চলতি বছরের নভেম্বর মাসে সারাদেশে ৩৭৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪১৩ জন নিহত হয়েছেন। এসব দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন ৫৩২ জন। নিহতদের মধ্যে ৬৭ জন নারী ও ৫৮ জন শিশু রয়েছে।
শনিবার (৪ ডিসেম্বর) রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। সংস্থাটির মাসিক দুর্ঘটনা প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। সাতটি জাতীয় দৈনিক, পাঁচটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল এবং ইলেক্ট্রনিক গণমাধ্যমের তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।
এসময় সাতটি নৌ-দুর্ঘটনায় নয়জন নিহত এবং পাঁচজন নিখোঁজ রয়েছেন। ১১টি রেলপথ দুর্ঘটনায় ১৩ জন নিহত এবং দুইজন আহত হয়েছেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
পরিসংখ্যানে দেখা যায়, নিহতদের মধ্যে মোটরসাইকেল চালক ও আরোহী ১৮৪ জন, বাসযাত্রী ২৩ জন, ট্রাক-পিকআপ-কাভার্ডভ্যান-ট্রাক্টর-ট্রলি যাত্রী ১২ জন, মাইক্রোবাস-প্রাইভেটকার-অ্যাম্বুলেন্স-জিপ যাত্রী ৯ জন (২ দশমিক ১৭ শতাংশ), থ্রি-হুইলার যাত্রী (ইজিবাইক-সিএনজি-অটোরিকশা-অটোভ্যান-মিশুক-টেম্পু-লেগুনা) ৬৬ জন (১৫ দশমিক ৯৮ শতাংশ), স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহনের যাত্রী (নসিমন-ভটভটি-আলমসাধু-বোরাক-মাহেন্দ্র-টমটম) ১৭ জন এবং প্যাডেল রিকশা-রিকশাভ্যান-বাইসাইকেল আরোহী ছয়জন।
সংস্থাটির পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ বলছে, দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে ১৫৬টি জাতীয় মহাসড়কে, ১৩১টি আঞ্চলিক সড়কে, ৫৩টি গ্রামীণ সড়কে, শহরের সড়কে এবং অন্যান্য স্থানে চারটি। দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে ৮৯টি মুখোমুখি সংঘর্ষ, ১৩৩টি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে, ৯১টি পথচারীকে চাপা/ধাক্কা দেওয়া, ৫৯টি যানবাহনের পেছনে আঘাত করা এবং সাতটি অন্যান্য কারণে ঘটেছে।
এতে বলা হয়, ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটেছে। ৮৩টি দুর্ঘটনায় নিহত ১০৪ জন। সবচেয়ে কম বরিশাল বিভাগে। ২২টি দুর্ঘটনায় নিহত ২৪ জন। একক জেলা হিসেবে চট্টগ্রাম জেলায় সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটেছে। ২১টি দুর্ঘটনায় ২৯ জন নিহত হয়েছেন। সবচেয়ে কম লালমনিরহাট জেলায়। দুটি দুর্ঘটনা ঘটলেও কেউ হতাহত হয়নি।
সংস্থাটি বলছে-ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন, বেপরোয়া গতি, চালকদের বেপরোয়া মানসিকতা, অদক্ষতা ও শারীরিক-মানসিক অসুস্থতাসহ ১০ কারণে সড়কে দুর্ঘটনা কমছে না।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গত অক্টোবর মাসে ৩৪৬টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪০৭ জন নিহত হয়েছিল। গড়ে প্রতিদিন দুর্ঘটনা ঘটেছিল ১১ দশমিক ১৬টি এবং মারা গেছেন ১৩ জন। নভেম্বর মাসে ৩৭৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৪০৭ জন। গড়ে প্রতিদিন দুর্ঘটনা ঘটেছে ১২ দশমিক ৬৩টি এবং নিহত হয়েছেন ১৩ জন।
সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির হার ঊর্ধ্বমুখী হলেও এটা নিয়ন্ত্রণে সরকারের তেমন কোনো উদ্যোগ দৃশ্যমান নয়। সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মধ্যে কোনো আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে মূলত সড়ক পরিবহন খাতের নৈরাজ্য ও অব্যবস্থাপনার কারণে। এ অবস্থার উন্নয়নে সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছার ঘাটতি রয়েছে।