fbpx
বৃহস্পতিবার, ডিসেম্বর ১২, ২০২৪
বাড়িজাতীয়দেশে চলমান বিধিনিষেধ বাড়বে কিনা তার সিদ্ধান্ত আজ

দেশে চলমান বিধিনিষেধ বাড়বে কিনা তার সিদ্ধান্ত আজ

করোনা ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে চলমান বিধিনিষেধ বা লকডাউন আরও বাড়বে কিনা, তা জানা যাবে আজ মঙ্গলবার। লকডাউন বাড়ানোর বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সুপারিশ বিবেচনা ও পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা ডেকেছে সরকার। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের সভাপতিত্বে বেলা ১১টায় এ বিষয়ে জুম মিটিং হবে। এতে ১২ মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী, ১৬ সচিব, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার, পুলিশ মহাপরিদর্শক, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তা এবং আইইডিসিআর পরিচালকসহ

সংশ্লিষ্টরা অংশ নেবেন। আলোচনার মাধ্যমে তারাই লকডাউনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের উপসচিব (মাঠ প্রশাসন সমন্বয় অধিশাখা) মো. রেজাউল ইসলাম।

দুই-একটি সূত্র অবশ্য জানিয়েছে, হয়তো কিছু কিছু ক্ষেত্রে শিথিলতা আরোপ করে লকডাউন আরও সাত দিন বাড়ানো হতে পারে। অর্ধেক জনবল নিয়ে চালু হতে পারে সরকারি-বেসরকারি অফিসগুলো। এ ছাড়া গণপরিবহনও সীমিত পরিসরে চালানোর কথা ভাবা হচ্ছে। মার্কেট-শপিংমলসহ অন্যান্য দোকানপাটও শর্তসাপেক্ষে খোলার চিন্তা। কারণ সাধারণ মানুষ কোনোভাবেই আর লকডাউন চাচ্ছে না। জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন গত শনিবার এ বিষয়ে বলেছিলেন- ‘লকডাউন বাড়ানোর বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরামর্শ আমাদের মাথায় আছে। কারণ সব কিছুর সমন্বয় আমাদের করতে হবে। সে জন্য আমরা বলছি যে, একটু সময় নেব। ৩ বা ৪ আগস্ট এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।’

ঈদ উপলক্ষে ৯ দিন শিথিলের পর গত ২৩ জুলাই সকাল ৬টা থেকে ফের দেশে কঠোর লকডাউন চলছে, যা শেষ হবে আগামী বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে। এরই মধ্যে ব্যবসায়ীদের চাপের মুখে গত ১ আগস্ট থেকে রপ্তানিমুখী শিল্পকারখানা খুলে দিয়েছে সরকার। তবে শ্রমিকদের বাড়িতে আনার ব্যবস্থা না করেই শিল্পকারখানা খুলে দিয়ে যে চরম অব্যবস্থাপনা সরকার করেছে, তার কঠোর সমালোচনা করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

বিধিনিষেধ অমান্যে ৩৬৬ গাড়িকে জরিমানা, গ্রেপ্তার ৩৪৫ : দেশব্যাপী কঠোর লকডাউনের শেষ সময়ে রাজধানীর সড়ক-মহাসড়কে মানুষের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে যান চলাচল। জীবন-জীবিকার তাগিদে করোনার ভয়কে তুচ্ছ করে গতকালও ঘর থেকে বের হয় মানুষ। মোড়ে মোড়ে চেকপোস্ট বসিয়েও ঘর থেকে তাদের বের হওয়া থামানো যায়নি। রাস্তায় সকাল থেকেই অন্যদিনের তুলনায় বেশি ছিল ব্যক্তিগত গাড়ি, মোটরসাইকেল, কাভার্ডভ্যান, রিকশা ও সিএনজি অটোরিকশা এবং ভ্যানগাড়ির চলাচল।

দায়িত্বরত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের নমনীয়তার কারণে রাজধানীর বেশিরভাগ সড়কেই বেঁধে যায় যানজট। তবে কর্তব্যরত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ভাষ্য- শিল্পকারখানা ও গার্মেন্টস খোলার পর অতিরিক্ত গাড়ির চাপে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়। প্রধান সড়ক ছাড়াও পাড়া-মহল্লার ভেতরের রাস্তায় অসচেতন মানুষের আড্ডাবাজি ছিল আগের মতোই। বিভিন্ন পণ্যসামগ্রীর দোকানও অর্ধেক শাটার খোলা রেখে ব্যবসা করতে দেখা গেছে। গতকাল রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, মিরপুর, পল্লবী, রামপুরা, খিলগাঁও, গাবতলী, টেকনিক্যাল, আদাবর, মোহাম্মদপুর, শ্যামলী, গুলশান, মহাখালী, মালিবাগ, বাড্ডা, প্রগতি সরণি, নতুনবাজার, বনানীসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এমন দৃশ্য দেখা গেছে।

