রাজধানীর বনানীর বহুতল ভবন এফ আর টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডে আহত প্রায় অর্ধশত ব্যক্তিকে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
রাত যত গভীর হচ্ছে, বনানীর আগুনে পোড়া লাশের সংখ্যা তত বাড়ছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার কিছুক্ষণ আগে ফারুক রূপায়ণ (এফআর) টাওয়ারের আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর থেকেই চলছে লাশের সন্ধান। একের পর এক ব্যাগ ভর্তি করে লাশ বের করা হচ্ছে। এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ব্যাগ ভর্তি করে ২৫টি লাশ বের করা হয়েছে। আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে ৭০জনকে। নিহতদের দুই একজনের নাম-পরিচয় জানা গেলেও অধিকাংশেরই অজানা। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে ভবনের ভেতরে আরও অনেক লাশ রয়েছে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন শুক্রবার সকাল ১০টা পর্যন্ত উদ্ধার অভিযান চলবে। তখনই হয়তো বনানীর আগুনে কতজন মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন তা জানা যাবে সঠিক ভাবে।
এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় স্থাপিত ফায়ার সার্ভিসের কন্ট্রোল রুম থেকে রাতে নিহতের সংখ্যা ২৫ ও আহতের সংখ্যা ৭০ বলে নিশ্চিত করা হয়। দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয় বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।
বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফরমান আলীর বক্তব্য থেকে নিহতদের মধ্যে সাতজনের নাম জানা গেছে। তাঁরা হলেন, পারভেজ সাজ্জাদ (৪৭), আমেনা ইয়াসমিন (৪০), মামুন (৩৬), শ্রীলঙ্কার নাগরিক নিরস চন্দ্র, আবদুল্লাহ আল ফারুক (৩২), মাকসুদুর (৬৬) ও মনির (৫০)।
পুলিশ সূত্রে থেকে জানানো গেছে, আমেনা মারা গেছেন অ্যাপোলো হাসপাতালে। পারভেজ সাজ্জাদ বনানী ক্লিনিকে, নিরস চন্দ্র কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে এবং মামুন, মাকসুদুর ও মনির ইউনাইটেড হাসপাতালে মারা গেছেন। এ ছাড়া ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা গেছেন আবদুল্লাহ আল ফারুক।0
আরো পড়ুন : শক্রবার সকাল ১০টা পর্যন্ত উদ্ধার অভিযান চলবে
রাজধানীর বনানীর এফ আর টাওয়ারে উদ্ধার ও সার্চ অপারেশন শুক্রবার (২৯ মার্চ) সকাল ১০টা পর্যন্ত চলবে বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাজ্জাদ হোসাইন। বৃহস্পতিবার রাতে ঘটনাস্থলে সামগ্রিক বিষয় নিয়ে গণমাধ্যমের সাথে কথা বলেন তিনি।
সাজ্জাদ হোসাইন বলেন, শুক্রবার সকাল ১০টার পর এফ আর টাওয়ার পুলিশের তত্ত্বাবধানে ছেড়ে দেওয়া হবে।
আগুনের তীব্রতা ৮-১০ম তলায় বেশি ছিল জানিয়ে ফায়ারের ডিজি বলেন, কী কারণে বা কোন জায়গা থেকে আগুনের সূত্রপাত তা তদন্ত সাপেক্ষে জানা যাবে। ভবনটিতে অগ্নি নির্বাপণ যন্ত্রের যথেষ্ট ব্যবস্থা ছিল না। যেগুলো ছিল সেগুলো ইউজঅ্যাবল ছিল না। এমনকি সে পাইপটি আগুন নিয়ন্ত্রণের কাজে ব্যবহার হয় সেটিও পুড়ে গেছে। ভবনের ভেতর থেকে দুই দফায় রাতে ৯টি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। ভেতরে এখনো ফায়ার সার্ভিসের ১২-১৫টি দল উদ্ধার কাজ চালাচ্ছেন।
এদিকে রাত সাড়ে ৮টায় শেষ কবর পাওয়া পর্যন্ত ১৯ জনের লাশ উদ্ধারের খবর পাওয়া গেছে। এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে ফায়ার সার্ভিস থেকে জানানো হয়েছে।
রাজধানীর বনানীর কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউয়ের এফআর টাওয়ারের আগুন নিয়ন্ত্রনে এসেছে। কিন্তু মৃতের সংখ্যা বাড়ছেই। এই রিপোর্ট লেখার সময় ১৯ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হয়েছে। এদের মধ্যে ইউনাইটেড হাসপাতালে তিনজন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে দুজন, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে একজন এবং ঘটনাস্থলে ১৩ জন মারা গেছেন। এছাড়া আহত হয়েছেন ৭০ জন।
হতাহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেন ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক (ডিডি) দিলীপ কুমার ঘোষ। সন্ধ্যায় প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের তিনি এ তথ্য জানান।
