উচ্চশিক্ষার জন্য মেয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে যাওয়ায় মৌলভীবাজারে কৃষ্ণপুর গ্রামে একটি পরিবারকে একঘরে করার অভিযোগ উঠেছে ভাটেরাবাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ পঞ্চায়েত কমিটির বিরুদ্ধে। ঘটনাটি ঘটেছে কুলাউড়ার ভাটেরা ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর গ্রামে। সোমবার ভুক্তভোগী পরিবার এ বিষয়ে কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ জানায়।
‘লিখিত অভিযোগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উচ্চশিক্ষার জন্য ২৬ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে যান নুরুন্নাহার চৌধুরী ঝর্ণা। ২৭ ডিসেম্বর থেকে স্থানীয় একটি গোষ্ঠী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ঝর্ণাকে নিয়ে নানা কুৎসা রটান। ২৮ ডিসেম্বর ভাটেরাবাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ পঞ্চায়েত কমিটি ঝর্ণার বাবা হাজি আবদুল হাই চৌধুরী গুলাবের বিরুদ্ধে শালিস বৈঠক ডাকেন। তিনি অসুস্থ থাকায় বৈঠকে উপস্থিত হতে পারেননি। পরে পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি মাখন মিয়া ও সম্পাদক আমিন মিয়ার নির্দেশে তাদের একঘরে করে দেওয়া হয়।
এ প্রসঙ্গে ঝর্ণা চৌধুরী বলেন, উচ্চশিক্ষার্থে যুক্তরাষ্ট্রে আসাকে কেন্দ্র করে কিছু অতি উৎসাহী মানুষ মসজিদে আমাকে নিয়ে বিচার ডাকেন। আমার বাবাকে বিচারে উপস্থিত হতে বলেন। কিন্তু ৭০ বছর বয়সী আমার বাবা ইতিমধ্যে তিনবার স্ট্রোক করেছেন। ডাক্তার বিশ্রামে থাকতে পরামর্শ দিয়েছেন। সম্প্রতি তার আবার ডিমেনশিয়া ধরা পড়েছে। তিনি বিচারে না যাওয়ায় আমার পরিবারকে একঘরে করে দেওয়া হয়েছে।’
‘ঝর্ণা বলেন, ‘খবর পেয়ে মসজিদ কমিটির সেক্রেটারি আমিন মিয়াকে জিজ্ঞাসা করি আমার বাবার বিরুদ্ধে অভিযোগ কী? তিনি বলেন, আমি আমেরিকায় গিয়ে আমার এলাকার সনাতন ধর্মাবলম্বী একজনকে বিয়ে করেছি। যা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। তাছাড়া আমার বাবা কেন তাদের নির্দেশ মানেননি, তাই আমার পরিবারকে একঘরে করে দেওয়া হয়েছে।’
‘এ বিষয়ে মসজিদ কমিটির সভাপতি শামছুল ইসলাম মাখন ও সম্পাদক আমিন মিয়া বলেন, ‘ঝর্ণার এমন চলাফেরা নিয়ে পঞ্চায়েতের লোকজন আমাদের চাপ দিতে থাকেন। আমরা কমিটির লোকজন তার বাবার কাছে বিষয়টি জানতে চাই। তিনি আমাদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করেননি। তাই শুক্রবার পঞ্চায়েতের লোকজন মসজিদে বসে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করি। আমরা তাদের সমাজচ্যুত করিনি। তিনি পঞ্চায়েতকে গুরুত্ব দেননি, তাই তিনি তার মতো করে চলবেন। আমরা আমাদের মতো চলব।’
‘স্থানীয় ভাটেরা ইউপি চেয়ারম্যান সৈয়দ এ কে এম নজরুল ইসলাম বলেন, ঝর্ণাকে নিয়ে যারা অপপ্রচার চালিয়েছে তাদের সতর্ক করে দিয়েছি। তার পরিবারকে সামাজিক নিরাপত্তা দিতে খোঁজখবর রাখছি।
কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ টি এম ফরহাদ চৌধুরী বলেন, আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি উভয় পক্ষকে ডাকা হয়েছে। সেখানে তাদের বক্তব্য শুনে বিষয়টি মীমাংসা করা হবে। তিনি জানান, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, ইউনিয়ন চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দিয়েছি ঝর্ণার পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে।