১২০ টাকা করে মাত্র ২৪০ টাকা খরচে পুলিশে চাকরি হলো দুই যমজ বোনের। চাকরি পাওয়া ফারজানা জাহান ও ফারহানা জাহান সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার বড়দল ইউনিয়নের ফকড়াবাদ গ্রামের আসাদুল ইসলামের মেয়ে।
- নিয়োগ পরীক্ষায় সাধারণ নারী কোটায় মেধাতালিকায় ফারজানা চতুর্থ এবং ফারহানা পঞ্চম হয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার ২০২২ সালের ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) নিয়োগ পরীক্ষায় সাতক্ষীরার চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করেন সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান।
যমজ বোনের চাকরি হওয়ায় পরিবারটিতে এখন আনন্দের বন্যা বয়ে যাচ্ছে।
- দুই যমজ কন্যার মা রেহেনা পারভীন দর্জির কাজ করেন। ওই টাকায় চলে তাদের সংসার। এই আয় সন্তানদের শিক্ষিত করে তুলেছেন। তিনি বলেন, ‘আমার তিন মেয়ে। বড় মেয়ে আফসানা জাহান সাতক্ষীরা সরকারি কলেজে গণিতে অনার্স পড়ছে। ছোট দু মেয়ে যমজ।
রেহেনা পারভীন জানান, যমজ মেয়েরা ২০২০ সালে গোয়ালডাঙ্গা ফকিরবাড়ি মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে জিপিএ ৪.০৬ পেয়ে এসএসসি পাস করেন। বর্তমানে তারা আশাশুনি মহিলা কলেজে এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।
- সফল কন্যাদের মা জানান, তাদের পরিবারে আগে এত দুর্দিন ছিল না। তার স্বামী আসাদুল ইসলাম বড়দল ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি ছিলেন। ২০১৩ সালের নভেম্বরে জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীরা তাকে পিটিয়ে হাত-পা ভেঙে দেয়, মুখ থেঁতলে দেয়। এরপর মৃত ভেবে ফেলে রেখে চলে যায়। সেই থেকে আজও তার চিকিৎসা চলছে। এখন চলাফেরা করতে পারলেও কোনো কাজ করতে পারেন না তিনি।
দর্জির কাজিএবং সরকারি বিভিন্ন সহায়তায় সংসার চলে। দুই মেয়ের পুলিশে চাকরি হওয়ায় সংসারে আর অভাব-অনটন থাকবে না।’ বলেন খুশিতে আপ্লুত মা।
- সাফল্যের বিষয়ে ফারজানা বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই ইচ্ছা ছিল পুলিশ হব। এখন পুলিশে চাকরি পেয়েছি। এবার পরিবারের পাশে দাঁড়াতে পারব।’
ফারহানা বলেন, ‘পুলিশে আবেদন করার পর অনেকেই বলেছিল, চাকরি পেতে টাকা লাগবে। তবুও মাঠে গেলাম। পুলিশ সদস্য নিয়োগের পরীক্ষার বিভিন্ন ধাপ পেরিয়ে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায়ও উত্তীর্ণ হয়েছি। টাকা ছাড়াই আমরা পুলিশে চাকরি পেয়েছি।’
এ জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান ফারহানা।
- বাবা আসাদুল ইসলাম বলেন, গরিব পরিবারে সরকারি চাকরি খুব একটা হয় না। সেখানে দুই মেয়ে একসঙ্গে পুলিশে চাকরি পেয়েছে, এটা অনেক আনন্দের ব্যাপার।
এ বিষয়ে জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘স্বচ্ছতার ভিত্তিতে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। সাতক্ষীরায় ৫৫ জন পুলিশ সদস্য পদে নিয়োগ পাচ্ছেন। ফারহানা জাহান ও ফারজানা জাহান সাধারণ নারী কোটায় পুলিশ সদস্য পদে প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত হয়েছেন।’