কুষ্টিয়ার ডেডিকেটেড করোনা হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরো ২০ জন করোনা রোগী মৃত্যু বরণ করেছে। রবিবার সকাল ৮ টা থেকে আজ সোমবার সকাল ৮ টা পর্যন্ত শেষ ২৪ ঘণ্টায় তাদের মৃত্যু হয়েছে বলে হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার নিশ্চিত করে বলেছেন, এদের মধ্যে ১৭ জন করোনা আক্রান্ত ছিলেন এবং ৩ জন করোনা উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন।
এর আগের ২৪ ঘণ্টায় এই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ১৯ রোগীর মৃত্য হয়েছিল। এনিয়ে গত ৪৮ ঘণ্টায় কুষ্টিয়ায় হাসপাতালে ৩৯ জন করোনা রোগী প্রাণ হারায়। আর কঠোর লকডাউনের গত ১৫ দিনে কুষ্টিয়ায় প্রাণ হারান ১২২ জন এবং আক্রান্ত হন ২ হাজার ৫শ ৪৪ জন।
সরেজমিনে আজ হাসপাতালে গিয়ে দেখাযায়, ডেডিকেটেড করোনা হাসপাতাল হিসেবে ঘোষিত কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের দোতলার সবগুলো ওয়ার্ডে করোনা রোগীতে ঠাসা। শয্যা না পেয়ে মেঝে ও বারান্দায় ঠাসাঠাসি করে রোগীর স্বজনরা সেখানেই শয্যা করেছেন। এদিকে হাসপাতালটিতে অক্সিজেনের চরম সংকট চলছে। পর্যাপ্ত সংখ্যাক সিলিন্ডার না থাকায় অনেক রোগীকে বাইরে থেকে বেশি দামে সিলিন্ডার কিনতে হচ্ছে। প্রতিদিন যশোর থেকে সিলিন্ডার রিফিল করে আনতে হচ্ছে। এতে অনেক সময় রোগীদের দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। এঅবস্থায় রোগীর স্বজনরা অক্সিজেনের জন্যে বিভিন্ন স্থানে দৌঁড়াদৌঁড়ি করছেন। কেউবা শেষ হওয়া সিলিন্ডার রিফিল করার জন্যে ভলেন্টিয়ারদের অনুরোধ করছেন।
জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ হাফিজ শেখ চ্যালেঞ্জের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের শতাধিক সেচ্ছাসেবক সেখানে নিয়মিত কাজ করছেন। তিনি জানান, বিরামহীণ ভাবে আমাদের ছেলেরা রোগীদের ভর্তি, অক্সিজেন সরবরাহসহ সব সহযোগিতা দিচ্ছে। পাশাপাশি রোটারি ক্লাবের সংগঠক তুষার রতনের নেতৃত্বে আরো একটি স্বেচ্ছাসেবক দল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ও হোম আইসোলেশনে থাকা রোগীদের নানান ভাবে সহায়তা করছেন। রতন বলেন, আমরা হাসপাতালে ভর্তি ও বাড়িতে থাকা মুমুর্ষ রোগীদের জন্যেই বিনামুল্যে যখন যা প্রয়োজন সেইসব সহায়তা দিচ্ছি।
২৫০ শয্যার এই হাসপাতালে সোমবারও প্রায় ৩শ করোনা রোগী ভর্তি রয়েছেন। এখানে ৪ শয্যার আইসিইউর পাশাপশি ১০ শয্যার হাই ফ্লু ন্যাজাল ক্যানুলা রয়েছে। সেখানে পর্যায়ক্রমে মুমুর্ষ রোগীদের অক্সিজেন সহায়তা দেয়া হচ্ছে এবং বেশির ভাগই সাধারণ সিলিন্ডারে অক্সিজেন সহায়তা নিচ্ছেন। গত রবিবার একটি ওয়ার্ডে ৩০টি বেডে সেন্ট্রাল অক্সিজেন চালু করা হয়েছে। আরো একটি ওয়ার্ডে সেন্ট্রাল অক্সিজেন চালুর চেষ্টা করছে কর্তৃপক্ষ।
কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার তাপস কুমার সরকার বলেন, ২৫০ বেডের বিপরীতে আমার এখানে বর্তমানে রোগী ভর্তি আছে প্রায় ৩০০জন। আমরা সাধ্যমত সেবা দিয়ে যাচ্ছি। তবে অক্সিজেনের সংকট রয়েছে। স্থানীয় সাংসদ ও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ হাসপাতালে বেশকিছু সিলিন্ডার সরবরাহ করছেন। এতে করে সংকট কিছূটা লাঘব হয়েছে। তবে রোগী বাড়ায় সংকট মিটছে না। সেন্ট্রাল অক্সিজেন চালু করা হচ্ছে। আশা করছি সংকট কেটে যাবে।
অন্যদিকে ১৩ দিন বন্ধ থাকার পর গতকাল থেকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আউটডোর সেবা কার্যক্রম পাশের বেসরকারি মজিবুর রহমান ডায়াবেটিক হাসপাতালে শুরু হয়েছে। কুষ্টিয়ার সিভিল সার্জন ডা. আনোয়ারুল ইসলাম জানান, নন কভিড রোগীরা করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত এখান থেকে হাসপাতালের সেবা পাবেন।
এদিকে কুষ্টিয়া জেলা জুড়ে কঠোর লকডাউনের ১৫তম দিনেও সোমবারও মানুষজনকে অবাধে চলাচল করতে দেখা গেছে। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় কুষ্টিয়া ডেডিকেটেড করোনা হাসপাতালে ৮৮৫ টি নমুনা পরীক্ষায় রোগী শনাক্ত হয়েছে ২৯২ জন। এদিকে শুরু থেকে এপর্যন্ত ২৬৯ রোগীর মৃত্যু হয়েছে। আর আক্রান্ত হয়েছে ৮ হাজার ৭শ ৬৬ জন। সুস্থ্য হয়েছেন ৫ হাজার ৮শ ২৩ জন। সূত্রঃ কালের কন্ঠ।