চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) ব্যাবসায় প্রশাসন অনুষদের নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। চাঁদা না পেয়ে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা এই নির্মাণ কাজ বন্ধ করে। এর আগে কাজে নিয়োজিত শ্রমিকদের মারধর করার অভিযোগ ছিল তাদের বিরুদ্ধে।
মঙ্গলবার সকালে শ্রমিকরা কাজ করতে গেলে তাদের হুমকি দিয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এর আগে রাতে নির্মাণসমগ্রী নষ্ট করে দেয় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি দিয়েছেন ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ডিন এস এম সালামত উল্ল্যা ভূঁইয়া। চিঠিতে তিনি বলেছেন, আজ (মঙ্গলবার) থেকে আগামী দুই সপ্তাহ পর্যন্ত অনুষদে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়োগ করা না হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পত্তি ও জানমালের ক্ষতি হওয়ার যথেষ্ট আশঙ্কা রয়েছে।
এতে আরও বলা হয়েছে, সোমবার রাতে ৪০০ সিমেন্টের বস্তা কেটে তাতে পানি ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে। জেনারেটরের বেল্ট কাটা হয়েছে। মটর খুলে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে। ইলেকট্রিক পাইপ খুলে ফেলা হয়েছে। ঢালাইয়ের জন্য প্রস্তুত রডে রং ঢেলে নষ্ট করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ক্যান্টিন নির্মাণ কাজ চলছে দুই মাস ধরে। পাশাপাশি সৌন্দর্য বর্ধনের ও সংস্কারকাজ চলছে। কাজ শুরু হওয়ার পর থেকেই শ্রমিকদের মারধর ও বাঁধা দেওয়ার ঘটনা ঘটে আসছে। সোমবার রাতে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা অনুষদে ঢুকে নিরাপত্তাপ্রহরীদের কাছ থেকে মোবাইল ফোন কেড়ে নেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক নিরাপত্তাকর্মী গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ওরা প্রয় ১০০ জন আসে। প্রথমে আমাদের গলায় ছুরি ধরে মোবাইল ফোন নিয়ে নেয়। কাউকে ডাকার চেষ্টা করা হলে গলা কেটে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়। এরপর অনুষদের ভেতরে ১০ থেকে ১৫ জন ঢুকে নির্মানসমগ্রী নষ্ট করে বেরিয়ে যায়। যাওয়ার সময় ফোন ফেরত দিয়ে যায়।’
এর আগে শনিবার সন্ধ্যায় সৌন্দর্যবর্ধণ কাজে নিয়জিত ৪ শ্রমিককে মারধর করে ছাত্রলীগ। শ্রমিক সরবরাহকারী মো. সোহেল বলেন, ‘দুই মাস ধরে কাজ করছি। একদম অল্প টাকার কাজ। তবে প্রথম থেকেই একজন উপমন্ত্রী ও চট্টগ্রাম সিটির একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতার নাম বলে চাঁদা দাবি করে আসছিল কয়েকজন। তাদের নাম জানি না, তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতি করে বলে তারা জানিয়েছে। গত ২২ তারিখও তারা শ্রমিকদের চলে যাওয়ার জন্য হুমকি দিয়েছিল। এরপর আমরা দুইদিন কাজ বন্ধ রেখেছিলাম। এখন আর ওখানে কাজ করতে চাই না।’
ছাত্রলীগের একটি সূত্র জানায়, এই কাজে মূলত বাধা দিচ্ছে ভার্সিটি এক্সপ্রেস (ভিএক্স), বাংলার মুখ (বিএম) ও বিজয় উপলক্ষের একাংশের নেতাকর্মীরা। কারণ এই কাজের জন্য ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক রুবেল ও সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন টিপুকে ‘ম্যানেজ’ করা হয়েছে। তবে তারা অন্য পক্ষগুলোর সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করেনি। তাই তারা বাঁধা দিয়ে আসছিলেন।
সূত্র আরও জানায়, শনিবার ও সোমবার মূলত এই পক্ষগুলো তাণ্ডব চালিয়েছে। এর আগে শনিবার শ্রমিক মারধরের ঘটনায় ভিএক্স নেতা প্রদীপ চক্রবর্তী দুর্জয় সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘ওখানে নিম্নমানের কাজ হচ্ছিল। বিষয়টি দেখে জুনিয়ররা কাজ বন্ধ রাখার দাবি জানায়। তবে সেখানে মারধরের ঘটনা ঘটেনি বলে শুনেছি।’
নির্মাণসমগ্রী নষ্ট করার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এই ঘটনার সঙ্গে আমাদের কোনো নেতাকর্মীর সংশ্লিষ্টতা নেই। আমি কিছু জানিও না।’
শ্রমিক মারধরের ঘটনায় একই বক্তব্য ছিল বিএম নেতা আবুবক্কর ত্বোহার। তবে নির্মাণসমগ্রী নষ্টের বিষয়ে জানতে কল করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
বিজয় পক্ষের নেতা মো. আল-আমীন শেখ বলেন, ‘আমাদের কোনো নেতাকর্মী এসবের সঙ্গে জড়িত নয়। বিজয়ের নাম ভাঙিয়ে যদি কেউ কোনো অপকর্ম করে তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উচিত হবে তাদের চিহ্নত করে শাস্তির আওতায় আনা।’
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক রুবেল বলেন, ‘এসব কারা করেছে তা আমি জানি না। তবে যারাই বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পদ নষ্ট করুক না কেন তাদের বিচার হওয়া উচিত।’
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন টিপু বলেন, ‘ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের কাজ হচ্ছে। সেখানে ছাত্রদের তো কোনো বিষয় নেই। ছাত্রলীগেরও কোনো কাজ নেই। যদি ছাত্রলীগের নাম ভাঙিয়ে কেউ কিছু করে তাহলে প্রশাসনের উচিত হবে তাদের খুঁজে বের করা। আমাদের কারো সংশ্লিষ্টতা থাকলে আমরা ব্যবস্থা নেব।’
ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ডিন সালামত উল্ল্যা ভূঁইয়া বলেন, ‘আমি কাজের নিরাপত্তা দিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে চিঠি দিয়েছি। নিরাপত্তা দিলে কাজ হবে, না দিলে বন্ধ থাকবে।’
নির্মাণসমগ্রী নষ্ট করার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এসব যারা করেছে তারা ছাত্র হলে ছাত্র, সন্ত্রাসী হলে সন্ত্রাসী। তাদের সঙ্গে তো আমি লড়তে যাব না। কে বা কারা করেছে তা কর্তৃপক্ষ খুঁজে বের করুক।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর রবিউল ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে। অপরাধীদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনা হবে।’ সুত্রঃ সমকাল।