১৯৮৮ সাল থেকে পত্রিকা হকারি করেন শাহ আলম। মা-বাবা, স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে এত দিন ভালোই চলছিল সংসার। কিন্তু মহামারি করোনা এসে সব কিছু ওলটপালট করে দেয়। আগে প্রতিদিন ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা আয় করতেন। এখন সেটা নেমে এসেছে ২০০ টাকায়। এ পরিস্থিতিতে পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন শাহ আলম। তাঁর এই দুর্দিনে পাশে দাঁড়িয়েছে বসুন্ধরা গ্রুপ। তাঁর হাতে কালের কণ্ঠ শুভসংঘের সদস্যরা তুলে দেন বসুন্ধরা গ্রুপের খাদ্য সহায়তার উপহারসামগ্রী। আলম বলেন, ‘করোনার জন্য আমরা খুব সংকটে জীবন কাটাচ্ছি। এই দুঃসময়ে বসুন্ধরা গ্রুপের খাবার পেয়ে খুব উপকার হলো। ছেলে-মেয়ে নিয়ে কিছুদিন খেয়ে বাঁচতে পারব। বিপদে আমাদের পাশে দাঁড়ানোয় ধন্যবাদ জানাই বসুন্ধরা গ্রুপকে।’
গতকাল শনিবার রাজশাহী জেলার দুটি উপজেলায় ও মহানগরীতে আলমের মতো ৯০০ হকার, দুস্থ ও অসহায় মানুষকে বসুন্ধরা গ্রুপের খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়। প্রত্যেককে দেওয়া হয়েছে ১০ কেজি চাল, তিন কেজি ডাল ও তিন কেজি আটা।
স্বাস্থ্যবিধি মেনে গতকাল গোদাগাড়ী উপজেলার পিরিজপুর উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ৩০০, তানোর উপজেলার চাঁন্দুড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে ৩০০ এবং রাজশাহী মহানগরীর নগর ভবনের গ্রিন প্লাজায় ৩০০ পরিবারের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়।
নগর ভবনে খাদ্যসামগ্রী বিতরণকাজে উপস্থিত হয়ে সিটি করপোরেশনের মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, ‘করোনার এই সময়ে মানুষের যে দুঃখ-দুর্দশা চলছে তা মোকাবেলায় যে যার মতো করে মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছে। বসুন্ধরা গ্রুপের কর্ণধার আহমেদ আকবর সোবহান সাহেব দেশের প্রতিটি উপজেলায় অসহায় মানুষকে খাদ্যসামগ্রী উপহার দিচ্ছেন। এই মহৎ উদ্যোগের জন্য আমি তাঁকে ধন্যবাদ জানাই। আর এই কঠিন সময়ে আপনাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য নিশ্চয়ই তিনি সকলের দোয়া পাবেন। আমি মনে করি, যাঁদের সামর্থ্য আছে তাঁরা সকলে সরকারের পাশাপাশি এভাবে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ালে তাদের কষ্ট অনেকটা লাঘব হবে।’
রাজশাহীর নগর ভবনে আরো উপস্থিত ছিলেন কালের কণ্ঠ পাবনা জেলা প্রতিনিধি আহমেদ উল হক রানা, বাংলাদেশ প্রতিদিনের রাজশাহী জেলার ব্যুরোপ্রধান কাজী শাহেদ, বাংলানিউজের সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট শরীফ সুমন, শুভসংঘের জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আরিফুজ্জামান নবাবসহ অমিত হাসান, শাহিনুল ইসলাম, জেসমিন আরা, মুত্তাকিন আলম, রাজশাহী কলেজ শাখার সাব্বির, মরিয়মনেছা লিমা প্রমুখ।
গোদাগাড়ীতে খাদ্যসামগ্রী বিতরণকাজে উপস্থিত হয়ে মাটিকাটা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শহিদুল করিম শিবলী বলেন, ‘করোনার এই দুঃসময়ে বসুন্ধরা গ্রুপ মানুষের পাশে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। আপনাদের খাদ্য সহায়তা দিয়েছে। শুধু আপনাদের নয়, তারা দেশব্যাপী অসহায় মানুষকে খাদ্য সহায়তা দিচ্ছে। আপনাদের কাছে অনুরোধ, বসুন্ধরা গ্রুপের জন্য আপনারা খাস দিলে দোয়া করবেন। তারা যেন আবারও আপনাদের সহায়তা করতে পারে।’
