আলোচিত চিত্রনায়িকা পরী মনির দায়ের করা ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টা মামলার তদন্তে সর্বশেষ অবস্থা নিয়ে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে। সাভার মডেল থানায় দায়েরকৃত এই মামলার তদন্ত করছে পুলিশ। তদন্তকারী কর্মকর্তা দাবি করছেন, তদন্তে অগ্রগতি হয়েছে, আরো তদন্ত চলছে। তবে মামলার প্রধান দুই আসামি আটকের পর থেকেই রয়েছেন ঢাকার ডিবি অফিসে। সাভার পুলিশ বাদী এবং আসামিদের সঙ্গে এখনো কথা বলার সুযোগই পায়নি!
আরও পড়ুনঃ চিত্রনায়িকা পরীমণির নিরাপত্তায় পুলিশ মোতায়েন
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ মাদক মামলায় গ্রেপ্তারকৃত দুজনকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। তারা পরী মনির সঙ্গেও কথা বলেছে। রিমান্ডে ডিবির জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বাদী-বিবাদীর সঙ্গে কথা বলবেন সাভার থানার তদন্ত কর্মকর্তা। তবে পরী মনির মামলার অজ্ঞাতনামা আসামিরা এখনো শনাক্ত এবং আটক হয়নি বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, বিরুলিয়ায় ঢাকা বোট ক্লাবে চিত্রনায়িকা পরী মনিকাণ্ডের পর সাভার মডেল থানায় মামলা দায়েরের সূত্রে পুলিশ বাদী হয়ে আরো দুটি মামলা দায়ের করেছে ঢাকা দুই থানায়। এর মধ্যে নাসির ইউ মাহমুদ ও তুহিন সিদ্দিকী অমিকে আটকের সময় ওই ফ্ল্যাট থেকে মদ ও ইয়াবা উদ্ধারের ঘটনায় ডিবি পুলিশ উপরিদর্শক মানিক কুমার সিকদার বাদী হয়ে বিমানবন্দর থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। ডিবির পরিদর্শক উদয় কুমার মণ্ডল এর তদন্ত কর্মকর্তা। আবার পরী মনির মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সাভার মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) কামাল হোসেন অমির জনশক্তি রপ্তানির অফিসে অভিযান চালিয়ে মানবপাচার আইনে একটি মামলা দায়ের করেছেন।
আরও পড়ুনঃ পরীমনির মামলায় নাসিরসহ ৫ জনকে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন
আব্দুল কাদের নামে এক ব্যক্তি গত বৃহস্পতিবার থানায় করা অভিযোগে উল্লেখ করে বলেন, অমি ছাড়াও জসিম মাস্টার, সালাউদ্দিন, মোস্তফা ও পারভেজ তার দুই আত্মীয়কে বিদেশে পাঠানো কথা বলে পাচার করেছেন। সিআইডি পুলিশ এই মামলার তদন্ত করছে। অবশ্য মাদক মামলায় ঢাকার মিন্টো রোডে ডিবি অফিসে ৭ দিনের রিমান্ডে আছেন নাসির ও অমি। গতকাল শনিবার ছিল রিমান্ডের ৫ম দিন। তাদের আইনজীবীরা বলছেন, পরী মনির মামলায় অনেক অসঙ্গতি রয়েছে। অনেক প্রশ্নের উত্তর জানতে আদালতের অনুমতি পেলে তাকে জেরা করা হবে। মামলার তদন্ত নিষ্পত্তি করতে তদন্তকারী কর্মকর্তারও অনেক প্রশ্নের উত্তর জানা প্রয়োজন।
আরও পড়ুনঃ পরীমণির ঘটনার বিষয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রতিবেদন
পরী মনির মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সাভার মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) কামাল হোসেন গতকাল শনিবার বিকালে এ প্রতিবেদককে বলেন, মামলার আসামিরা অন্য মামলায় ডিবি হেফাজতে রিমান্ডে আছেন। ওই রিমান্ড শেষে তাদের পরী মনির মামলায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মামলার তদন্ত চলছে, এতে অগ্রগতি আছে। তদন্তের প্রয়োজনে তিনি বাদীর সঙ্গে কথা বলবেন। এখনো কথা বলেননি বলে জানান।
আরও পড়ুনঃ সংসদে পরীমনিকে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি
জানা গেছে, ঘটনার ৫ দিন পর ১৪ জুন সাভার মডেল থানায় মামলা দায়েরের পর সাভার পুলিশের অনুরোধে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উত্তর জোন অভিযান চালিয়ে ওই দিনই প্রধান দুই আসামি নাসির ও তুহিনকে গ্রেপ্তার করে। তাদের সঙ্গে তিন তরুণী আটক হয়েছে বলে ডিবি পুলিশ দাবি করছে। তবে আটকের পর থেকেই প্রধান দুই আসামিসহ ৫ জন মিন্টো রোডে ডিবি অফিসে তাদের হেফাজতে রয়েছেন। পরী মনির মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তাদের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পাননি।
আবার মামলা রেকর্ডের পরদিন ১৫ জুন বিকালে পরী মনি মিন্টো রোডে ডিবি অফিসে গিয়ে খোশ মেজাজে প্রেসব্রিফিং করলেও তার মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে দেখা যায়নি। সেখানে ঢাকা মহানগর ডিবি (উত্তর) কর্মকর্তাদের দেখা গেছে। তারাই তার সঙ্গে কথা বলেছেন। পরী মনি পুলিশকে ধন্যবাদ দিয়ে বলেছেন, ‘পুলিশ ম্যাজিকের মতো কাজ করেছে’।
আরও পড়ুনঃ পরীমণির অভিযোগ বিষয়ে মিলছে না কিছু প্রশ্নের উত্তর
পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা জানান, পরী মনির মামলার তদন্ত পদস্থ কর্মকর্তারা তদারকি করছেন। এর মধ্যে গুলশানের অল কমিউনিটি ক্লাবকাণ্ডসহ আরো অনেক কিছু জড়িয়ে গেছে। ৯ জুন মধ্যরাতে বোট ক্লাবের ঘটনায় পরী মনি ও তার সঙ্গী জিমি এবং পরী মনির বোন বনির সাক্ষ্য নেবেন তদন্ত কর্মকর্তা। ঘটনাস্থল ঘুরে ক্লাবের অনেক স্টাফের সঙ্গে তদন্ত কর্মকর্তা কথা বলেছেন। ঘটনার রাতে উপস্থিত স্টাফদের বক্তব্য তিনি রেকর্ড করেছেন। পরী মনির মদপান, উত্তেজিত হওয়া, নাসিরের সঙ্গে ধস্তাধস্তি এবং ব্লু লেভেল মদের বোতল নেয়া ছাড়াও ফ্যাশন ডিজাইনার জিমির কোলে চড়ে তার ক্লাব ত্যাগের বিষয়টি যাচাই করছে পুলিশ। তবে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ প্রমাণ করতে এখনো সাক্ষ্য পায়নি পুলিশ। এ জন্য তারা পরী মনি ও তার সঙ্গীদের বক্তব্য শুনবে। মাদক মামলায় রিমান্ড শেষে নাসির ও অমিকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে জানা গেছে।
গত ৯ জুন রাতে বিরুলিয়ার কাকাবর বেড়িবাঁধে ঢাকা বোট ক্লাবে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলা করেছেন পরী মনি। এ ঘটনায় মামলার আসামি দুই ব্যবসায়ী নাসির ইউ মাহমুদ ও তুহিন সিদ্দিকী অমি গ্রেপ্তার হলেও অজ্ঞাতনামা আসামিরা অধরা রয়েছে। সূত্রঃ ভোরের কাগজ