বারোটা সাড়ে বারোটা পর্যন্ত তার দোকান খোলা থাকে। ২৫ তারিখ বা অল্প কিছু দিনের মধ্যে কোন রাতেই পুলিশের কোন গাড়ি তিনি এই রাস্তায় ঢুকতে দেখেন নি বা কোন ঝামেলা-গন্ডগোল এর কথাও শুনেন নি।
রফিক গাজী মোবাইল ফোনে সচেতন বার্তার প্রতিবেদককে জানান ঘটনার দিন ২৫ তারিখ দুপুরে তিনি রাস্তার মুখে দাঁড়িয়ে ছিলেন। সেখানে তিনি পুলিশকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেন। দুইজন পোশাক পরিহিত পুলিশ ছিল এবং পুলিশের সাথে পাশের গলির মাদক বিক্রেতা রনিও ছিল (এই রনিই এসআই মাসুদের এজাহারের ১ নং স্বাক্ষী) কিছুক্ষণ পর রনি সহ দুই পুলিশ সদস্যকে ডাঃ মানিক সাহেবের বাসায় ঢুকতে দেখেছিলেন। তারপর তিনি তার ব্যাক্তিগত কাজে চলে যান। পরে এলাকায় এসে জানতে পারেন মানিক ভাইয়ের বাসার নিচতলা থেকে পুলিশ একজনকে ধরে নিয়ে গেছে। তবে কি অভিযোগে তিনি তা বলতে পারেননি।
এজাহারে উল্লেখিত দুইজন সাক্ষীর মধ্যে একজন মুক্তার হোসেন রনি এলাকার একজন চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী। ঘটনার দিন রনি এস আই মাসুদের সাথে রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছিলেন যা রফিক গাজী জানান। ভুক্তভোগী ওই নারীর অভিযোগেও উল্লেখ আছে পুলিশের সাথে সোর্স রনি ঘটনার দিন তার বাসায় প্রবেশ করেছিলেন।
এজাহারে উল্লেখিত সাক্ষীদ্বয়ের মোবাইল নাম্বার ০১৯৯১০৯৯৭৩৩, ০১৭৮৯৩৪১৩৩৬। নাম্বার দুইটি সবসময় বন্ধ পাওয়া যায়। সচেতন চোখ টিম সমন্বয়ক মাদক ব্যবসায়ী রনির মোবাইল নাম্বার সংগ্রহ করে তাকে ফোন দিয়ে ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে রনি বলে আপনি ভুল নাম্বারে ফোন দিয়েছেন, এটা রনির নাম্বার না বলে ফোন কেটে দেয়। পরে অনেক বার ফোন দিলেও ফোন রিসিভ করেনি।
প্রসংগত, রাজধানীর মিরপুরে রুপনগর থানার এসআই মাসুদুর রহমানসহ তার তিন সহোযোগীর বিরুদ্ধে জনৈক নারীকে নির্যাতন ও ব্ল্যাকমেইল করে নগদ অর্থ, স্বর্নালঙ্কার আদায় এবং ওই নারীর স্বামীর বিরুদ্ধে মাদকের মিথ্যা মামলা দেওয়ার অভিযোগে বাংলাদেশ পুলিশ মহাপরিদর্শক, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ছাড়াও কয়েকটি সংস্থা বরাবর অভিযুক্ত এসআই মাসুদুর রহমানসহ ঘটনার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তির দাবি করে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
অভিযোগে তিনি বলেছেন, ‘এহেন সুচতুর অর্থলোভী, ক্ষমতার অপব্যবহারকারী, নৈতিকতা বিবর্জিত নারী নির্যাতনকারী এসআই মাসুদুর রহমানের অমানবিক কর্মের ও দায়েরকৃত উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মিথ্যা মামলার ঘটনায় এস আই মাসুদুর রহমান সহ তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে আইন মোতাবেক যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করে আমাকে নায্য বিচার দানে ও বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর ভাবমূর্তি সমুন্নত রাখতে কৃপা হয়’।
সচেতন চোখ এর অনুসন্ধানী রিপোর্ট এর শেষ পর্ব আসছে আগামীকাল……। থাকুন সচেতন বার্তার সাথেই।