সচেতন বার্তা, ১৪ জুলাই:বরগুনায় প্রকাশ্যে রিফাতকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনার পর থেকেই নানা ঘটনা ও তথ্যের কারণে সর্বত্র আলোচনায় চলে আসেন রিফাতের স্ত্রী মিন্নি। তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘাতক নয়ন বন্ডের সঙ্গে মিন্নির গোপন বিয়ের কাবিননামা ফাঁস, দু’জনের সাথেই সম্পর্ক ও হত্যাকাণ্ডের দিন মিন্নির সন্দেহজনক আচরণ সিসি টিভি ক্যামেরার ভিডিওতে প্রকাশের পর সমালোচনার ঝড় ওঠে। এরই মধ্যে নিহত রিফাতের বাবা শনিবার সংবাদ সম্মেলন করে হত্যাকাণ্ডের মূল হোতা হিসেবে দায়ী করছেন মিন্নিকেই। তবে পুলিশ বলছে, স্বচ্ছ তদন্তের স্বার্থে এককভাবে কোনো ব্যক্তিকে টার্গেট করছেন না তারা।
রিফাতকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় যে ভিডিওটি প্রথমে ভাইরাল হয় সেখানে স্ত্রী মিন্নির রিফাতকে বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টা সবমহলে দারুন প্রশংসিত হয়। তখন মিন্নি দাবি করেন নয়ন তাকে বিয়ের আগে থেকেই উত্যক্ত করে আসছিলো।
তবে কদিনের মধ্যেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আসতে শুরু করে ঘাতক নয়নের সাথে মিন্নির বেশ কিছু ছবি। কথা ওঠে রিফাতের আগে নয়নের সাথে মিন্নির গোপন বিয়ে নিয়েও। কেজি স্কুল সড়কের কাজী অফিসে পাওয়া যায় মিন্নি ও ঘাতক নয়ন বন্ডের কাবিননামা। সেখানে দেখা যায় গত বছরের ১৫ অক্টোবর মিন্নি বিয়ে করেন নয়ন বন্ডকে। কাজি আনিসুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
এমন পরিস্থিতিতে কথা পাল্টায় মিন্নি। নয়ন অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে কাগজে স্বাক্ষর ও ছবিগুলো তুলেছে বলে দাবি করে সে। মিন্নি বলে, ওগুলো আগের ছবি। আমাকে মেরে ফেলার কথা বলে ছবিগুলো তুলেছে। একদিন আমাকে জোর করে নিয়ে একটা পেপারে সাইন করিয়েছিল। সেটা কি পেপার ছিল আমি জানি না।
এরপরই ঘটনার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত একটি সিসি টিভি ফুটেজ হাতে আসে সাংবাদিকদের । তাতে দেখা যায় ঘটনার আগ মুহুর্তে পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার আগেই রিফাত ঘটনাস্থল ত্যাগ করতে চাইলেও মিন্নি কৌশলে কালক্ষেপণ করে কলেজ গেটে। রিফাতকে কলেজ গেট থেকে ধরে নিয়ে যাওয়ার সময়ও মিন্নির মধ্যে ছিল না কোন উৎকন্ঠা বা আতংক। আর কোপানো শেষে আহত অবস্থায় রিফাত তার স্ত্রী মিন্নির উপর ক্ষুদ্ধ হয়ে তাকে ছাড়াই চলে যায়।
এসব অবস্থার মধ্যেই শনিবার (১৩ জুলাই) রিফাত হত্যাকান্ডের মূল হোতা হিসেবে মিন্নিকে দায়ী করে সংবাদ সম্মেলন করেন মামলার বাদি নিহত রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ। এর স্বপক্ষে ১০টি কারণ তুলে ধরেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করে তিনি বলেন, কাজি সাহেবের সাক্ষাৎকার দেখেছি, কাবিনের কপি দেখেছি, নয়নের মায়ের সাক্ষাৎকার শুনেছি। এর ভিত্তিতে আমার মনে হয়েছে মিন্নি এর সাথে সম্পৃক্ত।
তিনি বলেন, আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি আগে নয়ন বন্ডকে বিয়ে করেছিল। ওই বিয়ে গোপন করে রিফাত শরীফকে বিয়ে করে মিন্নি। বিষয়টি আমাদের জানায়নি মিন্নি এবং তার পরিবার। কাজেই রিফাত শরীফ হত্যার পেছনে মিন্নির মদদ রয়েছে। তাকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনলে সব বিষয় পরিষ্কার হয়ে যাবে।
তিনি আরও বলেন, রিফাত হত্যাকাণ্ডের আগের দিন সকাল ৯টার দিকে নয়নের সঙ্গে দেখা করতে যায় মিন্নি। ওই দিন সন্ধ্যায় নয়নের বাসায় যায় মিন্নি। রিফাতের সঙ্গে বিয়ের পরও নয়নের বাসায় মিন্নির নিয়মিত যাতায়াত ছিল।
দুলাল শরীফ আরও বলেন, ঘটনার দিন রিফাতকে ছাড়া কলেজে গেলেও ঘটনার কিছু সময় আগে রিফাতকে বাসা থেকে কলেজে ডেকে নিয়ে যায় মিন্নি। কারণ হত্যাকারীদের সঙ্গে মিন্নির আগে থেকে যোগাযোগ ছিল। মোটরসাইকেলে কলেজ থেকে মিন্নিকে নিয়ে আসার জন্য রিফাত গেলে হত্যাকারীদের না দেখে আবার কলেজে ঢুকে যায় মিন্নি। সেই সঙ্গে সময় কাটাতে থাকে। পরে হত্যাকারীদের উপস্থিতি দেখে মিন্নি কলেজ থেকে বের হয়। ওই সময় মিন্নিকে নিয়ে আসতে গেলে আমার ছেলের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে হত্যাকারীরা।
অবশ্য পুলিশ বলছে, কোন ব্যক্তিকে উদ্দেশ্য করে নয় স্বচ্ছ তদন্তের মাধ্যমে আসামীদের ধরছে তারা।
পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন বলেন, সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে, পেশাদারিদ্বের স্বার্থে আমাদের তদন্ত প্রক্রিয়া চলমান রেখেছি।
গত মাসের ২৬ জুন বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে রিফাতকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করে নয়ন বন্ড ও তার বাহিনী। এ ঘটনায় রিফাতের বাবা মিন্নিকে এক নম্বর স্বাক্ষী রেখে মামলা করলেও এখন স্বাক্ষীকেই আসামী হিসেবে দাবি করছেন তিনি।