দেশের অন্যতম বৃহত্তম বিদ্যাপীঠ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ (৬ জুলাই)। ১৯৫৩ সালে প্রতিষ্ঠার পর নানা চড়াই-উৎরাই ও আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টি ৬৯ বছরে পদার্পণ করেছে।
দীর্ঘ পথচলায় নিজস্ব আলোয় আলোকিত শ্রেষ্ঠ এ বিদ্যাপীঠ দেশের সীমানা ছাড়িয়ে গৌরব ও ঐতিহ্যে বিশ্বময় উদ্ভাসিত আজ। প্রতিষ্ঠাপূর্বকাল থেকে শুরু করে আজকের এ অবস্থানে আসতে দীর্ঘ কণ্টকময় পথ পাড়ি দিতে হয়েছে এ বিশ্ববিদ্যালয়কে। ভাষা আন্দোলনের কিছুদিন আগ থেকে যে পথের যাত্রা শুরু।
১৯৫০ সালের ১৫ নভেম্বর রাজশাহীতে বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ স্থাপনের জন্য রাজশাহীর বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে ৬৪ সদস্য বিশিষ্ট এক কমিটি গঠন করা হয়। এরপর ১৯৫২ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী শহরের ভুবন মোহন পার্কে এক জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৫২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি শহরের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা রাজশাহী কলেজ প্রাঙ্গনে সমবেত হয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ পাস করার দাবি তোলেন।
এক পর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি জানাতে গিয়ে কারারুদ্ধ হন ১৫ ছাত্রনেতা। একের পর এক আন্দালনের চাপে টনক নড়ে দেশের সুধি মহল ও সরকারের। অবশেষে ১৯৫৩ সালের ৩১ মার্চ প্রাদেশিক আইনসভায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা আইন পাশ হয়।
সে বছর ৬ জুলাই অধ্যাপক ইতরাত হোসেন জুবেরীকে উপাচার্য করে বিশ্ববিদ্যালয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে। এরপর থেকেই জ্ঞান-বিজ্ঞান ও বিদ্যাচর্চার খ্যাতিতে দেশের একটি শ্রেষ্ঠ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রূপ নেয় এ বিশ্ববিদ্যালয়। ধীরে ধীরে বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষাদান, বিদ্যাচর্চা, গবেষণা ও সুখ্যাতি দেশ পেরিয়ে বিস্তৃতি লাভ করে উপমহাদেশ, ইউরোপ ও আমেরিকাসহ বিশ্বের আনাচে-কানাচে। ৫ জন ছাত্রীসহ মোট ১৬১ জন শিক্ষার্থী নিয়ে যাত্রা শুরু করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।
বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩৮ হাজার ৩০০ জন শিক্ষার্থী রয়েছেন। যাদের মধ্যে ৫৮ জন বিদেশী শিক্ষার্থী। ১২টি অনুষদের ৫৮টি বিভাগে পাঠদান করা হচ্ছে এখন। এছাড়াও রয়েছে ছয়টি উচ্চতর গবেষণা ইনস্টিটিউট, ১৩টি একাডেমিক ভবন। ১৭টি আবাসিক হল, যার মধ্যে ১১টি ছাত্র ও ৬টি ছাত্রীহল এবং গবেষক ও বিদেশী শিক্ষার্থীদের জন্য একটি ডরমিটরি। বিশ্ববিদ্যালয়টির বর্তমানে শিক্ষক সংখ্যা ১২২১ জন, কর্মকর্তা রয়েছেন ৮০৫ জন, সাধারণ কর্মচারী এক হাজার ১২ জন ও সহায়ক কর্মচারী ৭১৪ জন।
প্রতিষ্ঠার গত ৬৮ বছরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২,৬৫০ জন শিক্ষার্থী উচ্চতর ডিগ্রি প্রদান করা হয়েছে। এর মধ্যে ১,৯৪৬ জনকে পিএইচডি এবং ৭০৪ জনকে এমফিল ডিগ্রি প্রদান করা হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা ও গবেষণায় অভাবনীয় সাক্ষর রেখে আসছে। যা বিশ্ববিদ্যালয়ের মানকে বিশ্ব দরবারে সমুন্নত করেছে।
সম্প্রতি হারিয়ে যাওয়া মসলিন গবেষণার মাধ্যমে পুনরুদ্ধার করে আলোচনায় এসেছিলেন উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মনজুর হোসেন। শীর্ষ এই অর্জন বিশ্ববিদ্যালয়ের মানকে আরও একধাপ এগিয়ে দিয়েছে। দেশের অন্যতম সেরা এ বিশ্ববিদ্যালয়কে আরও অত্যাধুনিক এবং শিক্ষা ও গবেষণার মান সামনের দিকে এগিয়ে নিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ৫০ বছর মেয়াদী মহাপরিকল্পনাকে সামনে রেখে কাজ করে যাচ্ছে। যার মধ্যে সাত পুকুর গবেষণা প্রকল্প, গবেষণা জালিয়াতি রোধে প্ল্যাগারিজম প্রকল্প, বিশ্ববিদ্যালয় আরকাইভস ও অনলাইনে তথ্য জমা রাখার জন্য ‘আরইউ ক্লাউড’, ব্র্যান্ডিং গিফট শপ, বিশ্ববিদ্যায়ের নিউজলেটার ‘বিদ্যাবার্তা’, বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যচিত্র, সৌন্দর্য্য বর্ধণ, ওয়েবসাইট আধুনিকীকরণ, ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স অফিস, ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট সেন্টার, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ভবনের নামকরণ। এছাড়াও একটি ২০ তলা আবাসিক ভবন, ছেলেদের ও মেয়েদের একটি করে ১০ তলা আবাসিক হল নির্মান এ প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা জানান, বর্তমানে শিক্ষা ও গবেষণায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অনেক বেশী উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। এছাড়াও চলমান প্রকল্পগুলো পুরোপুরি বাস্তবায়ন হলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় হবে দেশের সবচেয়ে অত্যাধুনিক ও মডেল বিশ্ববিদ্যালয়। সুদীর্ঘ ৬৮ বছর পেরিয়ে ৬৯ বছরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এ দেশকে দিয়েছে দিয়েছে বিশ্বের মাঝে অতুলনীয় খ্যাতি ও গৌরব। অর্জন করেছে অনেক দুর্লভ সম্মান। তৈরি করেছে দেশ-বিদেশে আন্তর্জাতিক খ্যাতিমান ও গবেষক। আজ যেমন দেশের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় থেকে দেশকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন ও সামনের দিকে এগিয়ে নিচ্ছেন, তেমনি বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় নিজেকে নেতৃস্থানে রেখে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করছেন এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীরা।