কোয়ারেন্টিনসহ বাধ্যতামূলক স্বাস্থ্যবিধি মানার আগাম অঙ্গীকারসহ বেশকিছু শর্তে আটকে পড়া বাংলাদেশিদের ফেরাতে রাজি হয়েছে ইতালি সরকার। এমনটাই জানিয়েছে রোমের বাংলাদেশ মিশন।
দূতাবাসের জারি করা গণ-বিজ্ঞপ্তিতে প্রবাসী বাংলাদেশীদের স্বাস্থ্যবিধি পুরোপুরি অনুসরণের বিশেষ অনুরোধ জানিয়ে বলা হয়, এর সঙ্গে দেশের ভাবমূর্তি সরাসরি জড়িত। দূতাবাস আন্তরিকভাবে বিশ্বাস করে যে, নিষেধাজ্ঞা খানিক শিথিল করে ২৮শে আগস্ট জারি করা ইতালি সরকারের অধ্যাদেশের আওতায় যে সব বাংলাদেশি দেশটিতে শিগগির প্রবেশ করতে যাচ্ছেন তারা অবশ্যই কোয়ারেন্টিন বিধি যথাযথভাবে পালন করবেন।
গণ-বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, কেউ যদি ইতালি সরকার কর্তৃক আরোপিত বাধ্যতামূলক আইসোলেসন এড়িয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে মিথ্যা, অসত্য কিংবা অসম্পূর্ণ ঠিকানা এবং ফোন নম্বর দেন এবং তা যদি প্রমানিত হয় তাহলে তিনি অবশ্যই নজরদারীতে থাকবেন।
ইতালিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত দেশটির সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে প্রবাসী বাংলাদেশীরা কোয়ারেন্টিন বিধি যথাযথ মেনে চলবেন মর্মে দায়িত্ব নিয়ে তাদের আশ্বস্ত করেছেন। বাংলাদেশিদের কোয়ারেন্টিন বিধি যথাযথভাবে পালন নিশ্চিতে দূতাবাস সক্রিয় ভূমিকা পালন করবে বলেও আগাম অঙ্গীকার করেছে রাষ্ট্রদূত, যা ইতালি সরকার স্বাগত জানিয়েছে।
বাংলাদেশ দূতাবাসের বিজ্ঞপ্তি এ-ও দাবি করা হয়, কোভিড-১৯ এর কারণে ইতালি ভ্রমণের ক্ষেত্রে আরোপিত নিষেধাজ্ঞার শুরু থেকেই ঢাকাস্থ পররাষ্ট্র মস্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ দূতাবাস, রোম সক্রিয় কূটনৈতিক উদ্যোগ গ্রহণ করে। বাংলাদেশে আটকে পড়া প্রবাসী বাংলাদেশী নাগরিকদের গ্রহণযোগ্য যে কোন উপায়ে ফেরতে রাষ্ট্রদূত শামীম আহসান ইতালির উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আন্ডার-সেক্রেটারী, স্বাস্থ্যসচিবসহ উচ্চতর পর্যায়ের নীতি-নির্ধারকদের সাথে তাদের অফিসে একান্ত বৈঠক করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় বাংলাদেশ সরকারের সক্রিয় ভূমিকার কারণে বাংলদেশে কোভিড পরিস্থিতির দৃশ্যমান উন্নতির (visible progress) বিষয়টি রাষ্ট্রদূত ইতালি সরকারের কাছে তুলে ধরেন। একই সঙ্গে রাষ্ট্রদূত আটকে পড়া প্রবাসী বাংলাদেশীদের অসুবিধাসমূহ ও ইতালির নিয়োগকারীদের ব্যবসায়িক/ আর্থিক ক্ষতির বিষয়টিও জোরালোভাবে বিভিন্ন যোগাযোগ মাধ্যমে (কূটনৈতিক পত্র, ফোনালাপ ইত্যাদি) উপস্থাপন করেন। বাংলদেশ দূত বন্ধুপ্রতীম ভারত ও শ্রীলংকার স্থানীয় রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে এক্ষেত্রে একটি সমন্বিত উদ্যোগের (co-ordinate approach) আওতায়ও সক্রিয় থেকেছেন।
প্রসঙ্গত, করোনা সংক্রমণের প্রথম ধাপে বাংলাদেশিদের দেশটিতে প্রবেশে তেমন বিধি নিষেধ ছিল না। কিন্তু কতিপয় প্রবাসী বাংলাদেশির করোনা টেস্টের জাল সার্টিফিকেট নিয়ে ধরা পড়া এবং কোয়ারেন্টিন না মানার কারণে গোটা জাতিকে খেসার দিতে হচ্ছে। বহুদিন ধরে প্রবাসী কর্মী, শিক্ষার্থী এমনকি মিশনের স্টাফদেরও (অফিসিয়াল পাসপোর্টধারী) জরুরি প্রয়োজনে দেশটিতে প্রবেশ বারণ ছিল।
বিদেশিদের ইতালি প্রবেশ সংক্রান্ত পূর্বের নিষেধাজ্ঞা কিছুটা শিথিল করে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় রোববার ৬ পৃষ্টার নতুন অধ্যাদেশ জারি করে। ওই অধ্যাদেশে বাংলাদেশি বংশোদ্ভুতদের দেশটিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত কিছু বিধি আরোপ করা হয়েছে। অবশ্য বাংলাদেশিদের মতো ভারতীয় এবং শ্রীলঙ্কানদের জন্যও বাড়তি বিধিনিষেধ পালন বাধ্যতামূলক।
ইতালিয়ান ভাষায় জারি করা ওই অধ্যাদেশ ট্রান্সলেশন ও পর্যালোচনা করে রোমের বাংলাদেশ দূতাবাস ২৯ শে আগস্ট একটি গণ-বিজ্ঞপ্তি প্রচার করেছে। “বাংলাদেশ হতে ইতালিতে ভ্রমণ সংক্রান্ত নিষেধাজ্ঞা শিথিল” শিরোনামে প্রচারিত বিজ্ঞপ্তি মতে, “ইতালির স্বাস্থ্যমন্ত্রী মান্যবর জনাব রবের্তো স্পেরান্সা (H.E. Mr. Roberto Esperanza) ২৮ আগস্ট ২০২১ ইতালিতে ভ্রমন/প্রবেশ সংক্রান্ত একটি অধ্যাদেশে (ordinance) স্বাক্ষর করেন যা মঙ্গলবার, ৩১ আগস্ট ২০২১ থেকে কার্যকর হবে এবং সোমবার, ২৫ অক্টোবর ২০২১ পর্যন্ত বলবৎ থাকবে।
বিদ্যমান কভিড পরিস্থিতির কারণে নিষেধাজ্ঞার আওতাধীন বাংলাদেশ (এবং ভারত ও শ্রীলংকা) এর নাগরিকবৃন্দ (যাদের কভিড-আক্রান্তের উপসর্গ নেই),
ক) যাদের ২৮ আগস্ট ২০২১ এর পূর্ব থেকেই ইতালিতে রেসিডেন্স পারমিট (residenza anagrafica) ছিল অথবা
খ) যারা স্টে পারমিট (permesso di soggiorno/carta di soggiorno lungo periodo) নবায়নের রসিদ (ricevuta di rinnovo) সহ ইতালির বাইরে অবস্থান করছেন
গ) যারা স্টে পারমিট মেয়াদ উত্তীর্ণ হবার পর রি-এন্ট্রি ভিসা পেয়েছেন এবং
ঘ) নতুন ফ্যামিলি ভিসাধারীরা (পরিবারের মূখ্য/ প্রধান/ Principal Member-এর ২৮ আগস্ট ২০২১ এর পূর্বে ইতালিতে রেসিডেন্সি থাকা সাপেক্ষে) এ সুবিধার আওতায় ভ্রমণের সুবিধাপ্রাপ্ত হবেন।
ঙ) পড়াশোনা/ শিক্ষা সংক্রান্ত কারণে যাদের ইতালিতে যাওয়া আবশ্যক তারাও নতুন অধ্যাদেশের আওতায় সুবিধাপ্রাপ্ত হবেন
উপরোক্ত শর্ত যারা পূরণ করতে পারবেন না তাদের ক্ষেত্রে সর্বশেষ অধ্যাদেশ অনুযায়ী ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা ২৫ অক্টোবর ২০২১ পর্যন্ত প্রযোজ্য হবে পরবর্তীতে নতুন ঘোষণা না আসা পর্যন্ত। তবে জরুরী প্রয়োজনে তারা ইতালির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিশেষ অনুমতি গ্রহণ সাপেক্ষে ইতালিতে প্রবেশ করতে পারবেন। উক্ত অধ্যাদেশের আওতায় সিজনাল জব ভিসা, নন-সিজনাল জব ভিসা, ভিজিট/ট্যুরিস্ট ভিসাধারী ব্যক্তিরা সুবিধাপ্রাপ্ত হবেন না।
বর্ণিত সুবিধা গ্রহন করে আগমনকারীদের নিম্নলিখিত শর্তসমূহ প্রতিপালন (comply) করতে হবেঃ
ক) বিমানে আরোহনের সময় পূরণকৃত প্যাসেন্জার লোকেটর ফরম (মোবাইলে/ প্রিন্ট কপি) বহন করতে হবে
খ) কভিড নেগেটিভ সার্টিফিকেট (ইতালিতে প্রবেশের ৭২ ঘন্টা আগে করা মলিকিউলার/এন্টিজেন সোয়াব টেস্ট)
গ) ইতালিতে প্রবেশের পর মলিকিউলার/ এন্টিজেন সোয়াব টেস্ট
ঘ) প্যাসেঞ্জার লোকেটর ফরমে উল্লেখ করা স্থানে ১০ দিনের বাধ্যতামূলক আইসোলেসন।” সূত্রঃ মানবজমিন।