সচেতন বার্তা, ১৪ জুলাই:এরশাদ হামার জাগার ছাওয়া। সারা জীবন তায় (তিনি) হামার ঘরের ছাওয়া হিসেবে কাছোত আছিলো। ভোট করছে। সোগ সময় (সব সময়) লাঙ্গল নিয়া জিতিছে। এ্যালা মরার পর ক্যানে তায় হামার বাইরোত থাকপে। আগত (আগে) রংপুর যেমন তার ঠিকানা আছিলো, মরিয়াও য্যান তার শেষ ঠিকানাটা রংপুরতই হয়।’এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন এরশাদভক্ত তফেল উদ্দিন।
শতবর্ষী এই বৃদ্ধ কখনও টেলিভিশনের পর্দায় কখনও বা পত্রিকার পাতায় এরশাদের শারীরিক অবস্থার খোঁজ-খবর নিতেন। তার মতো হাজারও এরশাদভক্ত ও জাতীয় পার্টির দলীয় নেতাকর্মী, সমর্থকদের চোখ এখন মিডিয়ার দিকে। সবার আকুতি রংপুরই হোক এরশাদের শেষ ঠিকানা।
বৃদ্ধ তফেল উদ্দিনের মতোই আরেক এরশাদভক্ত সাজ্জাদ হোসেন। পেশায় তিনি রিকশাচালক। আক্ষেপ নিয়ে তিনি বলেন, ‘সারা জীবন এরশাদ সাইবোক (সাহেব) ভোট দিনো। দুনিয়ার মানুষ জানে এরশাদ সাইব রংপুরের ছাওয়া। এ্যালা শোনতোছি তার কবর নাকি রংপুরের বাইরোত হইবে। মুই চাও রংপুরের মাটিতে তার জাগা হোউক।’
এরশাদ ভক্তদের মতো জাতীয় পার্টির তৃণমূলের নেতাকর্মী ও সমর্থকরাও চাইছেন রংপুরেই তাদের নেতার সমাধি করা হোক।
জাতীয় ছাত্রসমাজের জেলার যুগ্ম আহ্বায়ক ইঞ্জিনিয়ার আল-আমিন সুমন বলেন, ‘এরশাদ স্যারের পরিবারের বেশির ভাগই রংপুরে শায়িত আছেন। তার প্রতি রংপুরের মানুষের আলাদা ভালোবাসা রয়েছে, যা কোনোদিনই শোধ করা যাবে না। তাই আমি মনে করি, স্যারের সমাধি রংপুরে করা হোক। রংপুরের মানুষ যেন তার সমাধিতে ফুল দিয়ে ভালোবাসাটুকু জানাতে পারে।’
মহানগর জাতীয় পার্টির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লোকমান হোসেন বলেন, ‘নব্বইয়ে সরকার পতনের পর এরশাদ স্যার জেলে বন্দি ছিলেন। রংপুর থেকেই তার মুক্তির আন্দোলন শুরু হয়েছিল। রংপুরের মানুষই তাকে ভোট দিয়ে জেল থেকে মুক্ত করেছেন। জাতীয় পার্টির জন্য, এরশাদ স্যারের জন্য এ অঞ্চলের মানুষের ভালোবাসার কোনও ঘাটতি নেই। তাই দলের সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য রংপুরের মাটিতেই স্যারের সমাধি করা উচিত।’
জাতীয় পার্টিকে ধরে রাখতে হলে এরশাদের সমাধি রংপুরে করাটা বেশি জরুরি বলে মনে করছেন রংপুর সদর উপজেলা জাতীয় পার্টির সদস্য সচিব ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মাসুদার রহমান মিলন।
তিনি বলেন, ‘জাতির জনকের সমাধি তার গ্রাম টুঙ্গিপাড়ায়। সেখানকার মানুষরা বঙ্গবন্ধুকে যেমন আগলে রেখেছেন, আমরাও আমাদের নেতাকে আগলে রাখব। এরশাদ স্যারের সমাধি তার অসিয়তকৃত পল্লীনিবাসে করা হোক, এটা রংপুরের মানুষের দাবি।’
দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও মহানগর জাতীয় পার্টির সভাপতি এবং রংপুর সিটি মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, ‘স্যার পল্লীনিবাসে তার সমাধি কমপ্লেক্স তৈরির কথা বলেছিলেন। একটা ডিজাইনও তিনি দেখিয়েছেন। আমরা বিষয়টি কেন্দ্রের সিনিয়র নেতাদেরও বলেছি। বৃহত্তর রংপুরের মানুষ চায়, স্যারের শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী রংপুরেই তার শেষ ঠিকানা হোক।’
এদিকে রংপুরের পল্লীনিবাস ভবনের কেয়ারটেকার মোসলেম উদ্দিন বলেন, স্যার রংপুরে আসলে এই বাসাতে থাকতেন। তিনি বিভিন্ন সময়ে তার মৃত্যুর পর এখানে সমাধি তৈরি করার কথা বলেছেন। জায়গাও দেখিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু এখন যে কোথায় তার সমাধি হবে, তা আমার জানা নেই।