fbpx
বৃহস্পতিবার, ডিসেম্বর ১২, ২০২৪
বাড়িআন্তর্জাতিকপশ্চিমবঙ্গে ছাত্রনেতা আনিস হত্যায় রাজ্যজুড়ে তীব্র বিক্ষোভ

পশ্চিমবঙ্গে ছাত্রনেতা আনিস হত্যায় রাজ্যজুড়ে তীব্র বিক্ষোভ

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতার আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আনিস খান নিজ বাড়িতে হত্যার শিকার হওয়ায় তীব্র প্রতিবাদ চলছে রাজ্যজুড়ে। বিভিন্ন ইস্যুতেই আন্দোলন করা এই ছাত্রনেতার হত্যার ঘটনায় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করছেন।

এর আগে শুক্রবার পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া জেলার আমতা থানার বাসিন্দা আনিস খানকে তার নিজ বাড়িতে গিয়ে অজ্ঞাত কয়েকজন লোক হত্যা করে। পরিবারের অভিযোগ, পুলিশের পোশাক পরা লোকেরা তিন তলা থেকে ফেলে আনিসকে হত্যা করেছে৷

পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, ২৮ বছর বয়সী এই যুবককে মেরে ফেলার হুমকি দেয়া হচ্ছিল৷ তবে স্থানীয় পুলিশকে জানালেও এই বিষয়ে তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

ভারতের সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের (এনআরসি) প্রতিবাদে আন্দোলনসহ একাধিক আন্দোলনে সামনের সারিতে ছিলেন আনিস। নিজের এলাকার জনস্বাস্থ্য আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি।

শুক্রবার এক জলসা থেকে বাড়ি ফেরার কিছুক্ষণের মধ্যেই চার ব্যক্তি আসে তার খোঁজে। পরিবার জানায়, আগতদের একজন পুলিশের পোশাকে ছিলেন। অপর তিনজন ছিলেন সিভিক পুলিশের পোশাকে।

বারবার গেট খোলার অনুরোধ করলে আনিসের বাবা এক সময় খুলে দেন গেট৷ চারজনের তিনজন দ্রুত চলে যান তিন তলায়৷ আনিস তখন বারান্দায় বসে কানে হেডফোন লাগিয়ে মোবাইল ফোনে কিছু একটা শুনছিলেন৷ পরিবারের দাবি, রাত তিনটার দিকে ওই দুই ব্যক্তি তিন তলায় উঠে আনিসের মাথায় প্রথমে আঘাত করে, তারপর তিনতলা থেকে ফেলে দেয়৷

পরে পরিবারের পক্ষে থেকে সংবাদমাধ্যমকে আরো জানানো হয়, বারবার ফোন করা সত্ত্বেও আমতা থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে যায় ছয় ঘণ্টা পরে৷ ময়নাতদন্ত পরিবারের সবার অনুপস্থিতিতে করানোর অভিযোগও উঠেছে৷

আনিসের পরিবারের অভিযোগ, শুক্রবার রাতে পুলিশের পোশাক পরে চার জন ব্যক্তি তাদের বাড়িতে আসেন৷ তাদের তিনজন সিভিক ভলান্টিয়ার ও এক জন খাকি পোশাকে ছিলেন। খাকি পোশাক পরা ব্যক্তি নিজেকে আমতা থানার অফিসার পরিচয় দিয়ে আনিসের বাবাকে আটকে রাখেন। বাকিরা দ্রুত চলে যান তিনতলায়। একটু পরে ছাদ থেকে কিছু একটা পড়ার শব্দ পান পরিবারের লোকেরা৷ তারপরই সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে ওই পুলিশের পোশাক পরা ব্যক্তিকে বাকি তিনজন বলেন, ‘স্যর কাজ হয়ে গিয়েছে।’

এরপর রক্তাক্ত আনিসকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেও পথেই মৃত্যু হয় তার৷

আনিসের বাবা সালেম খানের অভিযোগ, পুলিশই তার ছেলেকে বাড়ির তিনতলার ছাদ থেকে ফেলে হত্যা করেছে।

