কয়েক লাখ গ্রাহকের সঙ্গে প্রতারণার প্রমাণ পেয়ে ইভ্যালিসহ পাঁচটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করেছে সরকারের প্রতিযোগিতা কমিশন। বাকি চারটি প্রতিষ্ঠান হলো আলেশা মার্ট, সিরাজগঞ্জ শপ ডটকম, ধামাকা শপিং ডটকম এবং কিউকম ডটকম।
একই সঙ্গে অনুসন্ধান পর্যায়ে রয়েছে আরও ৮টি প্রতিষ্ঠান। প্রতারণার অভিযোগ প্রমাণিত হলে এসব প্রতিষ্ঠানকেও মামলা ফেস করতে হবে। সূত্র বলছে, ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রথম মামলা হিসাবে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন অনেকটা হার্ডলাইনে। কেননা এসব প্রতিষ্ঠানের প্রতারণার কারণে দেশের লাখ লাখ লোক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যদিও বেহাত হয়ে যাওয়া কয়েক হাজার কোটি টাকা আদায় করা একরকম অনিশ্চিত।
সূত্র জানায়, প্রতিযোগিতা কমিশন আইন অনুযায়ী এ ধরনের অপরাধে কমিশন নিজ দপ্তরে মামলা করতে পারে। অনুসন্ধান শেষে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে প্রতিযোগিতা কমিশন গত জুলাইয়ে প্রথম মামলা করে ইভ্যালির বিরুদ্ধে। এরপর গত দুই মাসে পর্যায়ক্রমে আরও ৪টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়।
ই-কমার্স বাণিজ্য নিয়ে বিগত কয়েক বছরে নানামুখী প্রতারণার ফাঁদ তৈরি করেছে অসংখ্য প্রতিষ্ঠান। এ প্রক্রিয়ায় ইভ্যালিসহ ১১টি প্রতিষ্ঠান গ্রাহকদের কাছ থেকে ৩ হাজার ৩১৭ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
মামলা প্রক্রিয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কমিশনের একজন পদস্থ কর্মকর্তা জানান, অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোয় সরেজমিন গিয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়। প্রাথমিক অনুসন্ধানে ৫টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রতারণার বিভিন্ন অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। তিনি জানান, এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কোনো গ্রাহক প্রতিযোগিতা কমিশনে অভিযোগ করেনি। কিন্তু কমিশনের আইনে আছে কোনো ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান অভিযোগ দায়ের না করলেও কমিশন স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলা করতে পারবে। সে ক্ষমতাবলে কমিশন এ উদ্যোগ নিয়েছে।
জানা যায়, বিচারাধীন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান গ্রাহকদের কাছ থেকে ই-ভ্যালি ১ হাজার কোটি টাকা এবং ৮০৩ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে ধামাকা। কম মূল্যে মোটরসাইকেল দেওয়ার নাম করে ৬৫৮ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে আলেশা মার্ট। এছাড়া সিরাজগঞ্জ শপের বিরুদ্ধে ৪৭ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। আর কিউকম ডটকম নিয়েছে প্রায় ২৫০ কোটি টাকা।
সূত্র জানায়, প্রতারণার অভিযোগে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন নিজস্ব উদ্যোগে সাতটি ই-কমার্সের বিরুদ্ধে তদন্ত করছে। সেগুলো হচ্ছে-আনন্দবাজার, আলাদিন প্রদীপ, ফালগুনি ডটকম, ই-অরেঞ্জ, আদিয়ার্ন মাট, দালাল প্লাস ও টুয়েন্টিফোর টাকা ডটকম। এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রতারণাসংক্রান্ত অপরাধ পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধেও মামলা করা হবে।
প্রসঙ্গত, গ্রাহকের টাকা ফেরত না দেওয়ায় আলোচিত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির বিরুদ্ধে গত বছর সেপ্টেম্বরে দুটি মামলা করে দেশীয় পোশাকের ব্র্যান্ড রঙ বাংলাদেশ। গিফট ভাউচার বিক্রি বাবদ ইভ্যালির চেক প্রত্যাখ্যান হওয়ার অভিযোগে ইভ্যালির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রাসেলকে আসামি করে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে মামলা করা হয়। সিএমএম আদালতে ১৮৮১ সালের দি নেগোশিয়েবল ইনস্ট্রুমেন্ট অ্যাক্টের ১৩৮ ও ১৪০ ধারায় মামলাটি হয়েছে। আদালত ফৌজদারি কার্যবিধির ২০০ ধারায় জবানবন্দি গ্রহণ করে দুই আসামির বিরুদ্ধে সমন জারি করেন। এরপর তাদের গ্রেফতার করা হয়। এছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে গ্রাহকরা পাওনা ফেরত না পাওয়া এবং প্রতারণার দায়ে একাধিক মামলা করেছে ইভ্যালির বিরুদ্ধে। ৬ মাস কারাভোগের পর জামিন পান ইভ্যালির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন। তবে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং তার স্বামী মোহাম্মদ রাসেল এখনো কারাগারে আছেন। ইভ্যালির বিরুদ্ধে মামলার সংখ্যা প্রায় ৩০টি।