ঢাকাগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেনে রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজনের আত্মীয়দের জরিমানা করা ভ্রাম্যমাণ টিকিট পরীক্ষক (টিটিই) শফিকুল ইসলামের সাময়িক বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে। সেই সঙ্গে বরখাস্তের আদেশ প্রদানকারী পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ে বাণিজ্যিক কর্মকর্তা (ডিসিও) নাসির উদ্দিনকে শোকজের চিঠি ইস্যু করেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
আজ রোববার দুপুর আড়াইটায় পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ে ম্যানেজার (ডিআরএম) শাহীদুল ইসলাম তার কার্যালয়ে গণমাধ্যম কর্মীদের এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, এ ঘটনার তদন্তের মেয়াদ আগামী বুধবার পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
আলোচিত এ ঘটনায় অভিযুক্ত, অভিযোগকারী ও সংশ্লিষ্টদের নিয়ে আজ সকাল ১০টা থেকে তদন্ত শুরু হওয়ার কথা ছিল। তবে পাকশী বিভাগীয় সহকারী পরিবহন কর্মকর্তার (এটিও) কার্যালয়ে তদন্তের কার্যক্রম শুরু হয় দুপুর ১২টার পরে।
ঘটনার রাতে সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেনে কর্তব্যরত ছিলেন ট্রেন পরিচালক শরিফুল ইসলাম। আজ আনুষ্ঠানিক তদন্তের শুরুতেই তার বক্তব্য গ্রহণ করা হয়। তদন্ত কমিটির প্রধান এটিও সাজেদুল ইসলাম বাবু জানান, তদন্তের প্রথম দিনে আজ রোববার ৮ জনকে ডাকা হয়েছে। তারা অভিযুক্ত, অভিযোগকারী ও ওই ট্রেনে কর্তব্যরত বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী।
কারণ দর্শানোর নোটিশসহ টিটিইকে বরখাস্তের বিষয়ে কথা বলতে চাইলে রাজি হননি ডিসিও নাসির উদ্দিন। পাকশীতে মন্ত্রীর স্ত্রীর বোনের ছেলে ইমরুল কায়েস প্রান্তও গণমাধ্যম কর্মীদের এড়িয়ে চলেছেন। তার বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, তদন্তের পর বক্তব্য দেওয়া যেতে পারে। এরপর তিনি পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ে কন্ট্রোলরুমে কিছু সময় অবস্থান করেন।
ট্রেনে জরিমানার ঘটনার পর রেলমন্ত্রীর স্ত্রীর শাম্মী আক্তার মনি ডিসিও নাসির উদ্দিনকে ফোন করে বিষয়টি জানিয়েছিলেন। নাসির উদ্দিন টিটিই শফিকুল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্ত করেন।
এ বিষয়ে রোববার দুপুরে রেলভবনে সংবাদ সম্মেলনে নূরুল ইসলাম সুজন বলেন, ফোন পাওয়ার পর নাসির উদ্দিন কোন আইনে বা কোন ক্ষমতাবলে টিটিইকে বরখাস্ত করেছেন, তা জানতে চাওয়া হবে।
মন্ত্রী বলেন, ভুলভ্রান্তি হলে মানুষ তো সেভাবেই দেখবে। আমার কোনো ইনভল্বমেন্ট এখানে ছিল না। বলা হচ্ছে যে মন্ত্রীর কারণে এমনটা ঘটছে। আমার যদি কিছু করার থাকত তাহলে তো সরাসরিই করতে পারতাম। কারও সাহায্যের তো দরকার হবে না। মেসেজটা যেভাবে গেছে সেটা সঠিক না।
রেলমন্ত্রী সুজন বলেন, টিটিই শফিকুল ইসলাম সেদিন তার দায়িত্ব সঠিকভাবেই পালন করেছেন।
তিনি বলেন, টিটিইর কাজ হলো রেলে শৃঙ্খলা আনা। তার কাজই তো রেলে যাত্রীদের সহযোগিতা করা, তাকে সাহায্য করা, সঠিক জায়গায় সেবা দেওয়া। রেলের লোকদের দায়িত্বই সেটা। এখন যেভাবে ঘটেছে ঘটনাটি, তাতে আমরা বিব্রত।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শফিকুল ইসলামকে পদোন্নতি বা অন্যান্য সুযোগ সুবিধা দেওয়া হতে পারে। তাকে পুরস্কৃত করার কথাও ভাববে রেলপথ মন্ত্রণালয়।
প্রসঙ্গত, গত শুক্রবার ৬মে রাতে পাবনার ঈশ্বরদী স্টেশন থেকে ঢাকাগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেনে ওঠেন রেলমন্ত্রীর স্ত্রীর ভাগ্নে পরিচয় দেওয়া তিন যাত্রী। তারা হলেন মন্ত্রীর স্ত্রীর বোনের ছেলে ইমরুল কায়েস প্রান্ত এবং তার চাচাত ভাই ওমর ও হাসান।
টিকিট না থাকলেও এই তিনজন খুলনা থেকে রাত ৮টায় ছেড়ে যাওয়া সুন্দরবন এক্সপ্রেসের এসি কেবিনের আসন দখল করেন। তখন টিটিই শফিকুল ইসলাম তাদের কেবিন থেকে বের করে শোভন বগিতে পাঠান এবং ৩৫০ টাকা করে জরিমানা করেন। এরপরই ট্রেন ঢাকায় পৌঁছার আগেই মধ্যপথে ভোররাতে টিটিইকে সাময়িক বরখাস্ত করে মোবাইল ফোনে জানিয়ে দেওয়া হয়।
গতকাল ৭মে শনিবার মন্ত্রীর আত্মীয় পরিচয় দেওয়া সেই তিন যাত্রীর একজন ইমরুল কায়েস প্রান্তের মা ইয়াসমিন আক্তার নিপা গণমাধ্যমকে বলেন, রেলমন্ত্রীর স্ত্রী শাম্মী আক্তার মনির ফোনের পরই টিটিই বরখাস্ত হন। নিপা মন্ত্রীপত্নীর মামাত বোন। এ ঘটনায় দেশজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়।
এ ঘটনায় রেলের পাকশী বিভাগীয় সহকারী পরিবহন কর্মকর্তা সাজেদুল ইসলামকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে। শুক্রবারের ঘটনার ব্যাখ্যা জানতে রোববার ডিসিও কার্যালয়ে তলব করা হয় টিটিই শফিকুলকে।
এদিকে, টিটিইকে সাময়িক বরখাস্ত করা ডিসিও নাসির উদ্দিন গতকাল লিখিত বক্তব্যে দাবি করেছেন, শফিকুল মানসিক বিকারগ্রস্ত। অতীতেও তিনি যাত্রী ও সহকর্মীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছেন।