fbpx
বৃহস্পতিবার, ডিসেম্বর ১২, ২০২৪
বাড়িবাংলাদেশঅপরাধফারইস্টের দূর্নীতিতে সম্পৃক্ত চেয়ারম্যান নজরুল

ফারইস্টের দূর্নীতিতে সম্পৃক্ত চেয়ারম্যান নজরুল

গ্রাহকের টাকা আত্মসাৎ, বাড়তি দামে জমি কেনা, অধিক উন্নয়ন ব্যয় এবং রেজিস্ট্রেশন খরচ অতিরিক্ত দেখিয়ে কয়েকশ কোটি টাকার অনিয়ম করা হয়েছে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে। এসব অনিয়মের সঙ্গে প্রতিষ্ঠানের সদ্য অপসারিত চেয়ারম্যান নজরুল ইসলামের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। সম্প্রতি দুই নিয়ন্ত্রক সংস্থা এসব দুর্নীতির বিরুদ্ধে তদন্ত করে প্রাথমিক প্রমাণ পেয়েছে। ফারইস্টের আর্থিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএইসি) পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে নতুন পর্ষদ গঠন করেছে।

নজরুল ইসলাম অনিয়মের মাধ্যমে অন্তত ৫০০ কোটি টাকা তছরুপ করেছেন। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, আইডিআরএ, বিএসইসির তদন্তেও এসব অনিয়ম বেরিয়ে এসেছে। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানটির আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) পৃথক একটি অনুসন্ধান শুরু করেছে। দুদকের বিশেষ অনুসন্ধান সেল-২ থেকে উপপরিচালক নূরুল হুদা অনুসন্ধানে কাজ করছেন।

এ ছাড়াও নজরুলের বিরুদ্ধে বীমাগ্রাহকের টাকা পরিশোধে অনিয়মেরও গুরুতর অভিযোগ আছে। বীমা পলিসি শেষ হওয়ার পরও গ্রাহকদের টাকা দেওয়া হয়নি। অভিযোগ আছে, গ্রাহকের বীমা টাকা পরিশোধ না করে তিনি তা আত্মসাৎ করেছেন। নিয়ন্ত্রক সংস্থা দুটি দেখছে, নজরুল ইসলাম অনিয়মের মাধ্যমে অর্থ তছরুপ করার ক্ষেত্রে দশ ধরনের কৌশন অবলম্বন করেন। এসব অভিযোগের বিষয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা দুটি আরও নিরীক্ষা করছে। বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ বলছে, তাদের তদন্ত চলছে। এরই মধ্যে অভিযোগের প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়া গেছে। বিএসইসি বলছে, তারা মানিলন্ডারিংয়ের বিষয়টি খতিয়ে দেখছে। অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে নজরুল ইসলাম জালিয়াতি এবং গ্রাহকের অর্থ আত্মসাতে দশ ধরনের কৌশল নিয়েছেন। জমির রেজিস্ট্র্রেশন খরচ ২ কোটি টাকার জায়গায় বিবিধ খরচ দেখিয়েছেন ৭৭ কোটি টাকা। পরবর্তী সময়ে কো-অপারেটিভের কাছ থেকে ঋণ পরিশোধের নামে সাফকবলা রেজিস্ট্রি নিয়ে আরও একশ কোটি টাকা কোম্পানি থেকে বের করে নিয়েছেন। বিনিয়োগের নামে লাইফ ফান্ডের টাকা হাতিয়ে নিতে দফায় দফায় বোর্ডসভার মাইনটস বা রেজুলেশন জালিয়াতি, নগদে শত শত কোটি টাকা লেনদেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএর অনুমতির তোয়াক্কা না করাসহ গুরুতর সব জাল-জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছেন বীমা কোম্পানিটির চেয়ারম্যান। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।

জালিয়াতি এবং গ্রাহকের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে গত বুধবার ফারইস্টের বোর্ড ভেঙে দিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। চেয়ারম্যানসহ ১০ পরিচালক তাদের দায়িত্ব বুঝে নিয়েছেন। কোম্পানির নতুন পরিচালনা পর্ষদ ৬ মাসের মধ্যে শীর্ষ ব্যবস্থাপনাও পুনর্গঠন করবে। নগদ অর্থসম্পদ ফিরিয়ে আনবে। পাশাপাশি গত ১০ বছরে যারা আর্থিক অপরাধ এবং মানিলন্ডারিং করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে।

ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলামের ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। এ বিষয়ে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হেমায়েত উল্লাহর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বৈঠকে আছেন। পরে কথা বলবেন বলে জানান।

নিয়ন্ত্রক সংস্থার বক্তব্য : বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) চেয়ারম্যান ড. এম মোশাররফ হোসেন আমাদের সময়কে বলেন, ফারইস্ট ইসলামী লাইফের অনিয়মের বিষয়ে তদন্ত অব্যাহত রয়েছে। প্রথম তদন্তে অনিয়ম উঠে এসেছে। এ জন্য নতুন অডিটর নিয়োগ করা হয়েছে। তাদের তদন্ত শেষে ব্যবস্থা নেবে আইডিআরএ।

বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম বলেন, গত কয়েক বছরে প্রতিষ্ঠানটির আর্থিক প্রতিবেদনে অনিয়ম পরিলক্ষিত হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বিশেষ অডিট করে কমিশন- সেখানে এসব অনিয়মের বিষয়টি বেরিয়ে আসে। এ জন্য পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে নতুন পরিচালনা পর্ষদ করা হয়েছে। তারা নতুন করে অডিট করে অনিয়মের বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন। একই সঙ্গে অর্থ পাচারের বিষয়টি দেখবেন।

যেভাবে অর্থ তছরুপ হয় : জালিয়াতি এবং গ্রাহকের টাকা আত্মসাতে দশ ধরনের কৌশল নেওয়া হয়েছে। জমি কেনায় অতিমূল্যায়িত, জমির রেজিস্ট্রেশন খরচ বৃদ্ধি, উন্নয়ন ব্যয় ও আর্থিক বিবরণীতে টেম্পারিংয়ের মাধ্যমে অর্থ তছরুপ করেছেন তিনি।

সাড়ে ১৪ কোটি টাকার জমিতে বালু ফেলতেই খরচ ১৪২ কোটি টাকা : ২০১৩ সালে মিরপুরের গোড়ান চাটবাড়িতে সাড়ে ১৪ কোটি টাকায় ৭৬৩.৪৮২ শতাংশ জমি যৌথভাবে কেনা হয় ফারইস্ট ইসলামী লাইফ এমপ্লয়িজ কো-অপারেটিভ সোসাইটি এবং প্রাইম ইসলামী লাইফ এমপ্লয়িজ কো-অপারেটিভ সোসাইটির নামে। সেই জমিতে বালু ফেলাসহ উন্নয়ন বাবদ খরচ হয় ১৪২ কোটি ৩০ লাখ টাকা। জমির দামের ১০ গুণের বেশি বালু ফেলার অবিশ্বাস্য খরচ দেখিয়েছে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স।

জমির রেজিস্ট্রেশন খরচ ২ কোটি টাকা, খরচ হয়ে গেছে ৭০ কোটি : বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের তদন্ত দলের কাছে জমির উন্নয়নে ১৪২ কোটি ৩০ লাখ টাকা খরচ হয়েছে বলে কোম্পানির তরফ থেকে জানানো হয়েছে। জমি ক্রয়ে রেজিস্ট্রেশন খরচ দেখানো হয়েছে ৭১ কোটি ৯৩ লাখ ১৪ হাজার ২৫০ টাকা। অথচ ক্রয়ের অন্য নথিতে রেজিস্ট্রেশন খরচ ধরা হয়েছে দলিল মূল্যের ওপর সাড়ে ১১ শতাংশ। এ হিসাবে ১৪ কোটি ৮১ লাখ ৩১ হাজার ৭৫০ টাকা দলিল মূল্যের ওপর রেজিস্ট্রেশন খরচ হয় ১ কোটি ৭০ লাখ ৩৫ হাজার ১৫১ টাকা। অর্থাৎ রেজিস্ট্রেশন খরচ বেশি দেখিয়েছে ৭০ কোটি ২২ লাখ ৭৯ হাজার ৯৮ টাকা।

