রাজধানীর উত্তর বাড্ডায় স্বাধীনতা সরণীর ব্যবসায়ী ইয়াকুব আলী (৪৬) কে আটক করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। সিআইডির দাবি কেরোসিন দিয়ে হত্যার অভিযোগ ব্যাবসায়ীর বিরুদ্ধে। কিন্তু, ডাক্তারের ময়নাতদন্তে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু।
অভিযোগ উঠেছে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে নিহত খায়রুল ইসলামের (২০) মৃত্যুর ঘটনায় দায়ের করা মামলায় আর্থিক লাভবান হয়ে ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতেই কেরোসিনের মতো মিথ্যে ঘটনা সাজিয়েছে সিআইডি।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ২০ জুন তারিখে রাজধানীর উত্তর বাড্ডায় প্রেমিকার সাথে দেখা করতে গিয়ে বাসার ছাদে বিদ্যুতের তারে স্পৃষ্ট হয় খায়রুল নামে এক যুবক। ওই ঘটনায় ঢাকা মেডিক্যালে ভর্তির চারদিন পর চিকিৎসাধীন মারা যায় খায়রুল।
এ মৃত্যুর ঘটনায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন বলছে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে শরীরের ৬০ শতাংশ পুড়ে যাওয়ায় তাকে বাঁচানো যায়নি।
এরপর এই ঘটনায় নিহত খায়রুল ইসলামের বাবা মোঃ আব্দুল কদ্দুস সিকদার বাদী হয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) বাড্ডা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন, যার নম্বর ০৪/২০ তারিখ ১ জুলাই ২০২০।
পরবর্তীতে মামলার তদন্তভার পায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি)।
নিহত খায়রুল ইসলামকে কেরোসিন দিয়ে হত্যার অভিযোগ এনে চলতি বছরের ১০ জুন দিবাগত রাতে বাসা থেকে তুলে নিয়ে সিআইডি কার্যালয়ে ৬০ ঘন্টা আটক রেখে ১০ লক্ষ টাকা দাবি করেন সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মোঃ খলিদুল হক হাওলাদার এবং এসআই দোলন মজুমদার।
এমন অভিযোগ করে ইয়াকুব আলী বলেন, দাবিকৃত টাকার পুরোটা না দিয়ে ২ লক্ষ টাকা দিলে সিআইডি কর্মকর্তারা ক্ষিপ্ত হয়ে আদালতের মাধ্যমে একদিনের রিমান্ড শেষে জেল হাজতে পাঠান তাকে।
এরপর জামিনে বের হয়ে ইয়াকুব আলী তার সাথে ঘটে যাওয়া অন্যায়ের প্রতিকার চেয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, আইন মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পুলিশ সদর দপ্তরসহ সিআইডির অতিরিক্ত মহাপুলিশ পরিদর্শক (প্রশাসন) বরাবরে অভিযোগ করেন।
অভিযোগে ইয়াকুব আলী আরও বলেন, ‘এই মামলা সম্পর্কে আমি কিছুই জানিনা। শুধু এটুকুই শুনি এই এলাকায় একটা ছেলে। প্রেমঘটিত বিষয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা গেছে। কিন্তু আমাকে সিআইডি গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মোঃ খলিদুল হক হাওলাদার ও এসআই দোলন মজুমদার ভয়ভীতি দেখিয়ে তার ছোট ভাই এর কাছ থেকে ২ লক্ষ টাকা নিয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।’
এদিকে খায়রুলের কথিত প্রেমিকা নাজনীন আহমেদ নীথি (১৮) বলেন, সিআইডি অফিসার দোলন মজুমদার আমাদেরকে চারদিন আটকে রেখে টর্চার করেন আর আমার বাবাকে মেরে ফেলা ও মামলা দিয়ে ফাঁসিয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে বলতে বলেন, এই এলাকায় বেকারীর মালিক ইয়াকুব আলী নামে একজন যে কি না খায়রুলের বাবার বন্ধু সে এসে খায়রুলের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেয়। এর উত্তরে আমি বলি, না আমি এমন নামে কাউকে চিনি না আর কাউকে এখানে আসতেও দেখিনি। কিন্তু মিমাংসার জন্য সিআইডি আমাদের আটক করে নিয়ে পরবর্তীতে আমাদের ছাড়তে দুই লক্ষ টাকা নেয়।’
প্রেমিকার মা সাহেলি বেগম বলেন, ‘সিআইডি আমাদেরকে নিয়ে অনেক টর্চার করে বলেন যেন আমরা আলীর বিরুদ্ধে তাদের শেখানো অনুযায়ী সাক্ষী প্রদান করি। কিন্তু আমি তা মানতে অপারগতা করি। আলী নামে আমি কাউকে চিনি আর কখনো দেখিনিও। আমি কীভাবে না জেনে একজনের বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষী দিব।’
এ বিষয়ে নিহত খায়রুলের বাবা আব্দুল কুদ্দুস জানান, ‘আমাকে সিআইডি নিয়ে ১৮ দিন আটকে রাখছে আর বলছে আমার প্রতি কোনো ধরনের অভিযোগ নাই। এসপি স্যার আমাকে তার শেখানো কথামতো কথা বলতে বলছে। আমি বুঝিনাই যে এভাবে আমাকে কথা বলাইয়া নাটক বানাবে। আমি এটাও বুঝিনাই যে এভাবে ওদের সাথে কথা বললে ক্ষতি হয়ে যাবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মোঃ খলিদুল হক হাওলাদার দাবি করে বলেন, ‘মা এবং মেয়ের স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দির ভিত্তিতেই ইয়াকুব আলীর সংশ্লিষ্টতা আছে বিধায় এই মামলায় তাকে আটক করা হয়।
তবে সিআইডির এই কর্মকর্তা এমন দাবি করলেও আদালতে সাক্ষীর ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি কিংবা মামলার এজাহার বা তদন্তের কোথাও ব্যবসায়ী ইয়াকুব আলীর কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই বলে দাবি করেন ইয়াকুব আলী। সুত্রঃ মানবকন্ঠ।