স্বাস্থ্য অধিদফতরের আলোচিত গাড়িচালক আব্দুল মালেক ও তার স্ত্রীর পাঁচ কোটি টাকার বেশি মূল্যমানের অবৈধ সম্পদের খোঁজ পাওয়া গেছে। তাদের সাততলা বাড়ি, বিলাসবহুল ফ্ল্যাট, পাজেরো জিপ ও গরুর খামারের সন্ধান মিলেছে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তদন্তে।
কাগজে-কলমে পাঁচ কোটি টাকার বেশি সম্পদের কথা বলা হলেও বাস্তবে ওই সম্পদের বাজারমূল্য কয়েকগুণ বেশি হবে বলে জানা গেছে।
এর আগে আবদুল মালেক ও তার স্ত্রী নার্গিস বেগমের বিরুদ্ধে দুদকের দায়ের করা মামলায় সোয়া তিন কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের অভিযোগ আনা হয়েছিল। অর্থাৎ অভিযোগে যে পরিমাণ সম্পদের কথা বলা হয়েছিল, তদন্তে এর চেয়েও বেশি সম্পদ পাওয়া গেছে।
দুদকের তদন্ত কর্মকর্তা ও সহকারী পরিচালক সৈয়দ নজরুল ইসলাম শিগগিরই তদন্ত প্রতিবেদন কমিশন বরাবর দাখিল করবেন বলে জানা গেছে। এরপর কমিশনের অনুমোদনক্রমে আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হবে।
এ বিষয়ে তদন্ত কর্মকর্তা নজরুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তিনি গণমাধ্যমের কাছে মুখ খুলতে রাজি হননি। অন্যদিকে সংস্থাটির জনসংযোগ দফতরও চার্জশিট অনুমোদনের আগে কোনো কিছু বলতে অস্বীকার করে।
তবে দুদকের বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, গাড়িচালক আব্দুল মালেক স্বাস্থ্য অধিদফতরের কর্মচারী ইউনিয়নের স্বঘোষিত সভাপতি হয়ে ২০১০ সালে ৫০০ কর্মচারী নিয়োগ-বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেন। এসব টাকা দিয়েই সম্পদের পাহাড় গড়েন তিনি।
উত্তরার কামারপাড়ায় দুটি সাততলা বাড়িসহ নামে-বেনামে অঢেল সম্পদ গড়েছেন মালেক ও তার স্ত্রী— এমন অভিযোগে দুদক অনুসন্ধানে নামে। অনুসন্ধানে এ দম্পতির বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের তথ্য পাওয়ায় চলতি বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি পৃথক দুটি মামলা দায়ের হয়।
মামলার এজাহারে মালেকের বিরুদ্ধে ৯৩ লাখ ৫৩ হাজার ৬৪৮ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন এবং এক কোটি ৫০ লাখ ৩১ হাজার ৮১০ টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনসহ মোট দুই কোটি ৪৩ লাখ ৮৫ হাজার ৫৫৮ টাকার সম্পদ পাওয়ার তথ্য উল্লেখ করা হয়।
এর মধ্যে বৈধ সম্পদ পাওয়া যায় মাত্র ৬০ লাখ নয় হাজার ৩৪২ টাকার। অপর মামলায় আব্দুল মালেক ও তার স্ত্রী নার্গিস বেগমকে আসামি করা হয়। এ মামলায় নার্গিস বেগমের দুই কোটি ১২ লাখ ৩৫ হাজার ৪৩১ টাকার সম্পদের তথ্য উল্লেখ করা হয়, যার বিপরীতে বৈধ উৎসে পাওয়া যায় এক কোটি এক লাখ ৪৩ হাজার ৩৮২ টাকা। অবশিষ্ট এক কোটি ১০ লাখ ৯২ হাজার ৫০০ টাকার সম্পদ অবৈধ উপায়ে অর্জিত।
তার বিরুদ্ধে দুদক আইন ২০০৪ এর ২৭ (১) ও ২৬ (২) ধারায় মামলাটি দায়ের করা হয়। দুদকের এক কর্মকর্তা বলেন, সংস্থাটির গোয়েন্দা শাখা ২০১৯ সালে স্বাস্থ্য অধিদফতরের দুর্নীতিবাজ ও অবৈধ সম্পদ অর্জনকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চিহ্নিত করতে কাজ শুরু করে।
দুদকের টিম দীর্ঘ তদন্ত শেষে স্বাস্থ্য অধিদতফরের ঘুষ-দুর্নীতি ও নিয়োগ-বদলি বাণিজ্যে জড়িত এবং অবৈধ সম্পদ অর্জনকারী ৭৫ কর্মকর্তা-কর্মচারীর তথ্য তুলে ধরে প্রতিবেদন দাখিল করে। এর মধ্যে ছিলেন গাড়িচালক আব্দুল মালেকও।
সেই প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে ৪৫ কর্মকর্তা-কর্মচারীর অভিযোগ অনুসন্ধানে মাঠে নামে দুদক। অনুসন্ধান চলাকালে অবৈধ অস্ত্র, জাল নোট ব্যবসা ও চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে গত বছরের ২০ সেপ্টেম্বর রাজধানীর তুরাগ এলাকা থেকে গাড়িচালক আব্দুল মালেককে আটক করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। গাড়িচালক আব্দুল মালেক তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত তিনি পড়াশোনা করেন। ১৯৮২ সালে প্রথম সাভারে একটি প্রকল্পের গাড়িচালক হিসেবে যোগ দেন তিনি। প্রায় চার বছর চাকরির পর স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিবহন পুলে যোগ দেন।
আটকের আগ পর্যন্ত প্রেষণে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতরের পরিবহন পুলের গাড়িচালক ছিলেন তিনি। ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের কর্মচারী ইউনিয়নের স্বঘোষিত সভাপতিও।