৫ কোটি টাকার জমি দিয়ে ৫০ কোটি টাকার ঋণ পরিশোধ : গোড়ান চাটবাড়ির জমি কিনতে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ গঠন করে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ এমপ্লয়িজ কো-অপারেটিভ সোসাইটি। এই সোসাইটিকে ৫০ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয় ফারইস্ট ইসলামী লাইফের তহবিল থেকে। এ সিদ্ধান্ত ফারইস্ট ইসলামী লাইফের পরিচালনা পরিষদের ২০১৩ সালের ১ জুলাই ১৬৯তম বোর্ডসভায়। কিন্তু একটি এমপ্লয়িজ সোসাইটি খুলে তার নামে ঋণ দিতে আইনগত বাধা রয়েছে। তাই এই টাকা সোসাইটির কাছে ফেরত চাওয়ার সিদ্ধান্ত হয় ২০১৪ সালে ৪ জুন অনুষ্ঠিত ১৭৯তম বোর্ডসভায়। অর্থাৎ ঋণ দেওয়ার এক বছরের মাথায় ফারইস্ট ইসলামী লাইফ কর্তৃপক্ষের মনে হয় যেভাবে সোসাইটিকে ঋণ দেওয়া হয়েছে তা বৈধ নয়।

বোর্ডসভার কার্যবিবরণী সূত্রে জানা যায়, সিদ্ধান্ত অনুসারে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ কো-অপারেটিভ সোসাইটির কাছে ঋণের টাকা ফেরত চাইলে তারা ঋণের টাকা ফেরত দিতে অপারগতা প্রকাশ করে। অন্যদিকে অন্যত্র জমি বিক্রি করতে পারছে না। ফলে ঋণের টাকা পরিশোধের জন্য সোসাইটির নামে কেনা গোড়ান চাটবাড়ির ৩৮১ শতাংশ জমি ফারইস্ট ইসলামী লাইফকে সাবকবলা রেজিস্ট্রি করে দেয়।

জমির মূল্য বাড়াতে সভার কার্যবিবরণী জালিয়াতি : জমি ক্রয়ে প্রকৃত ব্যয় গোপন করে ক্রয়ের ব্যয় বেশি দেখিয়ে তা ফারইস্ট ইসলামী লাইফের বোর্ডসভা ও সাব কমিটির সভায় অনুমোদন দেখাতে দফায় দফায় জালিয়াতি করে পরিবর্তন করা হয় কার্যবিবরণী। মিরপুরের গোড়ান চাটবাড়িতে জমি কেনার সিদ্ধান্ত হয় ১৮ জুন ২০১৩ সালে ইনভেস্টমেন্ট অ্যান্ড রিয়েল এস্টেট ডেভেলপমেন্ট সাব কমিটির ২৩২তম সভায়। এ সভায় জমির পরিমাণ বলা হয় ২৫ বিঘা। জমির দাম উল্লেখ করা হয় প্রতিকাঠা ১৮ লাখ টাকা। এই হিসাবে মোট জমির দাম ৯০ কোটি টাকা। ওই সভার কার্যবিবরণীর অন্য কোনো এজেন্ডাতেও মিরপুরের জমি কেনার বিষয়ে অন্য কোনো আলোচনা নেই। পরে ২৩২তম সভার একটি সারসংক্ষেপ কার্যবিবরণী তৈরি করা হয়। যার সঙ্গে মূল কার্যবিবরণীর তথ্যের কোনো মিল নেই। এই সারসংক্ষেপ কার্যবিবরণীতে প্রতি ডেসিমেল/শতক জমির মূল্য উল্লেখ করা হয় ৩০ লাখ টাকা। মোট জমির পরিমাণ ৭৬৩ ডেসিমেল (৪৬২ কাঠা বা ২৩.৩ বিঘা)। এর মধ্যে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ কো-অপারেটিভ সোসাইটির অংশ ৩৮১ ডেসিমেল (২৩১.৩১২ কাঠা বা ১১.৫৬৫ বিঘা)।

সারসংক্ষেপ এই কার্যবিবরণীতে প্রজেক্ট খরচ শিরোনামে খরচের নতুন একটি হিসাব তুলে ধরা হয়। এতে হিসাব দেওয়া হয়, মূল প্রজেক্ট খরচ ১১৪ কোটি ৪৯ লাখ ৯৫ হাজার টাকা। এর সঙ্গে অন্য খরচ হিসাবে যোগ করা হয়- প্রকৃত সরকারি রেজিস্ট্রেশন খরচ, বিবিধ খরচ, দলিল মূল্যের ওপর ১১.৫০ শতাংশ হারে রেজিস্ট্রেশন খরচ। আরও উল্লেখ করা হয় জমি কেনা হবে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ কো-অপারেটিভ সোসাইটির নামে। জমির মূল্য ফারইস্ট ইসলামী লাইফের তহবিল থেকে সরাসরি জমির মালিককে পরিশোধ করা হবে।

সারসংক্ষেপ কার্যবিবরণীতে ডিড ভ্যালুর শিরোনামে একটি ব্যাখ্যা দেওয়া হয়। এতে বলা হয়, ডিড ভ্যালু বলতে বুঝাবে সরকারিভাবে নির্ধারিত মৌজাভিত্তিক জমির মূল্য। এর সাথে সাবকবলা রেজিস্ট্রেশন খরচ ১১.৫০ শতাংশ হারে যোগ করা হবে। বিবিধ ভূমি উন্নয়ন খরচ শিরোনামে একটি ব্যাখ্যা দেওয়া হয় সারসংক্ষেপ কার্যবিবরণীতে। এতে বলা হয়, প্রজেক্ট খরচ থেকে ডিড ভ্যালু বাদ দিলে যা থাকবে তাই জমির উন্নয়ন খরচ। সারসংক্ষেপ কার্যবিবরণীতে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ এমপ্লয়িজ কো-অপারেটিভ সোসাইটিকে ৫০ কোটি টাকা ঋণ দেওয়ার কথাও তুলে ধরা হয়।

উল্লেখ্য, সারসংক্ষেপ কার্যবিবরণীতে উল্লিখিত এসবের কোনো তথ্যেই ছিল না ইনভেস্টমেন্ট অ্যান্ড রিয়েল এস্টেট ডেভেলপমেন্ট সাব কমিটির ২৩২তম সভার মূল কার্যবিবরণীতে। পরে ২৩২তম সভার কার্যবিবরণী জালিয়াতি করে আবারও পরিবর্তন করা হয়। দ্বিতীয় দফায় পরিবর্তন করে তা অনুমোদন দেখানো হয় ২৬৮তম ইনভেস্টমেন্ট ও রিয়েল এস্টেট সাব কমিটির সভায়। এতে নতুন করে যোগ করা হয়, জমি ক্রয়ে অতিরিক্ত খরচের প্রাইম ইসলামী লাইফের অংশ ৭১ কোটি টাকা ফারইস্ট ইসলামী লাইফের তহবিল থেকে ব্যয় করা হবে।

একই বোর্ডসভার দুই কার্যবিবরণী : অনুসন্ধানে দেখা যায়, ফারইস্ট ইসলামী লাইফের ১ জুলাই ২০১৩ সালে অনুষ্ঠিত ১৬৯তম বোর্ডসভার ১২নং এজেন্ডায় ফারইস্ট এমপ্লয়িজ কো-অপারেটিভ সোসাইটি গঠন ও নিবন্ধনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। একই সঙ্গে এই সোসাইটির জন্য ঢাকার মিরপুরে জমি কেনার জন্য ৫০ কোটি টাকা ঋণ দেওয়ার জন্য বোর্ড ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয়। এ ছাড়া মিরপুরের জমি কেনার বিষয়ে আর কোনো তথ্য নেই ১৬৯তম সভার কার্যবিবরণীর কোনো এজেন্ডায় বা আলোচনায়। ১৪নং বিবিধ আলোচনায় ১ ও ২ নামে উপধারার পর সভা সমাপ্তির ঘোষণা দিয়ে স্বাক্ষর করেন বোর্ডের সভাপতি নজরুল ইসলাম। অথচ ১৬৯নং সভার সারসংক্ষেপ কার্যবিবরণীর ১৪নং বিবিধ আলোচনায় নতুন করে ৩নং আলোচ্যসূচি যোগ করে তৈরি করা হয় আরও একটি কার্যবিবরণী। এতে জালিয়াতি করে তৈরি করা ইনভেস্টমেন্ট অ্যান্ড রিয়েল এস্টেট সাব-কমিটির ২৩২নং সভার সারসংক্ষেপ কার্যবিবরণীর বিস্তারিত তুলে ধরে তা অনুমোদন দেখানো হয়। ১৬৯তম সভার মূল কার্যবিবরণীতে জমির মূল্য খরচের হিসাবের কোনো তথ্য ছিল না।

জালিয়াতি করে তৈরি করা সেই রিয়েল এস্টেট সাব-কমিটির ২৩২নং সভার সারসংক্ষেপ কার্যবিবরণী এবং ১৬৯নং বোর্ডসভার সারসংক্ষেপ কার্যবিবরণী আবার অনুমোদন দেখানো হয় ২১১নং বোর্ডসভায়।

১০৪ কাঠা জমি কেনা হয় বোর্ডসভার সিদ্ধান্তের আগেই : দুই কোম্পানির দুই সোসাইটির নামে জমি কেনা হয় ফারইস্ট ইসলামী লাইফের বোর্ডসভার অনুমোদনের আগেই। ১৬৯তম সভায় ফারইস্ট ইসলামী কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড গঠন করে প্রতিষ্ঠানটির নামে মিরপুরে জমি ক্রয়ের জন্য ৫০ কোটি টাকা ঋণ দেওয়ার অনুমোদন দেওয়া হয় ২০১৩ সালের ১ জুলাই। অথচ এম তাজুল ইসলামের কাছ থেকে কেনা ১৬৫ শতাংশ জমি কেনা হয় ২৭ জুন ২০১৩ সালে। এর মধ্যে ৭৪৮৮নং দলিলে কেনা হয় ৭৪.৫৮ শতাংশ ও ৭৪৮৯নং দলিলে কেনা হয় ৯০.৪২ শতাংশ জমি। দুটো দলিলেই আমমোক্তার এম তাজুল ইসলাম।

আইডিআরএর অনুমোদনের ৩৮ দিন আগেই জমি কেনে ফারইস্ট : ফারইস্ট ইসলামী লাইফ এমপ্লয়িজ কো-অপারেটিভ সোসাইটির কাছ থেকে ৩৮১ শতাংশ জমি ক্রয়ের জন্য ৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ সালে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) কাছে আবেদন করে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স। আইডিআরএ জমি ক্রয়ের অনুমোদন দেয় ২৩ জুন ২০১৬। অথচ ফারইস্ট জমি ক্রয় করে অনুমোদনের ৩৮ দিন আগে ১৫ মে ২০১৬ সালে। অন্যদিকে আইডিআরএর অনুমোদন পত্রে শর্ত দেওয়া হয় জমি ক্রয়ে নগদে কোনো লেনদেন করা যাবে না। অথচ ফারইস্ট ইসলামী লাইফ সব জমি ক্রয়ে নগদ টাকা লেনদেন করে।

ফারইস্টের আর্থিক প্রতিবেদনেও গোঁজামিলের হিসাব : ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ২০১৬ সালের আর্থিক প্রতিবেদনে ১৮নং অ্যাডভান্স ফর কনস্ট্রাকশন ল্যান্ড অ্যান্ড ল্যান্ড ডেভেলপমেন্ট শিরোনামে ব্যয় দেখানো হয় ২৩৭ কোটি ২০ লাখ টাকা। অথচ ২০১৭ সালের আর্থিক বিবরণীতে ২০১৬ সালের সেই হিসাব দ্বিগুণ পরিবর্তন করে দেখানো হয় ৫৭৯ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোনো কোম্পানি পুরনো আর্থিক প্রতিবেদন পরিবর্তন করার সুযোগ নেই। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের আইনে অর্থ হিসাব পরিবর্তন চরম জালিয়াতি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

মেয়াদ শেষ হলে টাকা মিলছে না গ্রাহকের : মেয়াদ শেষ হলেও বীমার টাকা (বীমা দাবি) পাচ্ছে না ফারইস্ট ইসলামী লাইফের হাজার হাজার গ্রাহক। বছরের পর বছর ঘুরেও মিলছে না কষ্টের জমানো টাকা। অনেকে জুতার তলা ক্ষয় করে হতাশায় দিন কাটাচ্ছেন। এমনই একজন গ্রাহক তোফাজ্জল হোসেন। শেরপুরের এ বাসিন্দা ১০ লাখ টাকার বীমা করে ফেরত পাননি তার টাকা। এক বছর আগে বীমার মেয়াদ শেষ হলেও কোম্পানি তাকে নানা অজুহাতে ঘোরাচ্ছেন।

আরেক গ্রাহক কুড়িগ্রাম জেলার ওবায়দুর রহমান। ১১ বছর আগে তিনি দুটি পলিসি করেন। এক বছর আগে বীমার মেয়াদ শেষ হয়েছে। তিনিও টাকা পাচ্ছেন না। শুধু তোফাজ্জল হোসেন বা ওবায়দুর রহমানই নন- এ রকম হাজার হাজার গ্রাহকের টাকা মেরে দিয়েছেন ফারইস্ট ইসলামী লাইফের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম। বর্তমানে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমিয়েছেন। সেখানে গড়েছেন অট্টালিকা। তার দুর্নীতির কারণে আজ ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে প্রতিষ্ঠানটি। সূত্রঃ আমাদের সময়।

RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

Most Popular

Recent Comments