গণপরিবহন না থাকায় কর্মস্থলে এবং জরুরি কাজে যাওয়ার পথে চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়েন নগরবাসী। যানবাহনের জন্য রীতিমতো যুদ্ধ করতে হয় তাদের। রিকশা ও ভাড়ায়চালিত মোটরসাইকেলের ভাড়া ছিল আকাশচুম্বী। বাস বন্ধ রেখে অফিস খুলে দেওয়ায় মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে বলে কয়েকজন ভুক্তভোগীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগ জানিয়েছে, গতকাল রাজধানীতে নিয়ম অমান্য করায় সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ৩৪৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ ছাড়া রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ১৩৫ জনকে ১ লাখ ৮৯ হাজার ৮০০ টাকা জরিমানা করা হয়। আর ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ ৩৬৬টি গাড়িকে ৮ লাখ ২৪ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা করে।

সকালে খিলগাঁও রেলগেট এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, কর্মস্থলে যোগ দিতে বিপুল পরিমাণ কর্মজীবী মানুষ বাসা থেকে বের হয়েছেন। কিন্তু কোনো গণপরিবহন না পাওয়ায় তাদের দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। এই সুযোগে রিকশার ভাড়াও বেড়েছে দেড় থেকে দ্বিগুণ। অনেকেই কিছুটা সাশ্রয়ী বাহন ভ্যানগাড়িযোগে কর্মস্থলের উদ্দেশে রওনা করছেন। একেকটি ভ্যানে ছয় থেকে আটজনকে পাশাপাশি বসতে দেখা গেছে। আবার কর্মজীবীদের অনেকেই হেঁটেই যাচ্ছেন কর্মস্থলে। একই চিত্র দেখা গেছে সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী, শনিরআখড়া এলাকাতেও। ওই এলাকা থেকেও কোনো গণপরিবহন চলাচল করছে না। অধিকাংশ জরুরি পরিষেবার অফিসগুলো তাদের কর্মীদের যাতায়াতের ব্যবস্থা করেনি। ফলে দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে কর্মজীবী এসব মানুষকে।

খিলগাঁও, সায়েদাবাদ, রাজারবাগ, ফকিরাপুল, পল্টন, কাকরাইল, মৎস্য ভবন, শাহবাগ, বাংলামোটর এলাকাতেও এমন চিত্র দেখা গেছে। এসব এলাকার মানুষ রিকশা ও ভ্যানে করে গন্তব্যে পৌঁছতে দেখা গেছে। ট্রাফিক সিগন্যালগুলোতে যানজট দেখা গেছে। প্রতিটি সিগন্যালে এক থেকে দুই মিনিট করে অপেক্ষা করতে হয়েছে। সায়েদাবাদের বাসিন্দা নাজমুল ইসলাম বলেন, কোনো গণপরিবহন নেই। অফিসে যেতে হচ্ছে। রিকশা ভাড়া অনেক বেশি। তাই হেঁটে যাত্রা শুরু করেছি।

এদিকে গতকালও দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে রাজধানীতে এসেছেন মানুষ। তারা বলছেন, গণপরিবহন চালুর কথা শুনে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে সব কিছু গুছিয়ে প্রস্তুতি নিতে নিতেই একদিন পার হয়ে গেছে। সোমবার আবার গণপরিবহন বন্ধ থাকায় কোনো রকম ভেঙে ভেঙে ঢাকায় ফিরেছেন। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আগত যাত্রীরা অটোরিকশা, প্রাইভটকার, মাইক্রোতে ভেঙে ভেঙে এসে ঢাকার প্রবেশ পথগুলোর একটু আগে নেমে হেঁটেই নগরীতে প্রবেশ করছেন। রাজধানীতে কর্মজীবী মানুষের সঙ্গে হাঁটা ও রিকশা-ভ্যান যাত্রায় যুক্ত হয়েছে তাদেরও একটি বড় অংশ।

RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

Most Popular

Recent Comments