দৈনিক সচেতন বার্তার অপরাধ বিষয়ক অনুসন্ধানী টিম ‘সচেতন চোখ’ এর অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের শেষ পর্ব
রাজধানীর মিরপুরে রুপনগর থানার এসআই মাসুদুর রহমানসহ তার তিন সহোযোগীর বিরুদ্ধে জনৈক নারীকে নির্যাতন ও ব্ল্যাকমেইল করে নগদ অর্থ, স্বর্নালঙ্কার আদায় এবং ওই নারীর স্বামীর বিরুদ্ধে মাদকের মিথ্যা মামলা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
গত ২৫শে ফেব্রুয়ারী তারিখ দুপুরে মিরপুর ৬ নং সেকশানের ‘ট’ ব্লকে ওই নারীর ভাড়াকৃত ১৩/১৪ নাম্বার বাসায় অভিযুক্তরা এই ঘটনা ঘটায়।
ভুক্তভোগী নারী এ বিষয়ে গত ৩১/০৩/২০২১ তারিখে বাংলাদেশ পুলিশ মহাপরিদর্শক, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ছাড়াও কয়েকটি সংস্থা বরাবর অভিযুক্ত এসআই মাসুদুর রহমানসহ ঘটনার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তির দাবি করে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
অভিযুক্ত এসআই মাসুদুর রহমানের এজাহারে উল্লেখ করা এক নম্বর সাক্ষী মোঃ মুক্তার হোসেন রনি (২৮) এসআই এর সাথে ঘটনার দিনে ওই নারীর বাড়িতে প্রবেশ করেছিলেন। যা ভুক্তভোগী ওই নারীর পুলিশ মহাপরিদর্শক বরাবর দায়েরকরা অভিযোগে উল্লেখ আছে। আওয়ামীলীগ নেতা রফিক গাজী ও এই প্রতিবেদক কে জানিয়েছেন, ওই দিন দুপুরে তিনি পুলিশের সাথে রনিকে ও ডাঃ মানিক সাহেবের বাসায় ঢুকতে দেখেছেন। এস আই মাসুদুর রহমান তার সহযোগীকেই বানিয়েছেন এক নাম্বার স্বাক্ষী।
স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা যায়, এই রনি এবং এজাহারনামীয় অপর স্বাক্ষী মোঃ মিরাজ (৩৪) উভয়েই এলাকার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী। উভয়েই রুপনগর থানা এলাকায় এস আই মাসুদের সেল্টারেই মাদকের স্পট পরিচালনা করেন। একইসাথে এস আই মাসুদের সোর্স হিসেবে কাজ করে থাকেন। মাদক ব্যাবসায়ী রনি এবং মেরাজই শুধু নয় রুপনগর থানা এলাকার অন্যতম শীর্ষ চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী শফিক, সুমনের সাথেও এসআই মাসুদুর রহমান এর রয়েছে বিশেষ সখ্যতা।
অভিযোগকারী ওই নারীর স্বামী মোঃ রানা একজন মাদকাসক্ত ব্যাক্তি। তিনি রনির কাছ থেকে মাদক ক্রয় করে থাকেন। ঘটনার দিন ২৫ শে ফেব্রুয়ারী তিনি রনির কাছে মাদক ক্রয় করেন। এরপরই রনি এসআই মাসুদকে তথ্যটি জানায়। সংবাদ পেয়ে এস আই মাসুদ কন্সটেবল জীবনকৃষ্ণ দাসকে নিয়ে উপস্থিত হন মিরপুর সেকশন ৬ এর ট ব্লকের ২ নম্বর লাইনের রাস্তার মাথায়। সেখানে আগে থেকে উপস্থিত ছিল রনি ও সোহাগ। এসআই মাসুদ এর পরিকল্পনা অনুযায়ী রনি ও সোহাগ ওই নারীর বাড়ির দরজায় নক করে এবং দরজা খোলার পরপরই রনি ও সোহাগের সাথে এসআই মাসুদ ও কন্সটেবল জীবন ওই নারীর ঘরে প্রবেশ করেছিল।
ঘটনার সময় ওই নারীর স্বামীর নেশা করার দৃশ্যের চিত্র মোবাইলে ধারণ করেছিলেন এসআই মাসুদুর রহমান। সেই চিত্রের তারিখ ও সময় একটি যথার্থ প্রমাণ যে তিনি মিথ্যা এজাহার দায়ের করেছেন।
