fbpx
বৃহস্পতিবার, ডিসেম্বর ১২, ২০২৪
বাড়িজাতীয়অপরাধআলিসান ফ্ল্যাটে বিত্তবানদের নিয়ে বসত আসর, চলতো অশ্লীল নাচ-গান

আলিসান ফ্ল্যাটে বিত্তবানদের নিয়ে বসত আসর, চলতো অশ্লীল নাচ-গান

বারিধারায় মডেল ফারিয়া মাহবুব পিয়াসার আলিসান ফ্ল্যাটে পার্টি বসত নিয়মিত। এসব পার্টির অথিতিরা সমাজের প্রভাবশালী ও বিত্তবান ব্যাক্তিরাই । এমনকি তাদের সন্তানরাও যোগ দিতেন এসব পার্টিতে। আর পার্টির  আসরে চলত মদ, সিসা ও ইয়াবা সেবন। অনুষঙ্গ বিনোদন হিসেবে থাকত অশ্লীল নাচ-গান।

এর আড়ালেই পাতা হতো ফাঁদ। সুযোগ বুঝে আপত্তিকর অবস্থার ছবি তুলে নিতেন চক্রের সদস্যরা। পরে ওই ছবি দিয়েই করতেন ব্ল্যাকমেইল। হাতিয়ে নিতেন মোটা অঙ্কের টাকা। এ রকম বেশ কিছু ব্ল্যাকমেইল  অভিযোগের তদন্তে নেমেই ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) গ্রেপ্তার করে মডেল পিয়াসা ও মরিয়ম আক্তার  মৌকে। তাদের বাসা থেকে জব্দ করা হয় বিদেশি মদ, ইয়াবা, সিসাসহ বিভিন্ন মাদক।

মডেল পিয়াসা ও মৌয়ের বিস্তারিত কর্মকান্ড এবং চক্রের বাকি সদস্যদের ধরতে তিন দিন করে তাদের  রিমান্ডে নিয়েছে ডিবি পুলিশ।

গতকাল ঢাকা মহানগর হাকিম শহিদুল ইসলাম ও ঢাকা মহানগর হাকিম আশেক ইমাম এ রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এর আগে গুলশান থানায় দায়ের করা মাদক মামলায় পিয়াসার ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির পুলিশ পরিদর্শক আলমগীর সিদ্দিক।

আবেদনে বলা হয়, জিজ্ঞাসাবাদে পিয়াসা জানান, বাসায় নাচ ও গানের আসর বসিয়ে অর্থের বিনিময়ে বিত্তশালীদের কাছে মদ, ইয়াবা, সিসাসহ অন্যান্য নেশাজাতীয় দ্রব্য বিক্রি করতেন তিনি। ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে সংগ্রহ করতেন এসব মাদক। অথচ বিদেশি মদ, বিয়ার ও সিসা নিজের কাছে রাখার কোনো বৈধ কাগজপত্র দেখাতে পারেননি পিয়াসা। তার সঙ্গে শহরের আরও মাদক বিক্রেতা ও সেবনকারীর সম্পর্ক রয়েছে বলেও প্রাথমিকভাবে জানা যায়। এসব বিষয়ে বিস্তারিত জানার জন্যই এ মডেলকে ১০ দিনের রিমান্ডে চান তদন্ত কর্মকর্তা আলমগীর সিদ্দিক।

অন্যদিকে মোহাম্মদপুর থানার মামলায় মডেল মৌকে ১০ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক মো. মাজহারুল ইসলাম। সেই আবেদনেও একই অভিযোগ আনা হয়েছে।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবু, মডেল মৌয়ের পক্ষে তার আইনজীবী জামিল সিদ্দিক বাপ্পী ওঅ্যাডভোকেট আরিফ হোসেন মজুমদার পিয়াসার পক্ষে শুনানীতে অংশ নেন। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত মৌয়ের ও পিয়াসার তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।

