বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা বৃহস্পতিবার (২৫ নভেম্বর) সকাল থেকেই রাজধানীর গুলিস্তান, সায়েন্স ল্যাবরেটরি, শান্তিনগর, উত্তরা ও ফার্মগেটসহ বিভিন্ন স্থানে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ-সমাবেশ করেছেন।
শিক্ষার্থীদের দাবি, নিরাপদ সড়কের নিশ্চয়তা, গণপরিবহনে হাফ ভাড়া কার্যকর ও সড়ক দুর্ঘটনায় সহপাঠী নিহতের ঘটনায় জড়িতদের বিচার নিশ্চিত করা হোক। বুধবার দুপুরে গুলিস্তানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ময়লাবাহী একটি গাড়ির ধাক্কায় ঢাকা নটরডেম কলেজের ছাত্র নাইম হাসান মারা যান।
শিক্ষার্থীদের স্লোগানে মুখর হয়ে উঠে রাজধানীর রাজপথ। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় প্রচণ্ড যানজটের সৃষ্টি হয়। ফলে সাধারণ মানুষ গন্তব্যে পৌঁছাতে সীমাহীন ভোগান্তির মধ্যে পড়েছেন। এ সময় বিভিন্ন সড়কে যানবাহন আটকে গাড়ির প্রয়োজনীয় কাগজপত্র রয়েছে কি না তা দেখতে চান শিক্ষার্থীরা। এসময় গুলিস্তান এলাকায় একজন পুলিশ সদস্যের মোটরসাইকেলের কাগজপত্র না থাকায় কৈফিয়ত চান তারা। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সেখানে ছুটে এলে ‘আইন সবার জন্য সমান’ উল্লেখ করে পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা করার দাবি জানান।
এদিকে, রাজধানীর সায়েন্স ল্যাব এলাকায় বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও মুন্সী আবদুর রউফ স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীরা হাফ ভাড়া কার্যকর ও সড়ক দুর্ঘটনায় সহপাঠী নিহতের ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিচার দাবিতে বিক্ষোভ-সমাবেশ করেন। র শান্তিনগরে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ-সমাবেশ করেন। একই সময়ে সিদ্ধেশ্বরী ও উত্তরায় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ-সমাবেশ করেন। ফার্মগেটে একই দাবিতে হলিক্রস ও সরকারি বিজ্ঞান কলেজের শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করেন।
নটর ডেম কলেজের শিক্ষার্থীরা সকালে মতিঝিল এলাকা থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে গুলিস্তান যান। এসময় তারা জিরো পয়েন্টের কাছে সড়ক অবরোধ করে যান চলাচল বন্ধ করে দেন। তারা গণপরিবহনে হাফ ভাড়া নেয়ার সরকারি ঘোষণা ও প্রজ্ঞাপন জারির দাবি জানান। পাশাপাশি সহপাঠী নিহতের ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানানো হয়। দাবি আদায়ে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেন তারা।
মতিঝিল বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) আ. আহাদ বলেন, নটর ডেম কলেজের শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় গাড়িচালক রাসেল খান ছিলেন পরিচ্ছন্নতাকর্মী। গাড়িটির প্রকৃত চালক ছিলেন মো. হারুন। হারুনের কাছ থেকে চাবি নিয়ে সায়েদাবাদ থেকে গাড়ি নিয়ে বের হয় রাসেল।
তিনি বলেন, গাড়িটি চালাচ্ছিলেন রাসেল খান। তিনি প্রকৃতপক্ষে ওই গাড়ির চালক নয়। আমরা গাড়ির কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে ও গ্রেপ্তার রাসেলকে জিজ্ঞাসাবাদে করে জানতে পারি গাড়িটির মূল চালক হারুন।
অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখছেন প্রকৃত চালক গাড়িটির ভেতরেই ছিলেন এবং তিনি পালিয়ে যায়। বিষয়টি সত্য নয়। এখন তথ্য-প্রযুক্তির যুগ। কেউ পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। গাড়িতে প্রকৃত চালক ছিলেন না।
আ. আহাদ বলেন, সিটি করপোরেশনের বরাদ্দ দেয়া গাড়ির চালক হারুন। গাড়িটি চালানোর কথা হারুনের কিন্তু তিনি না চালিয়ে রাসেলকে দিয়ে চালাচ্ছিলেন। এরই মধ্যে হারুনকে গ্রেপ্তারে আমাদের অভিযান অব্যাহত। দ্রুতই তাকে আমরা আইনের আওতায় আনবো। হারুনকে গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে কেন রাসেলকে দিয়ে গাড়ি চালাচ্ছিলেন।
গ্রেপ্তার রাসেলের পরিচয় জানতে চাইলে এ পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, রাসেল সিটি করপোরেশনের কেউ না। তবে সিটি করপোরেশনের কিছু কাজ করেন। রাসেল জানিয়েছেন তার আত্মীয়-স্বজন সিটি করপোরেশনে চাকরি করে সেই সূত্র ধরে পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে কাজ করতেন। রাসেল জিজ্ঞাসাবাদে জানান এর আগেও গাড়িটি চালিয়েছেন।
গাড়ির চাবি সিটি করপোরেশনের কেউ দিয়েছিল নাকি হারুন দিয়েছিল এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, সিটি করপোরেশনের কেউ দেয়নি। গাড়ির চাবি হারুনই রাসেলকে দিয়েছিল।
গত ২৪ নভেম্বর বেলা ১১টা ২০ মিনিটে পল্টন মডেল থানার গুলিস্তান বঙ্গবন্ধু স্কয়ার গোলচত্বরের দক্ষিণ পাশে কলেজের মানবিক বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র নাঈম হাসান (১৮) রাস্তা পার হওয়ার সময় পূর্ব দিক থেকে আসা ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের একটি ট্রাক (রেজিঃ নম্বর ঢাকা মেট্রো-শ ১১-১২৪৪) চালক রাসেল খান বেপরোয়া গতিতে ময়লা নিয়ে সজোরে ধাক্কা মেরে রাস্তায় ফেলে দেয়।
ভিকটিমের মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে রক্তাক্ত জখমপ্রাপ্ত হয়। তখন স্থানীয় জনগণ ও পুলিশ তাকে উদ্ধার করে দ্রুত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) নেওয়ার পর জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে তাকে বেলা পৌনে ১২টায় মৃত ঘোষণা করেন।