রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন- ধর্ম, বিশ্বাস, বর্ণ এবং জাতিগত বৈষম্যের অবশ্যই অবসান ঘটাতে হবে এবং সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। একটি সুষম বিশ্বব্যবস্থা সকলের জন্য অপরিহার্য।
শনিবার ঢাকায় বিশ্বশান্তি সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় রাখা সবার জীবনের একটি অপরিহার্য উপাদান। ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর মধ্যে সহিংসতা বা ভয় থেকে মুক্তির নিশ্চয়তা দেয় শান্তি।
তিনি বিভেদের পথ ত্যাগ করে, হাতে হাত মিলিয়ে শান্তির পথে একসঙ্গে চলার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘বিশ্ব এখন অসংখ্য চ্যালেঞ্জ ও সংঘাতের মুখোমুখি। কভিড-১৯ মহামারি বিশ্বব্যবস্থার দুর্বলতা দেখিয়ে দিয়েছে। আমরা যদি ঐক্যবদ্ধ না হই এবং পারস্পরিক শান্তি ও সম্প্রীতি নিশ্চিত না করি, তাহলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য নিরাপদ ও বাসযোগ্য পৃথিবী রেখে যেতে পারব না।’
শান্তি প্রতিষ্ঠায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদানের আন্তর্জাতিকীকরণের লক্ষ্য নিয়ে শনিবার দুই দিনের শান্তি সম্মেলন শুরু হয়। রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে উদ্বোধন পর্বে ভিডিও কনফারেন্সে বঙ্গভবন থেকে যুক্ত হন রাষ্ট্রপতি।
‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব কারও সঙ্গে শত্রুতা নয়’ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের এই নীতিই বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতি উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি মুক্তিযুদ্ধের পর মানবাধিকার ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় জাতির পিতার অবদান তুলে ধরেন। বঙ্গবন্ধুর জুলিও কুরি শান্তি পুরস্কার অর্জনের কথা তুলে ধরে আবদুল হামিদ বলেন, ‘সেটা ছিল বাংলাদেশের প্রথম কোনো আন্তর্জাতিক পুরস্কারপ্রাপ্তি। এর ফলে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু থেকে বিশ্ববন্ধুতে পরিণত হয়েছিলেন।’
জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন, ভারতের সাবেক মন্ত্রী সুরেশ প্রভাকর প্রভু।
অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে বক্তব্য দেন মালয়েশিয়ার সাবেক মন্ত্রী ও ওয়ার্ল্ড ইসলামিক ইকোনমিক ফোরাম ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ হামিদ আলবার, বাংলাদেশের সাবেক কূটনীতিক আনোয়ারুল করিম চৌধুরী, মিসরের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও আরব লিগের সাবেক মহাসচিব আমর মুসা এবং শান্তিতে নোবেল বিজয়ী হোর্সা মো অর্তা।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বান কি মুন তার ধারণকৃত বক্তব্যে বলেন, শান্তির জন্য সবাইকে একত্রে কাজ করতে হবে। কভিড-১৯ মহামারি থেকে বাঁচতে ধনী-গরিব নির্বিশেষে টিকা নিশ্চিত করতে হবে। তিনি বলেন, সকলের নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে বিশ্বে একা কেউ নিরাপদ থাকতে পারবে না।
আনোয়ারুল করিম চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশ বিশ্বশান্তি সম্মেলনের আয়োজক দেশ, এটা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। বিশ্বশান্তি রক্ষায়, শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের অবদান ও উদ্যোগ বিশ্বে প্রশংসিত। শান্তির সেই বার্তা ঢাকার এ সম্মেলনের মধ্য দিয়ে আরও বিস্তৃত পরিসরে ছড়িয়ে পড়ূক, এটাই প্রত্যাশা।
সৈয়দ হামিদ আলবার বলেন, রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশ শান্তি প্রতিষ্ঠায় অনন্য ভূমিকা রেখেছে। বিশ্বে মানবিক মূল্যবোধের চর্চা এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার এ পদক্ষেপ দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
আমর মুসা বলেন, শান্তির জন্য এমন একটি বিশ্ব প্রতিষ্ঠা করতে হবে যেখানে কোনো ধরনের বৈষম্য থাকবে না।