fbpx
বৃহস্পতিবার, ডিসেম্বর ১২, ২০২৪
বাড়িজাতীয়মামলার তথ্য জানতে চান জাতিসংঘের ৫ দূত

মামলার তথ্য জানতে চান জাতিসংঘের ৫ দূত

সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে কোন প্রেক্ষাপটে আটক করা হয়েছিল, তাঁর বিরুদ্ধে কী অভিযোগ এবং তাঁর অধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে কি না—এসব বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের কাছে লিখিতভাবে জানতে চেয়েছেন জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক পাঁচজন বিশেষ দূত।

বিশেষজ্ঞরা হলেন মত প্রকাশের স্বাধীনতা সুরক্ষা ও উৎসাহিতকরণবিষয়ক স্পেশাল র‌্যাপোর্টিয়ার আইরিন খান, আরবিট্রারি ডিটেনশনবিষয়ক ওয়ার্কিং গ্রুপের ভাইস চেয়ার মিরিয়াম অ্যাস্ট্রাদা-কাসতিল্লো, মানবাধিকারের ‘ডিফেন্ডারদের’ পরিস্থিতিবিষয়ক স্পেশাল র‌্যাপোর্টিয়ার মেরি ললর, নির্যাতন ও অন্যান্য নিষ্ঠুর, অমানবিক ও অবমাননাকর আচরণ বা শাস্তিবিষয়ক স্পেশাল র‌্যাপোর্টিয়ার নিলস মেলজার এবং নারীর প্রতি সহিংসতাবিষয়ক স্পেশাল র‌্যাপোর্টিয়ার ডুবরাভকরা সিমোনাভিচ।

জেনেভার একটি সূত্র জানিয়েছে, জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদ নিযুক্ত ওই বিশেষ দূতরা গত ২৮ জুন বাংলাদেশ সরকারকে যৌথ চিঠি পাঠান। চিঠিতে তাঁরা উল্লেখ করেছেন, তাঁরা তাঁদের ওপর জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদ অর্পিত দায়িত্বের অংশ হিসেবে ওই চিঠি পাঠান। পরবর্তী দুই মাসের মধ্যে চিঠির জবাব দিতে অনুরোধ জানিয়েছিলেন তাঁরা। সাংবাদিক রোজিনার বিষয়টি তাঁরা জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদকে অবহিত করবেন বলেও চিঠিতে উল্লেখ করেছিলেন। তবে ওই চিঠির জবাব এখনো জেনেভায় পৌঁছেনি।

সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে গত ১৭ মে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে আটকে রাখা, পরে থানায় নিয়ে যাওয়া, আদালতে তোলা, রিমান্ড আবেদন, কারাগারে পাঠানো, পাসপোর্ট জমা রাখা ও দেশ না ছাড়ার শর্তে ২৩ মে জামিন মঞ্জুর হওয়া এবং এরপর কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার তথ্য জাতিসংঘের বিশেষ দূতরা আমলে নিয়েছেন।

রোজিনা ইসলাম গত মঙ্গলবার ‘ফ্রি প্রেস অ্যাওয়ার্ড-২০২১’ পেয়েছেন। নেদারল্যান্ডসের আমস্টারডামভিত্তিক সংস্থা ফ্রি প্রেস আনলিমিটেড তাঁকে এই পুরস্কার দিয়েছে। সাহসী সাংবাদিকতার জন্য সেরা অদম্য সাংবাদিক বা ‘মোস্ট রেজিলিয়েন্ট জার্নালিস্ট’ শ্রেণিতে তিনি এই পুরস্কার পান।

জাতিসংঘের বিশেষ দূতরা বাংলাদেশ সরকারকে পাঠানো চিঠিতে লিখেছেন, কভিড মহামারি মোকাবেলায় স্বাস্থ্য খাতের কেনাকাটা ও অব্যবস্থাপনা নিয়ে সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার কয়েক সপ্তাহের মধ্যে তাঁকে আটকের ঘটনা ঘটেছে বলে তাঁরা জানতে পেরেছেন। বিভিন্ন সূত্রের অভিযোগ, সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের প্রতিবেদনগুলোর সঙ্গে তাঁকে আটক ও বিচারের মুখোমুখি করার যোগসূত্র থাকতে পারে।

