আগামী বৃহস্পতিবার থেকে ঈদ পর্যন্ত চলমান কঠোর বিধিনিষেধ শিথিল হতে পারে। দেশজুড়ে করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে না আসায় আগামী ২৩ জুলাই থেকে কঠোর লকডাউন আবার শুরু হবে।
কর্মহীন মানুষের জীবন-জীবিকার প্রয়োজনে ও ঈদে মানুষের গ্রামে যাতায়াতের সুবিধার জন্য এমন সিদ্ধান্ত নিতে পারে সরকার। কারণ, ঈদুল ফিতরে লকডাউন শিথিল না করার পরও স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে লাখ লাখ মানুষ ঢাকা ছাড়ে। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আসছে ঈদে ঘরমুখো মানুষের যাতায়াতের সুবিধার জন্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে যানবাহন চলাচলের অনুমতি দেওয়ার চিন্তা চলছে।
একই সঙ্গে শপিংমল, দোকানপাটসহ সবকিছু স্বাস্থ্যবিধি মেনে খোলা রাখা যাবে। এদিকে, কোরবানির পশু ক্রয়-বিক্রয় ও অফিস-আদালতের কার্যক্রম অনলাইনে চালানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সংশ্নিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
দেশের বর্তমান করোনা পরিস্থিতি পর্যালোচনার বিষয়ে গত শনিবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের উদ্যোগে অনলাইনে আন্তঃমন্ত্রণালয় ও মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নিয়ে সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামের সভাপতিত্বে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউসসহ সংশ্নিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার, পুলিশ মহাপরিদর্শক, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, প্রতিটি বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার ও ডিআইজিরা যুক্ত ছিলেন।
বৈঠকে করোনা পরিস্থিতির সার্বিক চিত্র নিয়ে আলোচনা হয়। এরপর কর্মহীন মানুষের জীবন-জীবিকার বিষয়ে ইতিবাচক চিন্তা করে চলমান কঠোর বিধিনিষেধ শিথিল করার বিষয়ে মতামত তুলে ধরা হয়। এ ছাড়া ঈদে ঘরমুখো মানুষ যেন স্বাভাবিকভাবে বাড়ি ফিরতে পারে, সে জন্য যানবাহন চলাচলের সুযোগ করে দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়। এ-সংক্রান্ত আলোচনার সারসংক্ষেপ গতকাল রোববার রাতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। আজ সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারসংক্ষেপ অনুমোদন করলে আগামী বুধবারের মধ্যে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি হতে পারে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (জেলা ও মাঠ প্রশাসন অনুবিভাগ) শেখ রফিকুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, চলমান বিধিনিষেধ ১৫ থেকে ২২ জুলাই পর্যন্ত শিথিল হতে পারে। এর ফলে গত ঈদের মতো চলাচলে এবার সমস্যা হবে না। এরপর ২৩ জুলাই থেকে লকডাউন আবারও কঠোর করা হবে। কীভাবে শিথিল হবে, এটা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি হবে। তখন বিস্তারিত জানা যাবে।
বৈঠকে যুক্ত থাকা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা ও সভায় পুলিশ পরিদর্শক ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, করোনার কারণে গত ঈদুল ফিতরের সময় তিন দিনের ছুটি দেওয়া হয়, যাতে মানুষ গ্রামমুখী না হতে পারে। সড়ক ও মহাসড়কে বাধা দেওয়া হলেও মানুষের চলাচল ঠেকানো যায়নি। তাই মানুষের নিরাপদ গমনাগমনের জন্য সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রয়োজন।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন,দোকান মালিক সমিতি যান চলাচল ও দোকানপাট, শপিংমল খোলার অনুমতির জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে যোগাযোগও করছে বলে সংশ্লিষ্ঠ সূত্র থেকে জানা যায়।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়তে থাকায় করোনাবিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে ১ জুলাই থেকে এক সপ্তাহের জন্য সারাদেশে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করে সরকার। করোনা সংক্রমণ ব্যাপকভাবে বেড়ে যাওয়ায় পরে তা আরও এক সপ্তাহ বাড়িয়ে ১৪ জুলাই মধ্যরাত পর্যন্ত করা হয়। কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনে ২১টি শর্ত দেওয়া হয়।