এর আগে গত শনিবার রাত ১২টার পর নিহত মাসুদ রানার বড় ভাই শাখাওয়াত হোসেন কদমতলী থানায় মাহজামিন ও শফিকুলকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন।
আরও পড়ুনঃ মা-বাবা ও বোনকে হত্যা ঘটনায় মেহজাবিন ও তার স্বামীর বিরুদ্ধে মামলা
আদালত সূত্রে জানা যায়, রোববার ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম (সিএমএম) আদালতে মেহজাবিনকে হাজির করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কদমতলী থানার পরিদর্শক (অপারেশন) জাকির হোসেন। শুনানি শেষে মহানগর হাকিম দেবব্রত বিশ্বাস চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এ ছাড়াও মেহজাবিন ও তার স্বামী শফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ৩১ আগস্ট দিন ধার্য করেছেন আদালত।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, হত্যাকাণ্ডের পর মেহজাবিন নিজেই ৯৯৯ নম্বরে কল করে পুলিশকে জানিয়েছিল। পরে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ক্ষোভ থেকে পরিকল্পিতভাবে বাবা-মা আর বোনকে হত্যা করেছে বলে স্বীকার করেছে। ক্ষোভ ছাড়া আরো কোনো কারণ আছে কি-না সেগুলো রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এ ছাড়া নিহতদের স্বজন ও প্রতিবেশীরা আরো অভিযোগ করেছেন- সেগুলোও খতিয়ে দেখা হবে।
মেহজাবিনের খালা মোছা: ইয়াসমিন সাংবাদিকদের বলেন, শফিকুল ও মেহজাবিনের বিয়ের কিছু দিন পরই মেহজাবিনের আগের সম্পর্ক নিয়ে দাম্পত্য কলহের সৃষ্টি হয়। বিয়ের ছয় মাসের মাথায় আমিনকে হত্যা করেন শফিকুল। এর আগে তিনি শাশুড়ি মৌসুমী ও খালাশাশুড়ি শিউলিকে দিয়ে আমিনকে ডেকে নেন। এ কারণে হত্যা মামলায় ওই দু’জন ও মেহজাবিনকে আসামি করা হয়।
হত্যা মামলায় গ্রেফতার হয়ে ছয় মাস কারাগারে থাকার পর জামিন পান শফিকুল। পরে মেহজাবিনের ছোট বোনের ওপর নজর পড়ে তার। বিভিন্নভাবে উত্ত্যক্ত করতে থাকেন। বিষয়টি নিয়ে একপর্যায়ে জামাতার বিরুদ্ধে মামলা করেন মৌসুমী। আবার তার বিরুদ্ধে পাল্টা মামলা করেন শফিকুল। এ ছাড়া ছোট বোন জান্নাতুলকে প্রায় ১০ মাস নিজের বাসায় আটকে রাখেন মাহজাবিন। একপর্যায়ে মেয়েটি পালিয়ে তার মায়ের কাছে চলে যায়। এ দিকে তাকে বিয়ে করার জন্য শ্বশুর-শাশুড়িকে চাপ দিতে থাকেন শফিকুল। তিনি প্রায়ই হুমকি দিতেন- ‘একটা মার্ডার তো করছি, কিছু হয় নাই। লাগলে আরো দুইটা করব।’
তিনি অভিযোগ করে বলেন, পরিকল্পিতভাবেই শফিকুল এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন। এ ঘটনায় তিনি স্ত্রীকে জিম্মি করে হত্যায় সহায়তা করতে বাধ্য করেছেন। নইলে তাদের শিশুসন্তান তৃপ্তিকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছেন। একা তিনজনকে হত্যা করা সম্ভব নয় বলেই তিনি মেহজাবিনকে কাজে লাগিয়েছেন। তাকে বোঝানো হয়েছে, চলমান অশান্তি নিরসনে এটাই কার্যকর পন্থা। আর ঘটনার পর তিনি মেহজাবিনকে বুঝিয়েছেন, ‘তুমি পুলিশে ফোন করে হত্যার দায় স্বীকার করো। কয়েক দিন পর আমি তোমার জামিনের ব্যবস্থা করব বলে দাবি করেন এই স্বজন।
আরও পড়ুনঃ হত্যার পর মেহজাবিন নিজেই ফোন দেন পুলিশকে
কদমতলী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জামাল উদ্দীন মীর বলেন, মেহজামিন ছাড়াও তার স্বামী শফিকুলকে থানায় আনা হয়েছে। তাকেও হত্যাকাণ্ডের কারণ নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। উভয়ের কাছে পাওয়া তথ্য যাচাই করা হবে।
এ বিষয়ে পুলিশের ওয়ারী বিভাগের ডিসি শাহ ইফতেখার জানান, হত্যাকাণ্ডের পর শনিবার মেহজাবিনকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে ক্ষোভ থেকে সবাইকে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন। রোববার অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। সম্ভাব্য সব বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
ঢাকা মেডিক্যাল সূত্র জানায়, রোববার নিহত তিনজনের লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। এ ছাড়া মাহজামিন ও শফিকুল দম্পতির শিশুসন্তান তৃপ্তি ঢামেকের ২১০ নম্বর শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছে। তার অবস্থা আশাঙ্কামুক্ত।
এর আগে মেহজাবিন মুন জানিয়েছিলেন, মা তাদের দুই বোনকে দিয়ে দেহ ব্যবসা করাত এমন অভিযোগ করেছে সে। বিষয়টি বাবাকে জানালেও তিনি নিশ্চুপ ছিলেন। এ কারণে বাবা-মায়ের ওপর ক্ষোভ থেকে পরিকল্পিতভাবে সবাইকে হত্যা করেছেন বলে প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদে মেহজাবিন পুলিশকে জানিয়েছেন।