পুলিশ জানায়, মডেল পিয়াসা ও মৌ সংঘবদ্ধ একটি চক্রের সঙ্গে জড়িত। তারা পার্টির নামে উচ্চবিত্তদের বাসায় ডেকে মদ ও ইয়াবা খাইয়ে আপত্তিকর ছবি তুলে রাখতেন। পরে সেই ছবি দেখিয়ে ব্ল্যাকমেইল করে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিতেন। এ জন্য পিয়াসা ও মৌয়ের বাসায় ছিল মিনিবার। সেই বারে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন নাম করা ব্র্যান্ডের মদ রাখা হতো। পার্টিতে যোগ দেওয়া ব্যক্তিদের পছন্দ অনুযায়ী মদ সরবরাহ করা হতো।

এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা (উত্তর) শাখার যুগ্ম কমিশনার হারুন-অর-রশীদ বলেন, ‘তারা দুজন একটি সংঘবদ্ধ চক্রের সদস্য। তাদের বিরুদ্ধে আমরা অনেক ব্ল্যাকমেইলিংয়ের অভিযোগ পেয়েছি। সেসব ঘটনা তদন্তে নেমেই তাদের বাসায় অভিযান চালানো হয়। দুজনের বাসায় বিদেশি মদ, ইয়াবা, সিসা পাওয়া গেছে। মৌয়ের বাড়িতে মদের বারও ছিল।’

ডিবির এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘আটক দুই মডেল হচ্ছেন রাতের রানি। তারা দিনের বেলায় ঘুমাতেন এবং রাতে এসব কর্মকা- করতেন। উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তানদের পার্টির নামে বাসায় ডেকে আনতেন। পরে তাদের সঙ্গে অন্তরঙ্গ হয়ে আপত্তিকর ছবি তুলতেন এবং ভিডিও করে রাখতেন। সুযোগ বুঝে সেগুলো ভিকটিমদের পরিবারকে পাঠানোর হুমকি দিয়ে ব্ল্যাকমেইল করতেন এবং হাতিয়ে নিতেন মোটা অঙ্কের অর্থ। এসব ব্ল্যাকমেইলিংয়ের বিষয়ে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’

মোহাম্মদপুরের বাবর রোডের বাসা থেকে আটকের পর মডেল মৌ যদিও সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন, ‘ষড়যন্ত্র করে আমাকে ফাঁসানো হচ্ছে। আমার বাসায় এসব মদ আর ইয়াবা আগে থেকে ছিল না। পুলিশ এগুলো সঙ্গে করে নিয়ে এসেছে।’

এর আগে গত রবিবার রাত ১০টার দিকে বারিধারায় মডেল পিয়াসার বাসায় অভিযান চালায় ডিবি পুলিশ। রাত পৌনে ১২টার দিকে তাকে আটক দেখানো হয়। এর পর পিয়াসার দেওয়া তথ্যে মডেল মরিয়ম আক্তার মৌকে ধরতে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বাবর রোডে অভিযান চালায় ডিবি পুলিশ। তার বাসা থেকেও বিপুল মদ উদ্ধার করা হয়। পরে রাত ১টার দিকে মৌকেও আটক দেখানো হয়। এসব ঘটানায় সোমবার দুপুরে গুলশান থানায় পিয়াসার বিরুদ্ধে ও মোহাম্মদপুর থানায় মৌয়ের বিরুদ্ধে পৃথক মামলা করে পুলিশ।

প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের মে মাসে বনানীর রেইনট্রি হোটেলে ধর্ষণের শিকার হন দুই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী। ওই ঘটনায় দায়ের মামলার এজাহারেও নাম ছিল পিয়াসার। প্রথমে মামলা করতে ভুক্তভোগীদের সহযোগিতা করেছিলেন পিয়াসা; কিন্তু পরবর্তীতে তার বিরুদ্ধেই আবার মামলা তুলে নেওয়ার হুমকির অভিযোগে জিডি করেছিলেন ভুক্তভোগীদের একজন।

এর চার বছর পর আবারও আলোচনায় সেই পিয়াসা। গত এপ্রিলে গুলশানের অভিজাত ফ্ল্যাট থেকে কলেজছাত্রী মোসারাত জাহান মুনিয়ার মৃত্যুর ঘটনাতেও নাম উঠেছিল তার।

RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

Most Popular

Recent Comments