জাতিসংঘের বিশেষ দূতরা চিঠিতে লিখেছেন, ‘রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে অভিযোগ দৃশ্যত কভিড-১৯ মহামারি মোকাবেলায় সরকারের উদ্যোগের বিষয়ে মত প্রকাশের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ায় আমরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি। তাঁকে গ্রেপ্তারের প্রেক্ষাপট আরো উদ্বেগের। কারণ তাঁর লেখালেখির কারণে তিনি বিচারের মুখোমুখি হয়ে থাকতে পারেন। আমরা ১৯২৩ সালে অফিশিয়াল সিক্রেসি অ্যাক্ট প্রয়োগের ব্যাপারেও উদ্বিগ্ন। ওই আইনটি রাষ্ট্রের নিরাপত্তাবিষয়ক বিশদ ও অস্পষ্ট আইন এবং শাস্তিও কঠোর।’

জাতিসংঘের বিশেষ দূতরা মহামারির সময় জনস্বাস্থ্যবিষয়ক অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার পটভূমিতে নিরাপত্তা সম্পর্কিত আইন প্রয়োগ নিয়েও গভীর উদ্বেগ জানান। তাঁরা লিখেছেন, গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর এই আইন প্রয়োগের প্রভাব অত্যন্ত বিরূপ।

সাংবাদিকতার কারণে রোজিনা ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে—এমন অভিযোগ সত্য হয়ে থাকলে তা ‘ইন্টারন্যাশনাল কোভেন্যান্ট অন সিভিল অ্যান্ড পলিটিক্যাল রাইটসের (আইসিসিপিআর)’ ৯ ও ১৯ নম্বর অনুচ্ছেদের লঙ্ঘন বলে উল্লেখ করেছেন জাতিসংঘের বিশেষ দূতরা। বাংলাদেশ ২০০০ সালের ৬ সেপ্টেম্বর ওই আন্তর্জাতিক চুক্তি অনুমোদন করে। ওই অনুচ্ছেদগুলোতে তথ্য চাওয়া, পাওয়া, প্রকাশসহ মত প্রকাশের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে।

জাতিসংঘের বিশেষ দূতরা বাংলাদেশের সংবিধানের ৩৯তম অনুচ্ছেদে চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা ও বাকস্বাধীনতা এবং জনস্বার্থে তথ্য দেওয়ার বাধ্যবাধকতাসহ ২০০৯ সালের তথ্য অধিকার আইন থাকার বিষয়টিও আমলে নিয়েছেন।

জাতিসংঘের বিশেষ দূতরা সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের সুরক্ষার জন্য সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছেন। একই সঙ্গে তাঁরা গ্রেপ্তার করা নিয়ে উত্থাপিত অভিযোগের বিষয়ে সরকারের কাছে তথ্য চেয়েছেন। রোজিনা ইসলামকে আটক ও গ্রেপ্তারের বিষয়ে ঘটনাক্রম ও আইনি তথ্য দিতে এবং আইসিসিপিআরের ১৯তম অনুচ্ছেদের সঙ্গে তাঁকে গ্রেপ্তার ও মামলার সামঞ্জস্য বিষয়েও জানাতে অনুরোধ জানিয়েছেন।

এ ছাড়া তথ্য অধিকার আইনে জনস্বার্থ সম্পর্কিত তথ্য প্রকাশে রাষ্ট্রের বাধ্যবাধকতার আলোকে গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে ‘অফিশিয়াল সিক্রেট অ্যাক্ট’ প্রয়োগের বিষয়ে সরকারের ভাবনাও জানতে চেয়েছেন জাতিসংঘের বিশেষ দূতরা। সূত্রঃ কালের কন্ঠ।

RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

Most Popular

Recent Comments