এক ব্যবসায়ীর সোনার বার লুটের মামলায় গ্রেফতার ও রিমান্ডে থাকা ফেনী জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ওসি সাইফুল ইসলামের নানা অপকর্ম বেরিয়ে আসছে। অভিযোগ উঠেছে, রাতভর শহরের বিভিন্ন স্পটে চাঁদাবাজি করতেন তিনি। জেলার মাদক ও চোরাকারবারিদের সঙ্গেও ছিল তার বিশেষ সখ্যতা। তার আশ্রয়-প্রশ্রয়েই চলত মাদক ব্যবসা।
এছাড়া ফেনীতে আলোচিত গরু ব্যবসায়ী হত্যা মামলার আসামি আওয়ামী লীগ নেতা ও পৌর কাউন্সিলর আবুল কালামকে ভারতে পালাতে সহযোগিতার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
জানা গেছে, এর আগে জেলা পুলিশ কন্ট্রোল রুমের ইনচার্জ ছিলেন সাইফুল। ৯ মে জেলা ডিবির ওসি এএনএম নুরুজ্জামানকে ফুলগাজী থানায় বদলি করা হয়। তখন তাকে ডিবির ওসির দায়িত্ব দেওয়া হয়। এরপর থেকে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেন তিনি।
জানা যায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ফেনী সদরের ফতেহপুর রেলওয়ে ওভারপাস, শহরের সাহেব বাজার ও মোহাম্মদ আলীসহ বিভিন্ন স্থানে গাড়ি থামিয়ে চাঁদাবাজি করতেন ডিবির ওসি সাইফুল।
৮ আগস্ট ফতেহপুর রেলওয়ে ওভারপাস এলাকায়ই ব্যবসায়ী গোপাল কান্তি দাসের ২০টি সোনার বার ছিনিয়ে নেন সাইফুলসহ ছয় পুলিশ কর্মকর্তা। অভিযুক্ত অন্যরা হলেন : এসআই মোতাহার হোসেন, নুরুল হক ও মিজানুর রহমান এবং এএসআই অভিজিৎ বড়ুয়া ও মাসুদ রানা।
এ ঘটনায় ছয়জনকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। তাদের সাময়িক বরখাস্তও করা হয়েছে। এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার ফেনীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সদর (সার্কেল) থোয়াই অংপ্রু মারমা বলেছেন, রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে তাদের কাছ থেকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বেরিয়ে আসছে। সেগুলো যাচাই-বাছাই করে পরে জানানো হবে।
জানা যায়, ফেনীর সাহেব বাজারের বহুল আলোচিত কিশোরগঞ্জের গরু ব্যবসায়ী হত্যা মামলার প্রধান আসামি ফেনী পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌর কাউন্সিলর আবুল কালামের সঙ্গে ওসি সাইফুলের দহরম-মহরম ছিল।
আবুল কালাম বর্তমানে পলাতক। তার বিরুদ্ধে আরও ডজন খুনের মামলা রয়েছে। তারা স্থানীয় মাদক ও চোরাকারবারিদের নিরাপত্তা দিতেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।
সাহেব বাজারের কাবাব হাউজের মালিক ও একাধিক কর্মচারী যুগান্তরকে জানান, ওসি সাইফুল ইসলাম ও এসআই নরুল হক কাবাব হাউজে রাত জেগে আবুল কালামের সঙ্গে আড্ডা দিতেন।
অভিযোগ উঠেছে, ওসি সাইফুলই আবুল কালামকে পালাতে সহযোগিতা করেছেন। ফুলগাজীর আনন্দপুর ইউনিয়নের জামমুড়া গ্রামের কৃষক জব্বর আলি (ছদ্মনাম) জানান, ২৫ জুলাই আবুল কালামের সঙ্গে ওসি সাইফুলকে পুলিশের গাড়িতে জামমুড়া সীমান্ত এলাকায় দেখেছেন তিনি। কৃষক জানান, ওসিকে তিনি চিনতেন না, সোনার বার চুরির ঘটনার টেলিভিশন ও পত্রিকায় ছবি দেখে চিনেছেন। ধারণা করা হচ্ছে, ওইদিনই ভারতে পালিয়ে যায় আবুল কালাম।
জুনের শেষদিকে জেলার সুলতানপুরের কৃষক সবুজ মিয়ার ৪টি গরু চুরি হয়ে গিয়েছিল। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক বিভিন্ন স্থানে খোঁজ করেও এগুলো পাননি। পরে তিনি জেলা পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন।
পুলিশ সুপার ডিবি পুলিশকে বিষয়টি দেখার নির্দেশ দেন। এরপর ওসি সাইফুল ইসলামের গ্রামের বাড়ি চিরড়া থেকে দুই গরু চোরকে আটক করে তাদের কাছ থেকে ৫ লাখ টাকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ করেন ক্ষতিগ্রস্ত ওই কৃষক।
শর্শদী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জানে আলম ও স্থানীয় যুবলীগের একাধিক নেতা জানান, ওসি সাইফুল পুলিশের গাড়ি নিয়ে নিয়মিত ওই এলাকায় এসে মানুষকে হেনস্তা করতেন। নানা অজুহাতে মানুষকে আটক করে গাড়িতে বসিয়ে রেখে টাকা নিয়ে ছেড়ে দিতেন।
দায়িত্ব পালনকালেও তার বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ উঠেছে। ২০১২ সালের মেতে ফেনী মডেল থানার সামনে পুলিশের স্থাপনা ভাঙার সময় ভ্রাম্যমাণ আদালতের ম্যাজিস্ট্রেটের ওপর হামলা করেন সাইফুল ইসলামের নেতৃত্বে কয়েকজন পুলিশ সদস্য।