fbpx
বৃহস্পতিবার, ডিসেম্বর ১২, ২০২৪
বাড়িবাংলাদেশঅপরাধসিলেটে এটিএম বুথের টাকা লুট

সিলেটে এটিএম বুথের টাকা লুট

চার সদস্যের দল তাদের। এর মধ্যে দুজন প্রবাসফেরত। লোকচক্ষুর সামনে পেশা তাদের ভিন্ন। কিন্তু অন্তরালে এক। টার্গেট করে ডাকাতি করেন। নিখুঁত পরিকল্পনা ছাড়া ‘অপারেশনে’ যান না। ছোটখাটো ‘অপারেশনে’ তাদের আগ্রহ কম। টার্গেটের শীর্ষে থাকে ব্যাংকের এটিএম বুথ।

‘অপারেশনে’ নেতৃত্ব দেন দুবাইফেরত শামীম। এটিএম বুথ লুটে তার রয়েছে ‘আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা’। চার সদস্যের মধ্যে তার সবচেয়ে বেশি আস্থাভাজন সাফি উদ্দিন জাহির। তিনিও দুবাইফেরত। বাকি দুই সদস্য নূর মোহাম্মদ ও আবদুল হালিমও কম যান না। স্থানীয়ভাবে চুরি-ডাকাতিতে সিদ্ধহস্ত।

এই চার সদস্যের ডাকাত দল মাস কয়েক আগে চেষ্টা চালিয়েছিল হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জের পূবালী ব্যাংকের একটি বুথ লুটের। কিন্তু ব্যর্থ হয়। তবে সফল হয়েছে তারা সিলেটে এসে। ওসমানীনগরের শেরপুরে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের (ইউসিবি) এটিএম লুট করেছে তারা। তাদের লুটের ধরন আর অভিজ্ঞতার ছাপ দেখে তাজ্জব বনতে হয়েছে পুলিশকেও। কিন্তু শেষ পর্যন্ত প্রযুক্তির কাছে হার মানতে হয় তাদের। প্রযুক্তির ব্যবহার আর পুলিশের বিচক্ষণতায় ধরা পড়েছে ডাকাত দলের চার সদস্যই। গতকাল আদালত ওই চার ডাকাত সদস্যের পাঁচ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছে। চার সদস্যের ডাকাত দলের তিনজনকে আটক করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের সদস্যরা।

বুধবার তাদের নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন ডিএমপির যুগ্ম-কমিশনার হারুন অর রশীদ। ঢাকায় ডিবির হাতে ধরা পড়া তিন ডাকাত সদস্য ছিল নূর মোহাম্মদ, শামীম আহমদ ও আবদুল হালিম। আর অপর সদস্য সাফি উদ্দিন জাহিরকে গ্রেফতার করে সিলেট জেলা পুলিশ।

গতকাল সিলেট জেলা পুলিশের সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার মো. ফরিদ উদ্দিন জানান, চার সদস্যের ডাকাত দলের সর্দার হবিগঞ্জের শামীম আহমদ। কয়েক বছর আগে তিনি দুবাই থেকে দেশে ফেরেন। দুবাইয়ে থাকা অবস্থায় পরিচয় হয় একই জেলার পাঁচপাড়িয়া গ্রামের সাফি উদ্দিন জাহিরের সঙ্গে। একসময় জাহিরও দেশে চলে আসেন। দেশেও দুজন মিলে চুরি-ছিনতাইসহ নানা রকম অপকর্ম করতেন। দুজন মিলে সিলেট নগরী থেকে মোটরসাইকেল ছিনতাইও করতেন। একপর্যায়ে শামীমের নেতৃত্বে গড়ে ওঠে চার সদস্যের ডাকাত দল। পরিকল্পনামাফিক তারা বড় বড় ডাকাতি শুরু করে। হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জে পূবালী ব্যাংকের একটি এটিএম বুথ লুটের চেষ্টা করে তারা ব্যর্থ হয়।

