বিভিন্ন অবৈধ ব্যবসার মাধ্যমে সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য তিন সংসদ সদস্যসহ ছয়জনের দেশত্যাগের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন আদালত। তারা হলেন—চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনের সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের হুইপ সামশুল হক চৌধুরী, সুনামগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন, ভোলা-৩ আসনের সংসদ সদস্য নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম প্রধান প্রকৌশলী সাজ্জাদুল ইসলাম, সাবেক অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. আব্দুল হাই এবং ঢাকা ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের কর্মচারী আবুল কালাম আজাদ।
সোমবার (২১ জুন) রাতে দুদকের কোর্ট ইন্সপেক্টর আমিনুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
অনুসন্ধান চলাকালে এই ব্যক্তিরা বিদেশে পালিয়ে যেতে পারেন বলে গত ৭ জুন নিষেধাজ্ঞা জারির জন্য আদালতে আবেদন করেন দুদকের অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা। এর পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ ও মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতের হাকিম কে এম ইমরুল কায়েশ ৮ জুন এই ছয়জনের বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন।
এর আগে ২০১৯ সালের ২৩ অক্টোবর পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) ইমিগ্রেশন বিভাগ বরাবর পাঠানো চিঠিতে এ ছয়জনসহ ২২ জনের বিরুদ্ধে বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা আরোপের অনুরোধ জানিয়েছিল দুদক। তবে সম্প্রতি হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুসরণ করে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞায় নিম্ন আদালতের অনুমতি নিতে হচ্ছে সংস্থাটিকে। এরই ধারাবাহিকতায় দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ওই ছয়জনের বিরুদ্ধে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিলেন আদালত।
দুদকের পরিচালক এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অনুসন্ধানদলের প্রধান সৈয়দ ইকবাল হোসেন গতকাল সোমবার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এর আগে ক্যাসিনোকাণ্ডের তথ্য প্রকাশের পর দুদক সামশুল হক চৌধুরীসহ বেশ কয়েকজনের ক্ষেত্রে বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। সেই নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে হাইকোর্টের নির্দেশনা আসে যে এ ধরনের নিষেধাজ্ঞায় আদালতের অনুমতি নিতে হবে। হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুসারেই সামশুল হক চৌধুরীসহ ছয়জনের ক্ষেত্রে বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞার জন্য আদালতের আদেশের আবেদন করা হয় এবং আদালত তা মঞ্জুর করেছেন।’ তিনি আরো বলেন, ‘হুইপ সামশুল হকের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অনুসন্ধানও চলছে। এ ব্যাপারে একটি টিম কাজ করছে।’ তিনি বলেন, যাঁদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, তাঁদের বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে পৃথক আবেদন করা হয়েছে।
নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে হুইপ সামশুল হক ও সংসদ সদস্য শাওনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁরা ফোন ধরেননি। তবে সুনামগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ‘আদালতের আদেশের ব্যাপারে আমি এখনো কিছু জানি না।’
আদালতের আদেশে বলা হয়েছে, অভিযোগসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সরকারি কর্মকর্তাদের শত শত কোটি টাকা ঘুষ দিয়ে বড় বড় ঠিকাদারি কাজ নিয়ে অনিয়ম করে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ, ক্যাসিনো ব্যবসা করে শত শত কোটি টাকা অবৈধ প্রক্রিয়ায় অর্জন করে বিদেশে পাচার এবং জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন সংক্রান্ত অভিযোগের অনুসন্ধান চলমান রয়েছে। অনুসন্ধানকালে প্রাপ্ত তথ্য-প্রমাণে অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা প্রমাণিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে মর্মে অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা তাঁর আবেদনে উল্লেখ করেন। অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা গোপন সূত্রে জানতে পেরেছেন, সংশ্লিষ্ট অভিযুক্ত ব্যক্তিরা (সামশুলসহ ছয়জন) দেশ ত্যাগ করে অন্য দেশে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। এতে ‘অনুসন্ধান কার্যক্রম দীর্ঘায়িত বা ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে’ বলে আদালতের কাছে প্রতীয়মান হয়েছে।
পুলিশ সূত্র জানায়, আদালতের নির্দেশনা এরই মধ্যে ইমিগ্রেশন পুলিশের কাছে পৌঁছেছে। নির্দেশনা অনুযায়ী নজরদারি করবে সংশ্লিষ্ট শাখা।