বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রুমা সরকারকে দুদিনের রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। গতকাল রবিবার ঢাকার মহানগর হাকিম সাদবীর ইয়াসির আহসান চৌধুরী শুনানি শেষে আসামির জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘ভুয়া’ ভিডিও ছড়িয়ে সাম্প্রদায়িক উসকানির অভিযোগে রুমা সরকার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় গ্রেপ্তার হন।
আসামিপক্ষের আইনজীবীরা শুনানিতে বলেন, ‘আসামির বিরুদ্ধে যে ধারার অভিযোগ আনা হয়েছে, তার একটিও তার বিরুদ্ধে প্রযোজ্য নয়। তিনি ফেসবুক লাইভে যে বক্তব্য দিয়েছেন তা দিয়ে কোনো হিন্দু মুসলিমের ওপর হামলা করেনি। কোনো মসজিদ-মাদ্রাসাতেও হামলা হয়নি। তার ভিডিওতে কোনো উসকানিমূলক বক্তব্য নেই। তিনি একজন সরকারি চাকরিজীবী। সরকারের বিরুদ্ধে যায় এমন কোনো বক্তব্যও তিনি দেননি। আসামির সাত বছরের দুটি বাচ্চা রয়েছে, যারা বর্তমানে রুমা সরকারের বান্ধবীর কাছে রয়েছে। আর তার স্বামী রয়েছেন ভারতে।’ আইনজীবীরা আরও বলেন, ‘রুমা সরকার ছাত্রলীগের একজন কর্মী ছিলেন। বিটিভিতে উপস্থাপিকা, আবৃত্তিকারক ছিলেন। তার বাবা ও দাদা বীর মুক্তিযোদ্ধা। তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তা সঠিক নয়। অতিউৎসাহী হয়ে কেউ তার বিরুদ্ধে মামলা করেছে। জামিন দিলে আসামি পলাতক হবেন না।’ তবে শুনানি শেষে আদালত জামিন নামঞ্জুর করে আসামিকে কারাগারে প্রেরণের আদেশ দেন।
মামলা বলা হয়, রুমা সরকার সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নোয়াখালীর যতন সাহার হত্যার শিরোনামে একটি অন্য ঘটনার ভিডিও আপলোড করে কিছু স্বার্থান্বেষী মহলের হয়ে গুজব সৃষ্টির মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক সম্প্রতি বিনষ্টের অপপ্রয়াস চালান। প্রকৃতপক্ষে ভিডিওটি গত ১৬ মে বিকাল ৪টার সময় ঢাকার পল্লবীর শাহিন উদ্দিন নামে এক ব্যক্তিকে হত্যার দৃশ্য। দেশের এই সময়ে এ ধরনের স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে রুমা সরকার গত ১৯ অক্টোবর দুপুর ২টা ৩৫ মিনিট থেকে ২টা ৪২ মিনিট পর্যন্ত ফেসবুক লাইভে আসেন। সেখানে তিনি বলেন, ‘আমি ভুল করে যতন সাহার মৃত্যুর দৃশ্য দেখে ফেলেছিলাম। গরুর মাংস যেভাবে কুপিয়ে বানায়, আহা হিন্দুদের প্রতি তোর এত ক্ষোভ। তোরা অমানুষ, হত্যার পর এইভাবে কুপালী ক্যান?’ দেশের সাম্প্রতিক প্রেক্ষাপটে নাজুক পরিস্থিতিতে তার লাইভ ভিডিওটি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায় এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব ও ভয়ভীতি ছড়াতে সাহায্য করে।
এর আগে রাজধানীর বেইলি রোডের বাসা থেকে গত ১৯ অক্টোবর বিকালে রুমা সরকারকে আটক করে র্যাব-৩। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে র্যাব তার বিরুদ্ধে রমনা থানায় ওই মামলা দায়ের করেন। পরে গত ২১ অক্টোবর রুমা সরকারকে দুদিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ।