সন্দেহজনক ঘটনা বা যে কোন গুজবের ভিত্তিতে কোনো মানুষকে হত্যা করার বিরুদ্ধে সরকার কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, এ ধরনের ঘটনা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। ছেলেধরা সন্দেহে সম্প্রতি কয়েকটি হতাহতের ঘটনার প্রেক্ষিতে সোমবার সরকারের পক্ষ থেকে সতর্কতা উচ্চারণ করে একটি বিবৃতি দেয়া হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, একটি স্বার্থান্বেষী মহল গুজব ছড়িয়ে ছেলেধরা সন্দেহে নিরীহ মানুষ পিটিয়ে হতাহত করা সংক্রান্ত খবরের প্রতি সরকারের দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত যে কোনো ধরনের গুজব ছড়ানো ও আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া দেশের প্রচলিত আইনের পরিপন্থী এবং গুরুতর দণ্ডনীয় অপরাধ। কোনো বিষয়ে কাউকে সন্দেহজনক মনে হলে আইন নিজের হাতে তুলে না নিয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে জানানোর জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে ৯৯৯ নম্বরে কল করে পুলিশের সহায়তা নেওয়ারও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
এদিকে এই সতর্কতা উচ্চারন এর দিনেও রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার নুরুর বটতলা এলাকায় ছেলেধরা সন্দেহে পাঁচজনকে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করেছে এলাকাবাসী। সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে এই ঘটনা ঘটে। পুলিশ জানায়, এই পাঁচ ব্যক্তি আদ্বদ্বীন ওয়েলফেয়ার সেন্টার নামে একটি এনজিওর প্রচার কাজ করছিলেন। এ সময় হঠাৎ লোকজনের মধ্যে সন্দেহ জাগে। এলাকাবাসী তাদের পরিচয় জানতে চাইলে তাদের কথা সন্দেহ হয়। পরে ছেলেধরা সন্দেহে তাদের গণপিটুনি দেওয়া হয়।
এর আগে ২০ জুলাই পুলিশ সদর দপ্তর থেকে ছেলেধরা গুজবের বিরুদ্ধে জনগণকে সতর্ক করে দিয়ে একটি বিবৃতি দেওয়া হয়। এতে বলা হয়, এ ধরনের গুজবের ঘটনায় সন্দেহভাজন কাউকে ধরে পুলিশের হাতে না দিয়ে পিটিয়ে হতাহত করা আইনের দৃষ্টিতে মারাত্মক অপরাধ। এ ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়।
এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে ও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে সারাদেশে থানাসহ সব পুলিশ অফিসে অভ্যন্তরীণ সার্কুলার জারি করেছে। সব পুলিশ ইউনিটকে টহল জোরদার এবং সব বিদ্যালয়ের সামনে প্রহরা জোরদার ও স্কুলশিক্ষক, সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারি ও অভিভাবকদের সঙ্গে পৃথক বৈঠক করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এতে স্কুল ছুটির পর ছাত্র-ছাত্রীদের অভিভাবকদের সঙ্গে বাড়ি ফিরে যাওয়া নিশ্চিত করতে ব্যবস্থা নিতে স্কুল কর্তৃপক্ষকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তর থেকে স্কুল চত্বর ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে জনসচেতনতা সৃষ্টিরও আহ্বান জানানো হয়েছে।
গত দু’দিন আগে রাজধানীর বাড্ডা এলাকায় ছেলেধরা সন্দেহে এক নারীকে পিটিয়ে মারার ঘটনায় পুলিশ চারজনকে আটক করেছে। আদালত তাদের তিনজনকে চারদিনের পুলিশ রিমান্ডে দিয়েছে। পুলিশ তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দশ দিনের রিমান্ড আবেদন করলে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ধিমান চন্দ্র মন্ডল চারদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।