করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় দিনাজপুর সদর উপজেলায় চলমান কঠোর লকডাউন দ্বিতীয় দফায় আরো ৭ দিন বৃদ্ধি করা হয়েছে। আগামী ২৮ জুন রাত ১২টা পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে এই লকডাউন।
দিনাজপুর সদরে গত সাতদিনে করোনা শনাক্ত হয়েছে ৪৫৩ জন। শনাক্তের হার ৫৪ দশমিক ৮৫ শতাংশ। এই সময়ে করোনায় মৃত্যু হয়েছে ৮ জনের। আর করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু হয়েছে ১৫ জনের।
এদিকে, গত ২৪ ঘণ্টায় দিনাজপুর সদরে ১২০ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৬৮ জন করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে, যা শতকরা ৫৬.৬৭ শতাংশ। অপরদিকে, লকডাউনের মাঝে দিনাজপুরে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আরও ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এনিয়ে জেলায় মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়ালো ১৫৩ জনে। একই সময়ে জেলায় ২৫২টি নমুনা পরীক্ষায় ১২৩ জনের করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে, শনাক্তের হার ৪৮.৮০ শতাংশ।
বর্তমানে জেলায় করোনায় আক্রান্ত ১০৬৪ জন। তবে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা আক্রান্ত ৩১ জন রোগী সুস্থ হয়েছেন। বর্তমানে হোম আইসোলেশনে ১০০৭ জন, হাসপাতালে উপসর্গযুক্ত সন্দেহভাজন রোগী ৫২ জন এবং করোনায় ভর্তি রয়েছেন ১০৯ জন। দিনাজপুরের সিভিল সার্জন কার্যালয় এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।
দিনাজপুর সদর উপজেলায় কঠোর লকডাউনে প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে রাস্তায় ঘোরাঘুরি করছে মানুষ। তবে চলাচল সীমিত করতে শহরের বিভিন্ন সড়কে বাঁশ বেঁধে দিয়ে গতিরোধ করা হয়েছে। পাশাপাশি শহরের বিভিন্ন স্থানে বসেছে পুলিশের চৌকি। আরও কড়াকড়ি করা হচ্ছে বলে জানায় সিভিল সার্জন।
জেলা সিভিল সার্জন ডা. আব্দুল কুদ্দুছ জানান, রবিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় দিনাজপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির জরুরি সভায় এই লকডাউন আরো ৭ দিন বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সভা রাত সাড়ে ১০টায় শেষ হয়।
এর আগে, জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির এক জরুরি বৈঠকে প্রথম দফায় গত ১৫ জুন থেকে ২১ জুন রাত ১২টা পর্যন্ত দিনাজপুর সদর উপজেলায় ৭ দিনের লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছিল।
সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগের মতো আজ ২২ জুন সকাল ৬টা থেকে ২৮ জুন রাত ১২টা পর্যন্ত সদর উপজেলায় কঠোর লকডাউন বলবৎ থাকবে। লকডাউনে সদর উপজেলায় সব ধরনের দোকানপাট, ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাসহ সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে। তবে শহরে অ্যাম্বুলেন্স ও জরুরি সেবায় নিয়োজিত যানবাহন চলাচল করবে। এছাড়া কাঁচাবাজার ও মুদিখানা সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত আগের মতই খোলা থাকবে। খোলা থাকবে ওষুধের দোকানও।
জেলা প্রশাসক ও করোনা প্রতিরোধ কমিটির আহ্বায়ক খালেদ মোহাম্মদ জাকীর সভাপতিত্বে সভায় দিনাজপুর সিভিল সার্জন ও জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সদস্য সচিব ডা. মো. আব্দুল কুদ্দুছ, জেলা বিএমএ’র সাধারণ সম্পাদক ডা. বিকে বোসসহ কমিটির অন্যান্য সদস্য উপস্থিত ছিলেন।
দিনাজপুর সার্জন অফিসের তথ্যানুযায়ী, চলতি ১ জুন থেকে ২০ জুন পর্যন্ত ২০ দিনে জেলায় ১৫৪৫ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এই ২০ দিনে করোনায় আক্রান্ত হয়ে ২৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া গত ৭ দিনে জেলায় নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ১৭২৯টি। এর মধ্যে করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে ৬৭২ জন। শনাক্তের হার ছিল ৩৮ দশমিক ৮৬ শতাংশ। আরটি পিসিআর টেস্ট হয়েছে ১৫১১টি। এতে শনাক্ত হয়েছে ৫৮৭ জন। আরটি পিসিআর টেস্টে শনাক্তের হার ৩৮ দশমিক ৮৪ শতাংশ। র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট হয়েছে ২১৮টি, শনাক্ত হয়েছে ৮৫ জন। র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্টে শনাক্তের হার ৩৮ দশমিক ৯৯ শতাংশ। এ সময়ে করোনায় মৃত্যু হয়েছে ১৩ জন এবং করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন ১৯ জন।
উল্লেখ্য, সোমবার করোনা আক্রান্ত ১২৩ জনসহ দিনাজপুর জেলায় এখন পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ৭০৬৬ জন, ৩১ জনসহ জেলায় এখন পর্যন্ত সুস্থ ৫৮৪৯ জন। এ পর্যন্ত জেলায় মৃত্যু হয়েছে ১৫৩ জন। বর্তমানে ১০৬৪ জন হোম আইসোলেশনে এবং হাসপাতালে ভর্তি ১০৯ জন রয়েছে। বর্তমানে দিনাজপুর জেলায় করোনা পজিটিভ রোগীর সংখ্যা ১০০৭ জন এবং শনাক্তের হার ৪৮.৮০ শতাংশ।