সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের (এমবিএস) সঙ্গে দেখা করবেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। আগামী মাসে তাদের মধ্যে এ সাক্ষাৎ হতে পারে।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার বরাতে এ তথ্য জানায়। খবর রয়টার্স।
বাইডেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা বর্তমানে দুই নেতারা মধ্যে সম্ভাব্য এ সাক্ষাৎ নিয়ে সৌদি কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন। বেশ কয়েক মাসের গোলযোগপূর্ণ সম্পর্ক এবং তা সারিয়ে নেওয়ার জন্য হোয়াইট হাউসের একাধিক প্রচেষ্টার পর এ সাক্ষাতের কথা শোনা যাচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের এক মুখপাত্র বলেন, এ সময় ঘোষণা করার মতো আমাদের কাছে কিছু নেই।
এ সাক্ষাতের বিষয়ে অবগত যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক এক কর্মকর্তা বলেন, আপনি ধরে নিতে পারেন এটি হচ্ছে। এটি আমাদের জাতীয় স্বার্থের জন্য ভালো বিষয়।
সূত্র জানায়, বাইডেন ও এমবিএসের মধ্যে সাক্ষাৎ রিয়াদে অনুষ্ঠেয় গালফ কোঅপারেশন কাউন্সিলের সম্মেলনের সময় অনুষ্ঠিত হবে।
বাইডেন ক্ষমতা নেওয়ার পর ইয়েমেনে সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটকে সহায়তা দেওয়া বন্ধ করে ওয়াশিংটন।
দীর্ঘ দুই দশকের ঘনিষ্ঠ মিত্র দুটির মধ্যে সম্পর্কের অবনতি হয়েছে সাম্প্রতিক সময়ে— এমন সময় এ সাক্ষাতের খবর এলো। এ ছাড়া এটি বাইডেনের জন্যও সম্পর্কোন্নয়নের একটি ভালো সুযোগ, যিনি ক্ষমতায় আসার পর বলেছিলেন, তিনি এমবিএসের সঙ্গে সরাসরি কথা বলবেন না, কথা বলবেন শুধু তারা বাবা বাদশাহ সালমানের সঙ্গে।
কর্মকর্তারা বলছেন, এমবিএসের সঙ্গে বাইডেন সরাসরি যুক্ত হতে না চাওয়ার কারণ হচ্ছে কলামিস্ট জামাল খাসোগির হত্যা।
এ ছাড়া বাইডেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের তীব্র সমালোচক ছিলেন। ট্রাম্প মধ্যপ্রাচ্যের স্বৈরাচারদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক উপভোগ করেছেন পাশাপাশি সৌদি আরবকে অস্ত্র বিক্রির জন্য উপেক্ষা করেছেন নানা নিয়ম।
এদিকে বৈঠকের বিষয়ে ওয়াশিংটনের সৌদি দূতাবাস কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের চেষ্টা
রাশিয়া যখন ইউক্রেনে হামলা চালালো তখন বাড়তে থাকল তেল ও গ্যাসের দাম। এমন পরিস্থিতিতে সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের চেষ্টা শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র। ওয়াশিংটনের বহু কর্মকর্তা রিয়াদ সফর করে দেশটিকে তেল উত্তোলন বাড়াতে অনুরোধ জানিয়েছেন। কিন্তু সৌদি আরব এ অনুরোধে কান দেয়নি। ফলে সম্পর্কে কোনো পরিবর্তনও আসেনি।
এ ছাড়া ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার প্রতিক্রিয়ায় পশ্চিমা দেশগুলো মস্কোর বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। কিন্তু রিয়াদ তাদের এ প্রক্রিয়ায় অংশ নেওয়া থেকে বিরত থাকে।
ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের খবর অনুযায়ী, এমবিএস চলতি বছর বাইডেনের একটি ফোনকল প্রত্যাখ্যান করেছেন।
দ্য ইন্টারসেপ্ট ও ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্সের (সিআইএ) পরিচালক উইলিয়াম বার্নসও সম্পর্ক মেরামতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন।
তবে বৈপরীত্য আর বাড়তে দিতে চায় না ওয়াশিংটন। হোয়াইট হাউস চায় দীর্ঘ দিনের এ মিত্রের সঙ্গে সম্পর্ক আগের অবস্থায় নিয়ে যেতে। আর রিয়াদ ও ওয়াশিংটনের এ সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের পেছনে কাজ করছেন হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক সমন্বয়ক ব্রেট ম্যাকগার্ক ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বৈশ্বিক জ্বালানি নিরাপত্তা বিষয়ক জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা অ্যামোস হোচস্টাইন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, এমবিএসের ছোটভাই প্রিন্স খালিদ বিন সালমান চলতি সপ্তাহে ওয়াশিংটন সফর করবেন।
প্রিন্স খালিদ সৌদি আরবের উপপ্রতিরক্ষামন্ত্রী। তিনি ওয়াশিংটনে গুরুত্বপূর্ণ মার্কিন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। খাসোগি হত্যার গোয়েন্দা প্রতিবেদন প্রকাশের পর তিনিই হতে যাচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের সফর করা সর্বোচ্চ পর্যায়ের সৌদি কর্মকর্তা।