প্রানঘাতী করোনাভাইরাসে প্রান কেড়ে নেওয়ার সংখ্যা বাড়তেই আছে। বিশেষ করে ঈদুল আজহার পর থেকে আরও বেড়েই চলেছে মৃত্যু ও শনাক্তের হার। এই মহামারি থেকে পরিত্রান পেতে সরকার সার্বিক দিক থেকে নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে গেলেও কাঙ্ক্ষিত আশানুরুপ ফল পেতে ব্যর্থ। এই ব্যর্থতার কারণ গুলোর মধ্যে অন্যতম একটি কারণ, সংক্রমণ রোধে জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করতে না পারা।
করোনার সংক্রমণ রোধে সরকার সবশেষে যে পদক্ষেপ গ্রহণ করছে তা হলো ‘কঠোর বিধিনিষেধ’। এই কঠোর বিধিনিষেধ চলবে আগামী ৫ আগস্ট রাত ১২টা পর্যন্ত। কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যেও সংক্রমণ ও মৃত্যু কমার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। উপরন্তু কিছু কিছু জেলায় শনাক্ত ও মৃত্যুতে প্রায় প্রতিদিনই হচ্ছে নতুন রেকর্ড।
এই জেলা গুলোর মধ্যে বিশেষ কয়েকটি জেলা হচ্ছে-চট্টগ্রাম, রংপুর, পঞ্চগড়, লক্ষ্মীপুর, সিলেট ও পটুয়াখালী।
পটুয়াখালী জেলায় করোনা সংক্রমণ কয়েকদিন আগেও উদ্বেগজনক ছিল না। কিন্তু এখন পটুয়াখালীর পরিস্থিতি অন্যরকম। গত ২৪ ঘণ্টায় এই জেলায় ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে, যা একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড। এ ছাড়া সংক্রমণ শনাক্তে গত সপ্তাহে ১০০ ছাড়িয়েছে যা গত ১৬ মাসেও শনাক্ত হয়নি। এদিকে জেলার হাসপাতালগুলোতে বেড়েছে রোগীর চাপ।
পটুয়াখালীর মতই শনাক্ত ও মৃত্যুতে প্রায় প্রতিদিনই রেকর্ড হচ্ছে চট্টগ্রাম, সিলেট, রংপুর, লক্ষ্মীপুর ও পঞ্চগড় জেলায়। এসব জেলায় পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হারও বেশি। রোগী বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এসব জেলার হাসপাতাল গুলোতেও চিকিৎসা দিতে হিমসিম চলছে।
চট্টগ্রামে গত ২৪ ঘণ্টায় ৭৪২ করোনা শনাক্ত হয়েছে। এ ছাড়া করোনা ও উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু হয়েছে ৪ জনের। আগের দিনও ১ হাজার ৪৬৬ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এখন পর্যন্ত একদিনে সর্বোচ্চ শনাক্তের রেকর্ড এটি। পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ৩৭ শতাংশের বেশি।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার জেলায় সর্বোচ্চ ১ হাজার ৩১৫ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছিল। চট্টগ্রামে করোনা রোগীদের জন্য নির্ধারিত ৩৩টি আইসিইউর মধ্যে ২৮টিতেই রোগী ছিল।
সিলেট জেলায় করোনার জন্য নির্ধারিত ১৬টি আইসিইউর কোনোটিই ফাঁকা নেই। জেলার তিনটি হাসপাতালের ১৪৬টি সাধারণ শয্যার মধ্যে গতকাল ১২৭টিতেই রোগী ভর্তি ছিল। সিলেট বিভাগে সিলেট জেলা বাদে শুধু মৌলভীবাজারে ৬টি আইসিইউ রয়েছে। কিন্তু গত কয়েক দিনে রোগীর চাপ বাড়ায় এখন পুরো সিলেট বিভাগেই কোনো আইসিইউ ফাঁকা নেই।
গত ২৪ ঘণ্টায় রংপুর বিভাগে করোনা শনাক্ত হয়েছে ৯৫৪ জন। এটি এ পর্যন্ত বিভাগে একদিনে সর্বোচ্চ সংক্রমণ শনাক্তের রেকর্ড। এর আগে গত ২৫ জুলাই শনাক্ত ছিল ৯২০ জন। তাদের মধ্যে রংপুর জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় ২৭২ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে, যা জেলায় একদিনে সর্বোচ্চ শনাক্ত।
চট্টগ্রাম বিভাগের লক্ষ্মীপুর জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২২২ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এর আগে গত ২৮ জুলাই একদিনে সর্বোচ্চ ২০৫ জনের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছিল। লক্ষ্মীপুরে করোনা রোগীদের জন্য তিনটি আইসিইউ থাকলেও কোনোটিই ফাঁকা নেই।
পঞ্চগড়ে গত ২৪ ঘণ্টায় ১০৫ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এ ছাড়া করোনা ও উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু হয়েছে একজনের। পঞ্চগড় জেলাতেও আইসিইউ ও কেন্দ্রীয় অক্সিজেনের সুবিধা নেই। এই জেলায় করোনার সংক্রমণ ঊর্ধ্বগতি হচ্ছে প্রতিনিয়ত।