জহির আলীকে তার ৮৮ ডেসিমাল জমি লিখে দেওয়ার জন্যে গত বছর ২৬ জুলাই তিনটি কাগজে স্বাক্ষর করানো হয়েছিলো। ডেমরার সারুলিয়ায় কয়েকজন শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তা পরিচালিত একটি আবাসন প্রকল্পে সেই জমি নেওয়া হবে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, কাগজে স্বাক্ষর করার আগে জহির আলীকে তার ছেলে ও মেয়ের জামাইসহ পাঁচদিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছিলো। পরিবারের অভিযোগ- সেসব কাগজে সই করার আগে জহিরকে অকথ্য নির্যাতন করা হয়। দেওয়া হয় ‘ক্রসফায়ারে’ হত্যার হুমকি।
তারা বলেন, রূপগঞ্জ ও ডেমরার আনন্দ পুলিশ হাউজিং সোসাইটিকে ১১ জুলাই থেকে ২৬ জুলাইয়ের মধ্যে ৬২ দশমিক ৫ বিঘা জমি লিখে দিতে জহিরকে বাধ্য করা হয়। এছাড়াও, ডেমরায় জহিরের তিনটি বাড়ি জবরদখল করে নেয় পুলিশ। শুধু তাই নয়, পুলিশ তার তিনটি প্রাইভেট কারও নিয়ে যায়।
আবাসন প্রকল্পের পরিচালক ও পুলিশের অতিরিক্ত উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) গাজী মোজাম্মেল হক জমি লিখে নেওয়ার সেসব কাগজে স্বাক্ষর করেছিলেন।
আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পুলিশের হেফাজতে থেকে কোনো অভিযুক্ত কাউকে সম্পত্তি লিখে দিতে পারেন না।
এ ঘটনায় সম্প্রতি পুলিশ সদরদপ্তর থেকে ডিআইজি এম খুরশীদ হোসেনের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা।
গেলো ১৪ মার্চ জহিরের ছেলের বৌ আফরোজা আক্তার আঁখি ঢাকার একটি আদালতে মামলা দায়ের করলে মহানগর হাকিম দেবব্রত বিশ্বাস ঘটনার বিচারিক তদন্তের নির্দেশ দেন।
সেই মামলায় অতিরিক্ত ডিআইজি মোজাম্মেল, তার স্ত্রী ফারহানা মোজাম্মেল ও আরো ১৮ জনের নাম এবং ২০ থেকে ২৫ জনকে অজ্ঞাত হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
অন্যান্য অভিযুক্তের মধ্যে রয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার পরিদর্শক দীপক কুমার দাশ, রূপপুর থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুজ্জামান মনির, ডেমরা সাব-রেজিস্ট্রার আফসানা বেগম, সাব-রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ের অফিস সহকারী হানিফ আলী শেখ এবং ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের নয়াবাজার শাখার নির্বাহী কর্মকর্তা সাজ্জাদুর রহমান মজুমদার।
মামলার বিবরণীতে বলা হয়েছে, আফরোজার অভিযোগ গত বছরের ১০ জুলাই রূপগঞ্জ থানার ওসি মনির তার শ্বশুর জহিরকে ডেকে নিয়ে বলেন তাকে তার বড় ছেলে আব্দুল মতিনসহ পুলিশ সদরদপ্তরে যেতে হবে। সেখানে ব্যবসায়িক ও দাপ্তরিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করার কথা বলা হয়।
জহির তার মেয়ের জামাইকে নিয়ে পুলিশ সদরদপ্তরে যাওয়ার জন্যে রওনা দিলে কিছুক্ষণ পর তাদের মোবাইলফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
আফরোজার অভিযোগ, “তাদেরকে চোখ বেঁধে একটি নির্জন জায়গায় বন্দি করে রাখা হয়।”
বিবরণীতে আরো বলা হয়, পরের দিন তথা ১১ জুলাই জহিরকে দিয়ে জোর করে জমি লিখে নেওয়ার পাঁচটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করানো হয়। চুক্তিগুলোর নম্বর ৮৪৩০, ৮৪৩১, ৮৪৩২, ৮৪৩৩ এবং ৮৪৩৪।