ইউক্রেন ইস্যুতে আবারও ‘নতুন মোড় নিতে পারে রাশিয়া-আমেরিকার সম্পর্কে। এমনকি ৪০ বছরে আগে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে রুশ দূতাবাসের নিচে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই সুড়ঙ্গ খোঁড়ার পর যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছিল, সেটিকেও ছাড়িয়ে যেতে পারে ইউক্রেন ইস্যু।
ওয়াশিংটনে ১৯৮০-এর দশকে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের দূতাবাস নিয়ে যা হয়েছিল- সে ঘটনা যেকোনও গোয়েন্দা উপন্যাসের কাহিনীকেও হার মানায়।’
দূতাবাসে বসে রাশিয়ানরা কী করছে, ‘কী বলছে- তা আড়ি পেতে শোনার জন্য ভবনের নীচ দিয়ে সুড়ঙ্গ খুঁড়েছিল মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই। যদিও সে কথা একজন ডাবল এজেন্টের কারণে ফাঁস হয়ে গিয়েছিল।’
তখন দুই দেশের মধ্যে অবিশ্বাস্য মাত্রার রেষারেষি শুরু হয়েছিল। যদিও এখন আর সেই রেষারেষি নেই। কিন্তু কিন্তু ইউক্রেন ইস্যুকে কেন্দ্র করে রুশ-মার্কিন সম্পর্কে উত্তেজনা এখন আবারও বিপজ্জনক মোড় নিতে পারে।
সেই পুরনো শত্রুর সঙ্গে সৃষ্ট নতুন উত্তেজনা মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন কীভাবে সামাল দেন, সেটাই এখন সংকটের সময় নেতা হিসেবে যোগ্যতা প্রমাণে তার সামনে বড় পরীক্ষা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বর্তমান সংকটকে কূটনৈতিকভাবে ‘নিরসনের চেষ্টা এখনও চলছে। এর অংশ হিসেবে বর্তমানে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাকরন রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন। পরিস্থিতি বিবেচনায়, এই মুহূর্তে ইউক্রেন সংকট নিরসনে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন- রাশিয়ার মোকাবিলা করা মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেনের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
পশ্চিমা গণতান্ত্রিক শক্তিগুলোর মধ্যে ঐক্য তৈরি করে একনায়ক স্বৈরাচারী শাসকদের চ্যালেঞ্জ করার যে নীতি বাইডেন নিয়েছেন – তার সাফল্য-ব্যর্থতাও অনেকটাই নির্ধারিত হবে ইউক্রেন পরিস্থিতির কী পরিণতি হয় তার ওপর।’
এক্ষেত্রে তুরুপের তাস হিসেবে ‘বাইডেন ইউরোপকে ব্যবহার করার চেষ্টা করছেন। সেজন্য তিনি গোটা ইউরোপকে এক প্লাটফর্মে আনার চেষ্টায় ব্যস্ত। এতে সফল হলে রাশিয়ার জন্য তা হবে বড়ই ভয়ঙ্কর ও বিপজ্জনক পরিণতি। আর ব্যর্থ হলে ভীষণ চাপে পড়বেন বাইডেন তথা আমেরিকা।
ইউরোপকে এক নৌকায় আনতে মরিয়া বাইডেন
বাইডেন প্রশাসন এখন রাশিয়ার প্রশ্নে ইউরোপে একটি ঐক্যবদ্ধ অবস্থান তৈরির জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। কারণ তিনি জানেন-ইউক্রেনে রাশিয়া হামলার বদলা হিসেবে যে ব্যাপক অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার হুমকি তিনি পুতিনকে দিচ্ছেন তা কার্যকর করতে ইউরোপকে এক নৌকায় আনতে হবে।
প্রতিটি পদক্ষেপে তিনি ন্যাটো দেশগুলোকে সাথে রাখছেন। যদিও এটি তার ঘোষিত পররাষ্ট্রনীতি, তারপরও আফগানিস্তান থেকে সৈন্য প্রত্যাহার নিয়ে পশ্চিমা মিত্রদের সাথে যে দূরত্ব তার তৈরি হয়েছিল- তা থেকে বাইডেন শিক্ষা নিয়েছেন। আফগান ইস্যুতে আমেরিকার সাথে পশ্চিমা মিত্রদের মতবিরোধ ক্রেমলিনের নজর এড়ায়নি।
‘সোভিয়েত ইউনিয়ন ভাঙ্গার পর রাশিয়া বিষয়ক মার্কিন নীতি প্রণয়নের অন্যতম কারিগর ছিলেন ড্যানিয়েল ফ্রাইড। সাবেক এই মার্কিন কূটনীতিক বলেছেন, “আমার মনে হয় আফগানিস্তান থেকে সৈন্য প্রত্যাহার নিয়ে সৃষ্ট ঘটনাবলী নিয়ে পুতিন হিসাব-নিকাশ করেছেন। তিনি মনে করেছেন আমেরিকার ক্ষমতা পড়তির দিকে।”
তিনি আরও বলেন, ‘কিন্তু ইউরোপের প্রতিরক্ষা আর আফগানিস্তানে ভঙ্গুর অবস্থান ধরে রাখার মধ্যে সবসময়ই একটি পার্থক্য ছিল। এটা অনেকটা ভিয়েতনাম পরিস্থিতির মত। ভিয়েতনামে আমাদের ব্যর্থতা, সর্বনাশা পরিণতির কারণে পশ্চিমা ইউরোপের নিরাপত্তা নিয়ে আমাদের সক্ষমতা এবং প্রত্যয় যে ভেঙে পড়েছিল তা নয়। সেটা কখনওই হয়নি। সুতরাং আমার মনে হয় পুতিন বেশি আশা করেছিলেন।’
তবে, ‘এখনও ক্রেমলিনই মূলত ইউক্রেন নিয়ে সৃষ্ট পরিস্থিতির গতি-প্রকৃতি নিয়ন্ত্রণ করছে। পুতিনের শক্ত অবস্থানের কারণেই ইউরোপ ও আমেরিকার কাছ থেকে প্রতিক্রিয়া আসছে। আগামীতে তিনি কী করবেন, তার মনে কী রয়েছে- সেই ভাবনায় ইউরোপ ও আমেরিকা উদ্বিগ্ন।
‘আমাদের বুঝতে হবে যে প্রেসিডেন্ট পুতিন একজন পোকার (তাসের জুয়া) খেলোয়াড়,” বলছেন ডেমোক্র্যাট কংগ্রেস সদস্য অমি বেরা, যিনি সম্প্রতি ইউক্রেনের সমর্থনে দুই দলের কংগ্রেস সদস্যদের নিয়ে গঠিত একটি প্রতিনিধিদলের সদস্য হিসেবে কিয়েভ সফরে গিয়েছিলেন।’
অমি বেরা বলেন, ‘আপনি জানেন না যে তার হাতে কী তাস রয়েছে। সেই তাস সত্যিই শক্ত, নাকি তিনি ব্লাফ (ধাপ্পা) দিচ্ছেন?’ সূত্র: বিবিসি