করোনার ভয় কাটিয়ে দীর্ঘ দেড় বছর পর আজ রোববার খুলেছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। প্রাণ ফিরেছে শিক্ষাঙ্গণে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার প্রথম দিনে ঢাকার বিভিন্ন স্কুল পরিদর্শন করেছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। পরিদর্শন শেষে ড্রেস ও ফি আদায়ের ক্ষেত্রে স্কুলগুলোকে কড়াকড়ি না করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। আজ রোববার আজিমপুর গার্লস স্কুল ও কলেজে একটি প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এই আহ্বান জানান।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘করোনা সংক্রমণ যদি আবারও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয় তাহলে শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে না রেখে আবার আগের অবস্থায় ফিরে যাওয়ার বিকল্প হাতে রয়েছে। এর আগে স্কুল খোলার ঘোষণা দেওয়ার সময় বেশকিছু শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছিল।’
দীপু মনি বলেন, ‘স্কুল-কলেজ খোলার কারণে সব শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের মধ্যে উৎসাহ উদ্দীপনা রয়েছে। তবে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্যবিধি এবং সরকারি শর্ত মানা হচ্ছে কিনা তা নজরদারিতে আনতে কর্তৃপক্ষ আকস্মিক পরিদর্শনে যাবে।’ এ ছাড়া যেসব বিষয়ে তিনি তথ্য দেন সেগুলো হচ্ছে-
ড্রেস নিয়ে কড়াকড়ি নয়
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘বর্তমানে শুধু করোনা নয়, বরং তার সঙ্গে ডেঙ্গুরও মৌসুম চলছে। শিক্ষার্থীরা স্কুলে আসার সময় এডিস মশা বেশি কামড়ায়। সে কারণে শিক্ষার্থীদের পুরো হাতা জামা, ফুল প্যান্ট-পাজামা পরে আসার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘গত দেড় বছরে অনেক শিক্ষার্থী ড্রেসের তুলনায় বড় হয়ে গেছে, এ ছাড়া এই মুহূর্তে স্কুল ইউনিফর্ম সব অভিভাবকের পক্ষে তৈরি করা সম্ভব নাও হতে পারে।’
ফি আদায়ে মানবিক হোন
দীপু মনি বলেছেন, ‘স্কুল কর্তৃপক্ষকে ফি আদায়ে মানবিক হতে হবে। যেসব ফি নেওয়াটা প্রয়োজন সেই ফি-ই এখন আদায় করা যাবে। তবে এখানে যদি কোনো শিক্ষার্থী ফি দিতে অপারগ হয় তাহলে সেখানে মানবিক আচরণ করতে হবে।’
করোনাভাইরাসের কারণে কোনো শিক্ষার্থীর পরিবারে অর্থনৈতিক বিপর্যয় ঘটে গেলে, ফি পরিশোধের বিষয়ে তাদেরকে কিস্তিতে পরিশোধ করা যায় কিনা সেটি বিবেচনায় নিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে অনুরোধ করেন শিক্ষামন্ত্রী। তবে স্কুল পরিচালনা, শিক্ষকদের বেতন-ভাতা প্রভৃতিও শিক্ষার্থীদের বেতনের উপর নির্ভর করে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘অভিভাবকদেরও এ বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে।’
সিলেবাস পরিবর্তন
‘যাদের একদিন ক্লাস হবে তাদের কিছুটা ক্ষতি হবে উল্লেখ করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, মুখোমুখি ক্লাস একদিন হলেও তাদের অ্যাসাইনমেন্ট চলবে, অনলাইনে ক্লাস চলবে, টেলিভিশন ক্লাস চলবে। এ ক্ষেত্রে পরীক্ষা নেওয়ার মতো পরিস্থিতি হলে তাদের অবশ্যই পরীক্ষা নেওয়া হবে।’
দীপু মনি বলেন, শিক্ষার্থীরা যে ক্ষতির মুখে পড়েছেন তা কিভাবে পূরণ করা হবে সে বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। তবে সেই অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে যে সিলেবাস কমানো হবে, নাকি চলতি শিক্ষাবর্ষকে বাড়ানো হবে নাকি পরবর্তী শিক্ষাবর্ষে অতিরিক্ত ক্লাস বা রেমেডিয়াল ক্লাস করিয়ে সেটি পুষিয়ে নেওয়া হবে।
অভিভাবকদের স্কুলের সামনে অপেক্ষা না করার অনুরোধ
স্কুলের ভেতরে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের প্রবেশ করতে দেওয়া না হলেও অনেক অভিভাবকই সন্তানকে স্কুলে দিয়ে বাইরে অপেক্ষা করতে থাকেন। এ বিষয়টি করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায় উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেছেন, ‘অভিভাবকরা যাতে স্কুলের বাইরে অপেক্ষা না করেন।’
‘আর যাদেরকে অপেক্ষা করতেই হবে বা ফেরত যেতে পারবেন না তাদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরস্পর থেকে নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে অপেক্ষা করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। অভিভাবকরা যদি সবাই এভাবে বাইরে ভিড় করেন তাহলে এটাই স্বাস্থ্য ঝুঁকির কারণ হব ‘, যোগ করেন মন্ত্রী।
বিশ্ববিদ্যালয় কবে খুলবে?
বিশ্ববিদ্যালয় খোলার বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, সিন্ডিকেট এবং একাডেমিক কাউন্সিলের বিষয় বলে উল্লেখ করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘গত ২৬ অগাস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের সঙ্গে বৈঠকে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার বিষয়ে মধ্য অক্টোবরের কথা জানানো হয়েছিল।’ স্কুল যেহেতু খোলা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে আগে খোলা যায় কিনা সে বিষয়ে আবারও বৈঠকে বসার কথা জানান তিনি। এরই মধ্যে আবাসিক শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়া হয়ে গেছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অনাবাসিক শিক্ষার্থীদেরও কমপক্ষে এক ডোজ টিকা দেওয়ার পর ক্যাম্পাসে ফেরাতে চান বলে জানান মন্ত্রী। সূত্রঃ আমাদের সময়।