ছেলে খুন হওয়ার পরে তিনি আমতা থানায় ফোন করে পুলিশকে ডাকলেও তারা আসেনি৷ তার দাবি, শনিবার ভোরে বারবার ফোন করলেও পুলিশ আসে সকাল নয়টায়৷ আনিসকে ছাদ থেকে ঠেলে ফেলে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে পুলিশ ও সিভিক ভলান্টিয়ারের বিরুদ্ধে৷ তবে পুলিশ দাবি করছে, শুক্রবার রাতে তাদের কেউ আনিসের বাড়িতে যাননি।

ময়নাতদন্তের রিপোর্টে আনিসের মাথায় ক্ষতচিহ্ন দেখা গিয়েছে৷ বাড়ির লোকের দাবি, তারা থানায় পৌঁছানোর আগে ময়নাতদন্তের জন্য দেহ নিয়ে হাওড়ার উলুবেড়িয়া মহকুমা হাসপাতালে যায় পুলিশ।

আনিসের বাড়ি থেকে ৮০ মিটার দূরে একটি সিসিটিভি ক্যামেরা রয়েছে৷ সোমবার সকাল পর্যন্ত সেখান থেকে কোনো ছবি নেওয়া হয়নি বলে জানা গিয়েছ।৷ ময়নাতদন্ত নিয়ে আনিসের পরিবার প্রশ্ন তুললেও পুলিশ ও ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আনিসের ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষদর্শীরা রয়েছেন। তদন্তে সেই সব প্রত্যক্ষদর্শী ও সাক্ষ্য অন্যতম সহায়ক হতে পারে।

রোববার আনিসের বাড়িতে যান কৌশিক সেন, বোলান গঙ্গোপাধ্যায়সহ নাগরিক সমাজের কয়েকজন প্রতিনিধি৷ কৌশিক সেনের ছেলে ভারতে জাতীয় পুরস্কারজয়ী অভিনেতা ঋদ্ধি সেন সোশ্যাল মিডিয়ায় বিষয়টি নিয়ে সরব হন৷ নোংরা রাজনীতি করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি৷

এদিকে আনিস হত্যার মামলাটি জরুরিভিত্তিতে গ্রহণ করেছে আদালত৷ মঙ্গলবার এ বিষয়ে সব তথ্য জমা দিতে আবেদনকারী পক্ষকে নির্দেশ দিয়েছে বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার বেঞ্চ। আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারি কলকাতা হাই কোর্টে ওই আবেদনের শুনানি হবে৷

এই ঘটনায় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আনিসের পরিবারকে দেখা করার জন্য ডেকেছেন।

সোমবার আনিসের বাড়িতে যান ডিএসপি সুব্রত ভৌমিক৷ আমতা থানার ওসি দেবব্রত চক্রবর্তীকে সঙ্গে নিয়ে ঘটনাস্থল ঘুরে দেখেন তিনি৷ এদিন আমতায় আনিসের বাড়িতে গিয়ে বিক্ষোভের মুখে পড়েন পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েতমন্ত্রী পুলক রায়৷

অন্যদিকে সোমবার কলকাতার কলেজ স্ট্রিটে ভারতীয় ছাত্র ফেডারেশনের তরফে আনিসের মৃত্যুর প্রতিবাদে অবরোধ চলে দীর্ঘক্ষণ৷ আনিস হত্যার প্রতিবাদে কলেজ স্ট্রিটে বিক্ষোভ দেখায় এআইডিএসও সংগঠনও৷ এছাড়াও একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আনিস হত্যার বিচারের দাবিতে প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করেছেন৷

সোমবার এক সাংবাদিক বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ছাত্রনেতা আনিস খানের রহস্যমৃত্যুর তদন্ত করবে বিশেষ দল৷ ১৫ দিনের মধ্যে ওই তদন্তকারী দল রিপোর্ট জমা দেবে৷ মমতা বলেন, ‘আনিসের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ ভালো ছিলো৷ আনিস আমাদের সাহায্যও করেছিলেন৷ আনিসের পরিবারকে বিশ্বাস রাখতে বলবো৷ নিরপেক্ষ তদন্ত হবে- কথা দিলাম৷ দোষীর কোনো ক্ষমা নেই।’ সুত্রঃ ডয়চে ভেলে

RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

Most Popular

Recent Comments