এদিকে আগুনের ঘটনায় আহতদের ছয়টি হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা নাগাদ কুর্মিটোলা হাসপাতালে ১৫ জন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছয়জন, ইউনাইটেড হাসপাতালে ১০ জন, অ্যাপোলো হাসপাতালে নয়জন, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে পাঁচজন ও বনানী ক্লিনিকে দুইজন ভর্তি হয়েছেন বলে এসব হাসপাতাল-ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
বেলা ১টার দিকে কামাল আতাতুর্ক এভিনিউয়ের ৩২ নম্বর হোল্ডিংয়ে ২২ তলা ওই ভবনে আগুন লাগার পুরো এলাকা ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যায়। ফায়ার সার্ভিসের প্রায় দুই ডজন ইউনিটের কয়েক ঘণ্টার চেষ্টায় সন্ধ্যার আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।
সন্ধ্যার আগেই এ ঘটনায় অন্তত সাতজনের মৃত্যু হয়, যাদের অধিকাংশই আগুন থেকে বাঁচতে ওই ভবন থেকে লাফ দিয়েছিলেন। আগুন নেভানোর পর রাতে ভবনটির পোড়া ফ্লোরগুলোতে ঢুকছেন উদ্ধারকর্মীরা, এরইমধ্যে কয়েকজনের লাশ বের করেছেন তারা।
এ ঘটনায় আহতদের মধ্যে কুর্মিটোলা হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন মামুন
(৩০), হাবিবুর রহমান, মুশফিকুর রহমান, মুরাদ (ময়মনসিংহ), মহিউদ্দিন (২৩),
আরিফ (৩২), মো. রেজাওয়ান আহমেদ (৪০), ফাহিম ফয়সাল (৩০), হিমু (৩০), সুশান্ত
(৪০), ফজলুল (২৫), আব্দুল মান্নান, রিফাত (৩৫), নাজমুল হক (৩৫), স্মৃতি
(২০), মোতাহার হোসেন (৪০) মফি।
ইউনাইটেড হাসপাতালের জনসংযোগ বিভাগ জানিয়েছে, এ ঘটনায় আহত ২৬ জনকে তাদের ওখানে নেওয়া হয়। তাদের মধ্যে তিনজন আগেই মারা যান। তারা হলেন- মো. মনির (৫০), মামুন (৩৬) ও মাকসুদুর রহমান (২৫)। তাদের সবার লাশ এখন এই হাসপাতালের মর্গে আছে। আহতদের মধ্যে ১৩ জন প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে চলে গেছেন। এখন এই হাসপাতালে ভর্তি আছেন ১০ জন। তাদের মধ্যে চারজন স্পেশাল কেয়ার ইউনিটে, একজন জেনারেল কেয়ার ইউনিটে এবং পাঁচজন জেনারেল ওয়ার্ডে।
তাদের সবাই ধোঁয়ার কারণে শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় ভুগছেন। কারও অবস্থায়ই আশঙ্কাজনক নয়। অ্যাপোলো হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্মকর্তা কিশোর গোড়াল জানান, আহত নয়জন তাদের ওখানে ভর্তি আছেন। তাদের মধ্যে চারজনকে জেনারেল কেয়ার ইউনিটে রাখা হয়েছে। বাকি পাঁচজন ভর্তি আছেন জেনারেল ওয়ার্ডে।
এছাড়া এই হাসপাতালে আনার পথে শাহেদা আমিনা ইয়াসমিন (৪৮) নামে একজন নারীর মৃত্যু হয়েছে।
‘তিনি আগুন লাগার পর ভবনের পাশে একটি কেবল বেয়ে নামতে গিয়ে নিচে পড়ে গিয়ে গুরুতর আহত হন। তাকে অ্যাপোলোতে আনার পথে তিনি মারা গেছেন।’ এখন চিকিৎসাধীন সবাই আশঙ্কামুক্ত বলে জানান কিশোর।
বিকালে আহত পাঁচজনকে ঢাকা মেডিকল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর তাদের মধ্যে আব্দুল্লাহ আল ফারুক নামে একজনকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
সে সময় শরীরে জখম ও আঘাত নিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন শ্রীলংকান নাগরিক সিরি ইন্দ্রিকা (৪৬), আবু হোসেন (৩৫), সাব্বির আলী মৃধা (২৫) ও রেজোয়ান আহমেদ (৩৭)। তাদের মধ্যে সিরি ইন্দ্রিকা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে চলে গেছেন।
পরে সন্ধ্যায় উদ্দীপন ভক্ত নামে একজন ফায়ার সার্ভিস কর্মীকে এই হাসপাতালে আনা হয়। এফ আর টাওয়ারে উদ্ধার অভিযানে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন তিনি।
রাত সাড়ে ৮টার দিকে তৌকির ইসলাম রূপক (২১) ও আব্দুস সবুর (৪২) নামে আহত দুজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়। তারা শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় ভুগছেন।
এছাড়া সন্ধ্যার দিকে ওই ভবন থেকে উদ্ধারের পর অজ্ঞাত পরিচয় (৪০) এক নারীর লাশ ঢাকা মেডিকেলে নেয়া হয়। সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে পাঁচজন ভর্তি আছেন বলে আএসপিআরের সহকারী পরিচালক রাশেদুল ইসলাম খান জানিয়েছেন। এদের বাইরে জসিম উদ্দিন ও রেজওয়ান ইসলাম নামে দুজন বনানী ক্লিনিকে ভর্তি আছেন। তারা আশঙ্কামুক্ত বলে সেখানকার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।