সচেতন বার্তা, ১৫ জুলাই: ইয়াবা নিয়ে কঠোর অবস্থানের মধ্যে রাজশাহীর মাদক কারবারিরা পুরনো ব্যবসা হেরোইনের দিকে ঝুঁকছে। তারা সীমান্ত দিয়ে বিপুল পরিমাণ হেরোইন আনছে।
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক সূত্র মতে, গত ২৩ থেকে ২৬ জুন চার দিনে রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রায় তিন কোটি টাকা মূল্যের হেরোইনের চালান উদ্ধার করেছে র্যাব ও পুলিশ। পৃথক তিনটি অভিযানে এ হেরোইন উদ্ধার করা হয়। তিনটি অভিযানের সময় গ্রেপ্তার করা হয় তিনজনকে। এর মধ্যে হেরোইন পাচারের অন্যতম রুট রাজশাহীর গোদাগাড়ী থেকে উদ্ধার করা হয় দুই কেজি ৪০০ গ্রাম হেরোইন। আটক করা হয় দুজনকে।
রাজশাহীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইফতে খায়ের আলম জানান, গত ২৩ জুন সকালে এক কেজি ৪০০ গ্রাম হেরোইনসহ আল আমিন (২৫) নামের এক মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করা হয়। তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার অনুপনগর মহল্লার বাসিন্দা। গোদাগাড়ীর সারাংপুর গ্রামের জামাতের মোড় থেকে আল আমিনকে বাইসাইকেল এবং হেরোইনসহ হাতেনাতে আটক করা হয়।
পুলিশের আরেকটি সূত্র জানায়, আল আমিন হেরোইনবাহক ছিল। এর মালিক অন্য একজন। কিন্তু সে ধরাছোঁয়ার বাইরে। প্রায় এক কোটি ৪০ লাখ টাকা দামের এই হেরোইন ভারত থেকে পাচার করে আনে তারা। ভারতের চোরাকারবারিরা গোদাগাড়ী সীমান্ত দিয়ে যায়। এরপর হেরোইনগুলো কয়েক হাত ঘুরে নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব পায় আল আমিন। কিন্তু পথে পুলিশের হাতে সে গ্রেপ্তার হয়। তবে হোতাকে খুঁজে পায়নি পুলিশ। হয়তো কখনো তার নামও উঠে আসবে না। এভাবে আড়ালে থেকে এই অঞ্চলের মাদক কারবারিরা বছরের পর বছর ধরে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ম্যানেজ করে হেরোইন ব্যবসা করে আসছে। এ ব্যবসায় দিনমজুর, ডিম ব্যবসায়ী, কুলি, বাসের সুপারভাইজার, ভিক্ষুুকের ছেলে থেকে এখন অনেকে কোটিপতি। এ নিয়ে কালের কণ্ঠে একাধিক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন উঠে এসেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সম্প্রতি মাদকবিরোধী অভিযান শুরু করলে কারবারিরা বেশ কিছু দিন এলাকাছাড়া হলেও তারা আবারও এলাকায় ফিরে সক্রিয় হয়ে ওঠার চেষ্টা করছে। আবার কেউ পলাতক থেকেই নিয়ন্ত্রণ করছে বড় চালান।
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, এ মাদক কারবারিদের কেউ কেউ মাঝে ইয়াবা পাচারে জড়িত হয়ে পড়েছিল। তবে ইয়াবা পাচারটা এখন বেশি ঝুঁকিপূর্ণ বলে হাতের কাছে ভারতীয় সীমান্ত দিয়ে ফের হেরোইন পাচারে যুক্ত হয়ে পড়ে।
অন্যদিকে র্যাব-৫ জানায়, গত ২৬ জুন গোদাগাড়ী থেকে এক কেজি হেরোইনসহ এক ব্যবসায়ীকে আটক করা হয়। গোদাগাড়ীর মানিকচরে অভিযান পরিচালনা করে তুহিন (২৮) নামের ওই মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করা হয়। তুহিন একই এলাকার মৃত ইসমাইল হোসেনের ছেলে। তবে তুহিনও হেরোইনের বাহক ছিল বলে নিশ্চিত করেছে একটি সূত্র।
অন্যদিকে গত ২৫ জুন র্যাব-৫, রাজশাহীর সিপিসি-১, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ক্যাম্পের একটি দল চাঁপাইনবাবগঞ্জের পোলাডাঙ্গা গ্রাম থেকে আজহারুল ইসলাম ওরফে জ্যোতিকে ৫৮৫ গ্রাম হেরোইনসহ হাতেনাতে গ্রেপ্তার করে। এ মাদকের চালানটিও ভারতীয় সীমান্ত পার হয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রবেশ করে।
মাদকের পর পর কয়েকটি বড় চালান জব্দ সম্পর্কে জানতে চাইলে রাজশাহী মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক লুত্ফর রহমান বলেন, ‘মাঝে কিছুটা সময় এ ধরনের বড় চালান ধরা পড়েনি। এখন আবার পড়ছে। এটি আমাদের ভাবিয়ে তুলেছে। এসব হেরোইনের বড় চালান আনছে কারা, সেটি নিয়েও চিন্তিত আমরা। তবে পলাতক মাদক কারবারিরা এলাকায় ফিরেছে বলেও মনে হয় না। এসবের আড়ালে কেউ না কেউ কাজ করছে, যারা মাদক পাচার করে নিয়ে আসছে। আর ধরা পড়ছে হয়তো সাধারণ বাহকরা।’
ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, ‘আমাদের ধারণা, হোতারা মাদক বহনকারীদের পারিবারিক ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তা দেওয়ার পাশাপাশি ধরা পড়লে আইনগত সহায়তা দিয়ে থাকে। এ জন্য বাহকরা হেরোইনের বড় চালান নিয়ে ধরা পড়লেও সহজে বা আদৌ ঘটনার পেছনের হোতার নাম প্রকাশ করতে চায় না। এ কারণে বরাবরই আড়ালে থেকে যাচ্ছে রাঘব বোয়ালরা। তবে এদের ধরতেও আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’