গোদাগাড়ীতে আরো উপস্থিত ছিলেন স্বেচ্ছাসেবী মনিরুল ইসলাম বকুল, শফিউল ইসলাম মুক্তা, তাজউদ্দিন আহমেদ, মেম্বার মো. রফিকুল ইসলাম প্রমুখ।
তানোরে খাদ্যসামগ্রী বিতরণকাজে যোগ দিয়ে চাঁন্দুড়িয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. মজিবুর রহমান বলেন, ‘বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান সাহেবের সুনাম দেশের সবখানে ছড়িয়ে আছে। সাধারণ মানুষের কর্মসংস্থানের জন্য তিনি বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। করোনার এই কঠিন সময়ে অসহায় মানুষকে খাদ্য সহায়তা দিচ্ছেন। এর জন্য তাঁকে মন থেকে দোয়া করি, কৃতজ্ঞতা জানাই। ভবিষ্যতেও যেন তাঁরা এই সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিতে পারেন সে জন্য আপনারা সবাই দোয়া করবেন।’
এদিন খাদ্যসামগ্রী বিতরণের সব কার্যক্রমে উপস্থিত ছিলেন কালের কণ্ঠ শুভসংঘের পরিচালক জাকারিয়া জামান, কালের কণ্ঠ’র নিজস্ব ফটো সাংবাদিক সালাউদ্দিন, এস এ বাপ্পী, আতিকুল ইসলাম কৌশিক, শুভসংঘের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শরীফ মাহ্দী আশরাফ জীবন প্রমুখ।
এর আগে শুক্রবার চাঁপাইনবাবগঞ্জের সদর উপজেলায় ৮০০ পরিবারের মাঝে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে তিন হাজার পরিবারের মধ্যে খাদ্য সহায়তার উপহারসামগ্রী বিতরণ শেষ হয়েছে। এদিন হরিমোহন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ৪০০ ও মহারাজপুর এসমা খাতুন চৌধুরী মহাবিদ্যালয় মাঠে ৪০০ পরিবারের হাতে খাদ্য সহায়তার উপহারসামগ্রী তুলে দেওয়া হয়।
হরিমোহন বিদ্যালয় মাঠে খাদ্যসামগ্রী বিতরণকাজে যোগ দিয়ে সদর পৌরসভার মেয়র মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষের কর্মসংস্থানে যারা বড় সুযোগ করে দিচ্ছে, অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখছে, তাদের মধ্যে বসুন্ধরা গ্রুপ অন্যতম। দেশের প্রান্তিক মানুষের দুঃখ-দুর্দশার দিনে আজ বসুন্ধরা খাদ্য সহায়তা দিচ্ছে। আমি বসুন্ধরা গ্রুপের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। তাদের এই মানবিক কাজ অব্যাহত থাকবে বলে প্রত্যাশা করি।’
এসমা খাতুন মহাবিদ্যালয় মাঠে খাদ্যসামগ্রী বিতরণকাজে উপস্থিত হয়ে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব মো. জিল্লার রহমান বলেন, ‘বসুন্ধরা গ্রুপ আপনাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। বিপদের সময় হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। আমরা সবাই বসুন্ধরা গ্রুপের জন্য দোয়া করব। তারা যেন আরো বেশি বেশি আপনাদের পাশে দাঁড়াতে পারে।’
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদরে খাদ্যসামগ্রী বিতরণকাজে আরো উপস্থিত ছিলেন কালের কণ্ঠ জেলা প্রতিনিধি আহসান হাবিব, বাংলাদেশ প্রতিদিন ও নিউজটোয়েন্টিফোরের জেলা প্রতিনিধি মো. রফিকুল আলম, ডেইলি সানের জেলা প্রতিনিধি কামাল সুকরানা, সাংবাদিক সাজিদ তৌহিদ, শুভসংঘের জেলা শাখার সভাপতি ফাইজুর রহমান মানি, মজিদ, তাজ, রঞ্জিত, অনু, শিবগঞ্জ উপজেলা শাখার মো. মাসুদ রানাসহ স্বেচ্ছাসেবী সজল, রকি, সালাম, রাজ্জাক, খালেক, মো. আলী, রিমন, আইয়ুব, রফিক, দেলোয়ার, আতিকুল, ইসব, আহমেদ, জনি, জসিম প্রমুখ। সূত্রঃ কালের কন্ঠ।