দুই মাসে মাত্র ১২ ঘণ্টার কাজ। আয় দুই লাখ টাকার ওপরে। নাম তার তানজিম শাহ কবির, ডাকনাম তৃণব। পড়ে নোয়াখালী জিলা স্কুলের দশম শ্রেণিতে। ১৫ বছরের এই তৃণবের সফলতার গল্প।
ছোটবেলা থেকেই তানজিম শাহ কবিরের কম্পিউটারের প্রতি আগ্রহ। নিজে থেকেই কম্পিউটারে নানা কাজ করার চেষ্টা করত। পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ার সময় প্রথম প্রগ্রামিং শুরু করে। এতটুকু বয়সেই তৃণব পাইথন, সি প্রগ্রামিংয়ের অনেকটাই শিখেছে।
তৃণব জানায়, ‘নিজে নিজে চেষ্টা করতাম। স্কুলের মিজান স্যারের কাছে সি প্রগ্রামিং শিখেছি। ’ কোনো কিছু নিয়ে অনরবত লেগে থাকা যেন তার স্বভাব। সে কথাই শোনা গেল তার বাবা হুমায়ুন কবিরের মুখে, ‘ও ছোটবেলা থেকেই বিভিন্ন ডিভাইস নিয়ে কাজ করতে পছন্দ করে। বিভিন্ন ডিভাইস জানতে, বুঝতে চেষ্টা করে। নিজেই খুলে ফেলে আবার ঠিকঠাক সংযুক্ত করে ফেলে। ’
তৃণব কাজ করে ইথিক্যাল হ্যাকিং বা নৈতিক হ্যাকিং নিয়ে। এককথায় এরা ভালো হ্যাকার। এরা অন্যের সিস্টেমে অনুমতি নিয়ে ঢুকে ত্রুটি খুঁজে বের করে তা ঠিক করে দেয়। হ্যাকিং দুই প্রকার—হোয়াইট হ্যাট হ্যাকার বা ইথিক্যাল হ্যাকার এবং ব্ল্যাক হ্যাট হ্যাকার বা ম্যালিসিয়াস হ্যাকার। ম্যালিসিয়াস হ্যাকাররা কোনো দেশ, কম্পানি কিংবা প্রতিষ্ঠানের সিস্টেমের রুল এবং সিকিউরিটি ভেঙে ফেলে এবং মূল সিস্টেমের ক্ষতিসাধন করে। এই ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য প্রয়োজন হয় ইথিক্যাল হ্যাকারদের।
বাবার ল্যাপটপ নিয়ে পড়ে থাকত তৃণব। নানা রকম কাজ শেখার চেষ্টা করত। একদিন সে বাবাকে বলে, কোথাও কোর্সে ভর্তি করিয়ে দিতে। ২০২১ সালের জুন মাসের ঘটনা। অবশ্য আর জে কিবরিয়ার এক অনুষ্ঠানে শাওন নামে একজন ইথিক্যাল হ্যাকারের সফলতার গল্পটা বাবা আগেই দেখেছিলেন। ফলে পেশায় ঝানু ব্যবসায়ী হুমায়ুন ইথিক্যাল হ্যাকিংয়ে ছেলের সম্ভাবনা আঁচ করতে মোটেও ভুল করেননি। তৃণবের বাবা ছেলের মতকেই প্রাধান্য দিয়ে ইথিক্যাল হ্যাকিংয়ের কোর্সে ভর্তি করিয়ে দেন ইশিখন ডটকমে। ইশিখনে সবচেয়ে কম বয়সী শিক্ষার্থী ছিল তৃণব। অল্প বয়স। ছেলে কি সত্যিই শিখতে পারছে কিছু। এমন শঙ্কা কিছুটা হলেও ছিল তাঁর বাবা-মায়ের। তাঁরা ছেলের কাছাকাছি থাকতেন। ওকে টিচার যা জিজ্ঞাসা করত, সব কিছুই জবাব দিয়ে দিত। ফলে তাঁরাও একটু আশ্বস্ত হন।
দুই মাসে মাত্র ১২ ঘণ্টা কাজ করে তৃণবের আয় দুই লাখ টাকার ওপরে। সে প্রতি ঘণ্টা কাজের জন্য ৫০ থেকে ১০০ ডলার নেয়। অবিশ্বাস্য মনে হলেও ছোট তৃণবের এই আয়ের গল্পটা পুরোটাই সত্য। তৃণব নিজেই তার ব্যাখা করে এভাবে, আসলে ইথিক্যাল হ্যাকিংয়ের কাজ এমনই। সময় অনুপাতে টাকা আয় করা যায়। অবশ্য এই সফলতা তার এক দিনে আসেনি।
আপওয়ার্কে ‘হুমায়ুন কবির’ নামে যে মানুষটি আছেন, প্রচুর কাজ করছেন, সে মানুষটি আসলে তৃণব। বয়স ১৮ হয়নি। সে কারণে বাবার নামে আপওয়ার্কে অ্যাকাউন্ট খুলেছে। আপওয়ার্কে সে কাজের আবেদন করে রাখে। কারো পছন্দ হলে তাকে নক দেয়। আবার তার কিছু ব্যক্তিগত ক্রেতা পারসোনাল বায়ার আছে। কিছু কম্পানির সঙ্গেও যোগাযোগ তার বেশ ভালো। এই কম্পানিগুলো অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, নিউজিল্যান্ডসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের। পারসোনাল বায়ার, কম্পানি তার থেকে কাজ করিয়ে নেয়।