এর মধ্যে ১৮ আগস্ট মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের আজমিরী ফ্লাওয়ার মিল থেকে মোটা অঙ্কের টাকা লুট করে তারা। গত রমজান মাসে সিলেট থেকে ফেরার পথে শামীম ও জাহিরের চোখ পড়ে ওসমানীনগরের শেরপুরে ইউসিবি ব্যাংকের বুথের দিকে। বুথের সামনে একটি বড় গাছ থাকায় তারা টার্গেট করে ওই বুথকে। পরিকল্পনামাফিক ১২ সেপ্টেম্বর তারা ‘অপারেশন’ চালান সেখানে। বুথে দায়িত্বরত নিরাপত্তারক্ষীকে জিম্মি করে তারা লকার ভেঙে লুটে নেয় প্রায় ২৪ লাখ টাকা।

এ ঘটনার পর ঘুম হারাম হয়ে ওঠে সিলেট জেলা পুলিশের। জড়িতদের গ্রেফতারে তারা সাহায্য চায় ডিএমপির গোয়েন্দা ও সাইবার ইউনিটের। আজমিরী ফ্লাওয়ার মিল ও ইউসিবি ব্যাংকের বুথের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে পুলিশ নিশ্চিত হয় উভয় ঘটনা একই ডাকাত দলের কাজ। পুলিশ সুপার ফরিদ উদ্দিন জানান, ডাকাত দলের সর্দার শামীম বিদেশেও ব্যাংকের এটিএম বুথ ডাকাতি করেছেন। এটিএম বুথ ডাকাতির ঘটনায় তিনি ওমানে আট বছর জেল খেটে দেশে আসেন। এটিএম বুথের মধ্যে একটি গোপন ক্যামেরা লাগানো থাকে, যা টাকা তুলতে আসা গ্রাহকরাও দেখতে পান না। কিন্তু ডাকাতির সময় প্রথমেই ওই চক্রের সদস্যরা সেই গোপন ক্যামেরাটিতে কালো রং লাগায়। এরপর বাকি সিসি ক্যামেরায়ও কালো কালি স্প্রে করে। ডাকাতির ধরন দেখেই বোঝা যাচ্ছিল চক্রটি অত্যন্ত পেশাদার ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত।

পুলিশ সুপার জানান, বুথের ঠিক ওপরেই ব্যাংকের শাখা। সেখানে একজন অস্ত্রধারী নিরাপত্তারক্ষী এবং নিচে বুথে আরেকজন ছিলেন। কিন্তু তারা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করেননি। ডাকাতরা হানা দেওয়ার সময় তারা ঘুমে ছিলেন। তারা মোটেও দক্ষ ও স্মার্ট ছিলেন না। ব্যাংকের নিরাপত্তাব্যবস্থায় মারাত্মক ত্রুটি ছিল। এটিএম লুটের সময় একটি ছাড়া বাকি সবগুলো সিসি ক্যামেরা বন্ধ ছিল। ফুটেজ রেকর্ড ছিল না। অথচ এর আগের ও পরের ফুটেজ রেকর্ড আছে। ব্যাংকের ম্যানেজারও সিসি ক্যামেরার পাসওয়ার্ড জানেন না। ফরিদ উদ্দিন জানান, এটিএম থেকে লুট করা ২৪ লাখ টাকার মধ্যে ১০ লাখ টাকা উদ্ধার করেছেন ডিএমপির সদস্যরা। শামীম জানিয়েছেন, তার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা করে রেখেছেন ৪ লাখ টাকা। আর বাকি টাকা দিয়ে তারা জুয়া খেলেছেন। ডাকাতি করা ছাড়াও ওই দলের সদস্যরা একসঙ্গে জুয়া খেলত বলে পুলিশকে জানিয়েছে তারা।

চার ডাকাতকে গতকাল সিলেটের সিনিয়র চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করে পুলিশ। শুনানি শেষে বিচারক মো. মাহবুবুর রহমান তাদের প্রত্যেকের পাঁচ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। সিলেটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. লুৎফর রহমান রিমান্ডের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

Most Popular

Recent Comments