মিরপুর রূপনগর থানার সিসি টিভি ফুটেজেও প্রমাণ মিলবে তিনি ওই নারীর বাড়ি থেকে তার স্বামীকে নিয়ে কখন থানায় প্রবেশ করেছেন, কোন সময় লকআপ করেছেন, কতক্ষন লকআপে রেখেছিলেন, তার সকল তথ্যের। তা সত্বেও ওই নারীর করা অভিযোগ পরবর্তী প্রায় ৪ মাস অতিবাহিত হতে চললেও কোন এক অজানা কারণে পুলিশের উর্ধতন কর্তৃপক্ষ উক্ত এস আই মাসুদুর রহমানের বিরুদ্ধে দৃশ্যমান কোন পদক্ষেপ গ্রহন করে নাই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের একটি বিশ্বত সূত্র জানায় যে ইতিপূর্বে এস আই মাসুদুর রহমান পল্লবী থানায় চাকরি করার সময়ে বিতর্কিত কিছু কর্মকান্ডের সাথে সমপৃক্ত হওয়ায় পল্লবী থানার অফিসার ইন চার্জ এর সুপারিশে রুপনগর থানায় বদলি হয়েছেন।
সাংবাদিকদের তৎপরতা এবং এসআই মাসুদ এর সোর্স, সহযোগী ও মাদক ব্যবসায়ী রনিকেও সাংবাদিক ফোন দিয়েছিল এমন তথ্য জানার পর থলের বিড়াল বের হয়ে যাওয়ার ভয়ে চতুরতার সাথে ঘটনার সাথে সমপৃক্ত তার সহযোগী মাদক ব্যাবসায়ী রনিকে কৌশলে জেল হাজতে পাঠানোর ব্যাবস্থা করেন।
পিআরবি ২৬৩,২৬৪ অনুসারে ঘটনার সময় এবং ঘটনাস্থল পরিদর্শনের সময় আবহাওয়া সম্পর্কে বিস্তারিত নোট দায়ের করা প্রাথমিক তথ্য বিবরণীতে থাকতে হবে। অন্ধকারপক্ষ বা কৃষ্পক্ষ নাকি আলোককপক্ষ সেটিও উল্লেখ করতে হবে। ঘটনার সময় আলোর উৎস (টর্চলাইট, ল্যাম্পপোস্ট, চাঁদেরআলো,মোমবাতির আলো, কূপিবাতির আলো, নাকি মোবাইলের আলো) উল্লেখ থাকতে হবে। জব্দকৃত মালামাল যে ব্যাক্তি উদ্ধার করেছেন বা আস্বামীর নিকট হতে যিনি হাতে পেয়েছেন জব্দ তালিকায় তার নাম থাকতে হবে। মাসুদুর রহমান এজাহারে পিআরবি ২৬৩, ২৬৪ কোনটি অনুসরণ করেন নাই।
তিনি এজাহারে উল্লেখ করেন স্বাক্ষীদের উপস্থিতিতে আসামীর নিকট হতে ৯০ পিস হালকা গোলাপি রঙের এমফিটামিন যুক্ত ইয়াবা ট্যাবলেট জব্দ করেন। অথচ জব্দ তালিকায় উল্লেখ করেন ৯০ পিস লাল গোলাপি রঙের কথিত ইয়াবা ট্যাবলেট আসামী রানার নিকট হতে উদ্ধার করেছেন।
স্বাভাবিক ভাবেই তার দায়েরকৃত এজাহার প্রশ্নবিদ্ধ হয় তারই লিখিত বক্ত্যবের ভিন্নতার কারণে। এটাও প্রমান করে যে একজন মাদক সেবিকে ধরে নিয়ে এসে এজাহারে মিথ্যা তথ্য সংযুক্ত করে মাদক ব্যাবসায়ী হিসেবে মিথ্যা মামলা দায়ের করেছেন।
বাংলাদেশ পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তাদের একটি মহল মনে করেন, ‘এস আই মাসুদুর রহমানের মত কিছু সংখ্যক পুলিশ সদস্যের অনৈতিকতার কারণে জনসম্মুখে পুরো পুলিশ বাহিনির ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। পুলিশ বাহিনীর উর্ধতন কর্তৃপক্ষ যে সময় নিজেদেরকে জনগণের বন্ধু হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে দিন রাত পরিশ্রম করে চলেছেন ঠিক এমন সময় কিছু অসৎ সদস্যের কারণে সকল প্রচেষ্টা বিফল হয়ে যাচ্ছে। এদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যাবস্থা নেওয়া উচিত যাতে ভবিষ্যতে আর কোন পুলিশ সদস্য এই ধরনের অনৈতিক কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকে।’