চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে ২ হাজার ৮০০ থেকে তিন হাজার রোগী ভর্তি থাকে। এসব রোগীর সকাল-বিকালের নাস্তা এবং দুপুর ও রাতের খাবার সরবরাহ করা হয় হাসপাতালের পক্ষ থেকে। ছয়টি পৃথক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগীদের মাঝে খাবার সরবরাহ করে। দরপত্র অনুযায়ী বর্তমানে একজন রোগীর নাস্তা ও খাবার বাবদ দৈনিক বরাদ্দ রয়েছে ১২৫ টাকা।
এই টাকার মধ্যেই দুবেলা নাস্তা এবং দুবেলা খাবার পরিবেশন করা হয়। তবে সম্প্রতি জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির ফলে দ্রব্যমূলের ঊর্ধ্বগতিতে বাজার টালমাটাল। এ কারণে বর্তমান বাজেটে রোগীর খাবার সরবরাহ করতে অনীহা প্রকাশ করেছে চার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তারা খাবারের দাম বাড়াতে চান। এ বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানগুলো। তবে কর্তৃপক্ষ বলছে, চুক্তি মোতাবেক নির্ধারিত সময় পর্যন্ত খাবার সরবরাহ না করলে ঠিকাদারদের ‘সিকিউরিটি মানি’ বাজেয়াপ্ত হয়ে যাবে। এর মধ্যে নতুন করে ঠিকাদার নিয়োগেরও প্রক্রিয়া শুরু করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
এদিকে চমেক হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের খাবার বাবদ জনপ্রতি ৩০০ টাকা বরাদ্দ দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছে কর্তৃপক্ষ। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে ১২৫ টাকায় খাবার সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে বিষয়টি জানানো হয়। তবে অধিদপ্তর সেটিকে ২৫০ টাকা নির্ধারণ করে অনুমোদনের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। এই হিসাবে দ্বিগুণ হচ্ছে রোগীর খাবারের বাজেট।
জানা গেছে, ১৬ আগস্ট চার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এক জোটে চিঠি দিয়ে খাদ্যপণ্য সরবরাহে অপারগতা জানায়। চমেক হাসপাতাল পরিচালকের কাছে লেখা ওই চিঠিতে বাজারে খাদ্যপণ্যের অস্বাভাবিক উচ্চমূল্যের কারণে সরবরাহ অব্যাহত রাখা সম্ভব নয়। ২৩ আগস্ট এ চিঠির জবাব দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বিধি ও শর্ত অনুযায়ী দূর-দূরান্ত হতে আগত রোগীদের চিকিৎসা সেবা অব্যাহত রাখতে এ সংক্রান্ত আবেদন বিবেচনা করা সম্ভব হচ্ছে না। বিষয়টি উলেখ করে কার্যাদেশের শর্তাবলী ও নন-এমএসআর দরপত্রের নিয়ম ও বিধি অনুযায়ী জনস্বার্থে হাসপাতালে নিরবচ্ছিন্ন পথ্য সরবরাহের অনুরোধ জানানো হয়েছে চিঠিতে। চার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে প্রদত্ত এ চিঠির অনুলিপি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককেও দেওয়া হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী, কার্যাদেশ পাওয়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোর নির্দিষ্ট অঙ্কের অর্থ ‘সিকিউরিটি মানি’ হিসাবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে জমা রয়েছে। কার্যাদেশের বিধি ভেঙে সরবরাহ বন্ধ করলে প্রতিষ্ঠানগুলোর সিকিউরিটি মানি বাবদ গচ্ছিত অর্থ ফেরত পাওয়া নিয়েও শঙ্কা রয়েছে।
হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান বলেন, দ্রব্যমূল্য বেড়েছে এটা সত্য। তবে নতুন দরপত্র আহ্বানের আগ পর্যন্ত এ মূল্য সংযোজনের কোনো উপায় আমাদের হাতে নেই। নিয়ম অনুযায়ী নতুন ঠিকাদার নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত বর্তমান ঠিকাদারদের সরবরাহ অব্যাহত রাখতে হবে। তাছড়া নতুন ঠিকাদার নিয়োগ প্রক্রিয়া এখন প্রায় চ‚ড়ান্ত পর্যায়ে। আমরা রোগীর খাবার জনপ্রতি ৩০০ টাকা বরাদ্দ দেওয়ার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে জানিয়েছে। মন্ত্রণালয় ২৫০ টাকা নির্ধারণ করে অনুমোদনের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।