ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মৃত্যুর সাথে ছয় দিন লড়ে অবশেষে মারা গেলেন মাদক ব্যবসায়ীদের হামলায় আহত যুবক জয় সাহা। বৃহস্পতিবার (২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ঢাকার একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিনি মারা যান। জয় ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর এলাকার পাইকপাড়ার লিটন সাহার ছেলে। সে এ বছর এসএসসি পরিক্ষার্থী ছিলেন।
হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় পুলিশ মামলার চার নম্বর আসামি দ্বীপকে বৃহস্পতিবার দুপুরে গ্রেপ্তার করেছে। এ ঘটনায় জয় সাহার চাচা টিটু কুমার সাহা বাদি হয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
মামলায় টিটু কুমার সাহা অভিযোগ করে বলেন, অসামাজিক কার্যকলাপ, মাদক সেবন ও মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত থাকা এলাকার কয়েক যুবককে প্রায়ই বাঁধা দিতো জয়। এ ঘটনার জের ধরে গত ২৭ আগস্ট সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে হিমেল, ফাহিম, সাগর, দ্বীপ, বিবেক, হরিসহ আরও সাত-আটজন মিলে জয় সাহার উপর হামলা করে। আহত অবস্থায় প্রথমে তাকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরে তার শারিরিক অবস্থার অবনতি হলে জয়কে ঢাকায় পাঠানো হয়।.
এ ঘটনায় জয়ের কাকা টিটু সাহা থানায় অভিযোগ দিলেও পুলিশ প্রথমে মামলা নেয়নি। তবে পুলিশের উপর মহল থেকে নির্দেশনা দেওয়ার পর বুধবার রাতে পুলিশ ওই অভিযোগটি মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করেন বলে অভিযোগ করেন টিটু সাহা।
এদিকে, বৃহস্পতিবার রাত ৯ টার দিকে নিহতের মরদেহ ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের পূর্ব পাইকপাড়া গগন সাহার বাড়ি রোড এলাকায় এসে পৌঁছালে হৃদয় বিদারক ঘটনার সৃষ্টি হয়। এ সময় নিহতের স্বজনসহ এলাকাবাসী কান্নায় ভেঙে পড়েন। তারা এই হত্যাকান্ডের ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।
এ সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ছাত্রলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি সুজন দত্ত অভিযোগ করে বলেন, ঘটনার পর থেকে তিনি নিহতের স্বজনদেরকে নিয়ে মামলা দায়ের করার জন্য একাধিক বার সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এমরানুল ইসলামে দ্বারস্থ হয়েছিলেন। কিন্তু কোনভাবে মামলাটি তিনি নথিভূক্ত করেননি। কেন তিনি মামলাটি গ্রহণ করেননি সে বিষয়টি তিনি স্পষ্ট করে কিছু জানাননি। পরে চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আনোয়ার হোসেনকে বিষয়টি অবগত করা পর গতকাল রাতে মামলাটি সদর থানার নথিভূক্ত করা হয়।
হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে আগামি ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সকল খুনিদের গ্রেপ্তার না হলে রোববার থেকে রাজপথে আন্দোলন করার হুঁশিয়ারি দেন সুজন। এসময় ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইসলামের অপসারণ দাবি করেন সুজন দত্তসহ অনেকে।
এদিকের মরদেহ আসার খবরে এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পরে। এলাকার কয়েকশ মানুষ ঘটনার প্রতিবাদে মিছিল করার প্রস্তুতি নেয়। পরে রাত ৯টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মোল্লা মো. শাহীন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হেড কোয়াটার্স) মো. আবু সাঈদ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মোজাম্মেল হোসেন রেজা, সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ এমরানুল ইসলাম সহ পুলিশ সদস্যরা পাইকপাড়া নিহতের বাড়িতে ছোটে আসেন।
এসময় ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি সোমেষ রঞ্জন রায়, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকার, জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্র্যাট সঞ্জিব সরকার, প্রশান্ত বৈদ্য সহ প্রশাসনের কর্মকর্তারাও ঘটনা স্থলে আসেন। পরে নিহতদের স্বজনদের হত্যাকাণ্ডে জরিতদের গ্রেপ্তারসহ দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির আশ্বাস দেয়ার পর পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হয়।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত ব্রাহ্মণবাড়িয়া অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মোল্লা মো. শাহীন জানান, অপরাধীদের দ্রুত সময়ের মধ্যে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হবে। আগামী ১১ সেপ্টেম্বর (শনিবার) পূর্বপাইক পাড়া এলাকায় মাদক বিরোধী সভা আহবান করা হয়েছে। এই সমাবেশ থেকে এলাকায় ঘটে যাওয়া মাদক সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সকল তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করা হবে। অপরাধী যেই হোক তাদেরকে কঠোর ভাবে আইনের আওতায় আনা হবে।